
অবশেষে নৌকা ছেড়ে ঘরে উঠছেন ডামুড্যা জয়ন্তী নদীতে নৌকায় থাকায় সেই গোলাপী বেগম। রোববার ২০জুন দুপুরে ইউএনও আলমগীর হুসাইন সেই জয়ন্তী নদীতে গিয়ে তাকে তার নতুন ঘরে চাবি ও জমির দলিল বুঝিয়ে দেন। গোলাপী বেগমের বাড়ি শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নে। তিনি ওই ইউনিয়নের মৃত মোঃ আশ্রাফ আলীর স্ত্রী। ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( অতিরিক্ত দায়িত্ব) আলমগীর হুসাইন জানান, ওনার (গোলাপীর) সম্পর্কে আগে কিছু জানতাম না, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রচার হওয়ার পর জেলা প্রশাসক স্যার ও আমাদের নজরে আসে। এরপর তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড ও নগদ কিছু অর্থ দিয়েছি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আজ জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে তাকে নতু ঘরের চাবি ও জমির দলিল বুঝিয়ে দেওয়া হলো। রঙের কাজ বাকি আছে, রঙের কাজ শেষ হলে দু’ এক দিনের ভিতরে ঘরে উঠতে পারবেন।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল ‘গোলাপী বেগমকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিউজ প্রকাশিত হয়। নিউজটি শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান ও সদ্য বিদায়ী ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে আসে। নজরে আসার পরে প্রশাসনের উদ্যোগে তিনি দ্রুত একটি বয়স্কভাতার কার্ড ও নগদ অর্থ পেয়েছিলেন এবং তাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো শিগগিরই তাকে একটি পাকা ঘর উপহার দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি হিসেবে তাকে পাকা ঘর ও জমির কাগজ পত্র ও চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’ এক দিনের মধ্যে তিনি উঠবেন নৌকা ছেড়ে সেই পাকা ঘরে।
জানা যায়, স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনায় না হওয়ায় ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে নৌকায় গোলাপী বেগমকে নিয়ে বসবাস করেন তার ছেলে নুরু মিয়া (৫৩)। গ্রামে একাধিক সালিশ-দরবার করে কোনও সমাধান হয়নি। নুরু মিয়া জীবিকা নির্বাহ করেন জয়ন্তী নদীতে মাছ ধরে। এতে যা রোজগার হয় তা দিয়েই মা-ছেলের চলে যায়। তবে একটু সচ্ছলতা আশার মায়ের জন্য বয়স্ক ভাতার কার্ড ও মাকে নিয়ে একটু থাকার জন্য কোথাও একটু ঠাই খুঁজতে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, গণ্যমান্যদের কাছে ঘুরেও কাজ হয়নি। তারা দুই জনই শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের ভোটার। নৌকাই তাদের নিজস্ব বাসস্থান।
অবশেষে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বয়স্ক ভাতার কার্ড আর নগদ টাকা আগেই পেয়েছেন এবং আজ পাকা ঘরের চাবি ও জায়গা পেয়ে খুশি গোলাপী বেগম। তিনি বলেন আমার কষ্ট দেখে সাংবাদিকরা আমাকে নিয়ে নিউজ করার পর স্যারেরা আমাকে বয়স্ক ভাতা কার্ড ও নগদ টাকা আগেই দিয়েছে আজ ঘরের চাবি ও জমির দলিল দেওয়া হয়েছে। নৌকা ছেড়ে নতুন ঘরে উঠবো এতে আমি অনেক খুশি। তিনি ঘর ও জমি পেয়ে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও সাংবাদিকদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন।
নুরু মিয়া বলেন, মায়ের বয়স্ক ভাতা, সরকারি সুযোগ সুবিধা আর থাকার একটি ঘরের জন্য চেয়ারম্যান, মেম্বার আর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে গেছি। কোনও সুযোগ-সুবিধা পাইনি। আপনাদের মাধ্যমে আমার মায়ের একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড হলো আজ সরকারি পাকা ঘর ও জায়গা পেয়েছি, এতো আমি অনেক খুশি। মাকে নিয়ে শেষ জীবনে নৌকা ছেড়ে ঘরে উঠবে এর চেয়ে বেশি খুশি আমার জন্য আর কি আছে।
জেলা প্রশাসক মো: পারভেজ হাসান বলেন , গোলাপীর জন্য তার নিজের পছন্দ মত ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তিনি দারুল আমান ইউনিয়নে ঘর চেয়েছিল সেখানেই দিয়েছি। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঘর দিচ্ছে সেই ঘর আজ তাকে বুঝিয়ে দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি, আজ সে দুই শতাংশ জমির ও একটি ঘরের মালিক হলো। তিনি তার ছেলে নিয়ে সে ঘরে দু’ এক দিনের ভিতরে উঠতে পারবেন। এ গুলো সম্ভব হয়েছে আপনাদের সংবাদের মাধ্যমে। তাই সংবাদ কর্মীকে ধন্যবাদ জানাই। এ ধরনের সংবাদ প্রচারের জন্য।