
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর গরু ও ছাগল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (২৭ মার্চ) উপজেলা প্রাঙ্গণে ১৫জন জেলের মাঝে গরু ও ২০ জনের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হয়। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার আয়োজনে উপকরণ বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাফী বিন কবির।
গোসাইরহাট মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ইলিশের প্রজনন, বেড়ে ওঠা ও উৎপাদন বাড়াতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত শরীয়তপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৫হাজারেরও বেশি। এই সময়ে প্রতিটি জেলে পরিবারকে প্রণোদনা হিসেবে চাল দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময়ও অভাবের কারণে নদীতে ইলিশ শিকারে নামেন তাঁরা। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় মৎস্য বিভাগ জেলেদের মাঝে বিনা মূল্যে গরুর বাছুর ও ছাগল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। এ উদ্যোগের আওতায় গোসাইটহাটের প্রথম পর্যায়ে ১৫ জেলেকে একটি করে গরুর বাছুর ও দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ জেলেকে দুইটি করে ছাগল দিয়েছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ।
অভিযোগ উঠেছে- গোসাইরহাটে জেলেদেরকে বিতরণ করা ওই গরু ও ছাগলের সরকারি মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পছন্দের ঠিকাদার বাচ্চু ঢালীর মাধ্যমে ক্রয় করে বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি গরুর জন্য ২৮ হাজার টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে গরু গুলো ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া দুইটি ছাগলের ওজন ১৪কেজি হওয়ার নিয়ম থাকলেও সরকারি নির্দেশনা না মানার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
উপকারভোগী রুহুল আমিন ঢালী ও নুরু কাজী বলেন, আমরা আজ সরকারের দেওয়া বকনা গরু পেয়েছি। উপজেলাতে আজ গরুটি নিতে এসে চুক্তিপত্রের জন্য মৎস্য অফিসারকে ১হাজার টাকা করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী যেখানে বিনামূল্যে উপহার দিচ্ছে সেখানে টাকা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপকারভোগীরা।
সামন্তষার ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মজেদা বেগম, সরকারের দেওয়া উপহারের জন্য কেন টাকা দিতে হবে। তারপরও আমার ওয়ার্ডের জেলেরা ১হাজার করে টাকা দিছে। যে সব ছাগল বিতরণ করা হয়েছে তার ওজন ১৪কেজি হবে না। এখানেও অনিয়ম করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি জানান, কয়েকদিন আগেও জেলেদের মাঝে গরু ও ছাগল বিতরণ করা হয়। সেখানেও অনিয়ম করা হয়েছে। কুচাইপট্টি ইউনিয়নের পাঁচ জেলেকে ছাগল দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে নিতে নিতে ওই ছাগল গুলো মারা যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবারও ওই ৫ জনকে ছাগল কিনে দিয়েছেন।
এমন অনিয়মের বিষয়ে জানতে গোসাইরহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক এর কার্যালয়ে গেলেও সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে অফিস না করে বাহিরে চলে যান তিনি। তবে জেলা মৎস্য অফিসার প্রনব কুমার কর্মকার বলেন, সরকার প্রতিটি গরু জন্য ২৮হাজার টাকা ও দুইটি ছাগলের ওজন ১৪কেজি নির্ধারন করে দিয়েছে। গোসাইরহাটে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে সেটা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।