
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার জয়ন্তী নদীর খেয়াঘাটের নারী নৌকার মাঝি ধীপুর গ্রামের মৃত কালু ব্যাপারীর বড় মেয়ে মিলন নেছা (৫২) পেল সরকারি সেমি পাকা ঘর।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪ টার দিকে মিলন নেছার নিজ বাড়িতে ঘরটির কাজের উদ্বোধন করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান।
জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন, ভূমিহীন মানুষের ভিতরে ঘর ও জমি প্রদানের কার্যক্রম নিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে আজকে আমরা শরীয়তপুরের নারী খেয়া ঘাটের মাঝি মিলন নেছাকে একটি ঘর দেয়েছি। এর আগে তাকে নিয়ে মিডিয়াতে নিউজ দেখিছি। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় বিষয়টি দেখে, পরে আমাদের নির্দেশনা দেন। শরীয়তপুর জেলায় আমরা যারা বিসিএস ক্যাডার আছি সকলের উদ্যোগে, বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মিলন নেছাকে একটি ঘর উপহার দিতে আমরা এখানে এসেছি। ঘরের কার্যক্রম আজ শুরু করে দিয়ে গেলাম।
এ সময় গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক ঢালী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলমগীর হুসাইন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা পরিষদের সদস্য জাকির হোসেন দুলাল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল খায়ের শেখ, গোসাইরহাট পৌরসভা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলী আকবর প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিলর আলী আকবর বলেন, মিলন নেছা নদীতে নৌকা চালিয়ে মানুষ পারাপার করতো। তাকে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশ করার পর, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক স্যারের নজরে আসে।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি “নারী মাঝি মিলন নেছা” শিরোনামে অনেক পত্রিকাতে নিউজ প্রকাশিত হয়। নিউজটি প্রধানমন্ত্রী ও শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসানের নজরে আসে। তাই দ্রুত সরকারি ঘরটি পেল মিলন নেছা।
জানা যায়, দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত জয়ন্তী নদীতে নৌকা পারাপার করেন মিলন নেছা। ছোট-বড় সবাই তাকে খালা বলে ডাকেন। একজন নদী পার হলে পাঁচ টাকা করে পান তিনি। ভাসমান নৌকায় বসে রান্না করেন মিলন। কষ্টের জীবন হলেও মুখে যেন হাসি তার। জয়ন্তী নদীর খেয়াঘাটে তার বাবা কালু ব্যাপারী মাঝির কাজ করেতেন। মিলনের যখন ২২ বছর, তখন তার বাবা মারা যান। তারা তিন বোন, তিন ভাই। বাবার পথ অনুসরণ করে ওই বয়সেই সংসারের হাল ধরতে মাঝির কাজ শুরু করেন মিলন নেছা। প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা আয় করেন। তাছাড়া দুই পারের কিছু মানুষ বছরে যা ফসল পায় তার একটি অংশ দিয়ে সহযোগিতা করেন মিলনকে। তা দিয়ে কোনোভাবে জীবন আর জীবিকা চালিয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটছে মিলন নেছার। নৌকাতেই রান্না-খাওয়া, নৌকাতেই বসবাস তার। নৌকা পারাপার করে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছে। জীবনের শেষ এ সঞ্চয় দিয়ে ছয় শতক জমি কিনেছে। কিন্তু ঘর তুলতে পারেনি।
তার স্বামী রহম আলী সরদার ১৫ বছর আগে তাকে ও দুই ছেলেকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যায়। বড় ছেলে আব্দুল খালেক (২৬) বিয়ে করে আলাদা থাকে। আর নদীর পাড়ে ছাউনি নৌকায় ছোট ছেলে আব্দুল মালেককে (২২) নিয়ে থাকেন তিনি।
ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা মিলন নেছা বলেন, আগে নৌকায় মানুষ পারাপার করতাম, নৌকাতেই থাকতাম। সাংবাদিকরা আমার কষ্ট দেখে, নিউজ করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ঘর দিয়েছে। সন্তানদের নিয়ে ঘরে থাকবো। আমি খুবই খুশি।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | |||
৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ |
১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ |
১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ |
২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |