মঙ্গলবার, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ১১ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১১ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
মঙ্গলবার, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

ময়মনসিংহের ফরিদুল শরীয়তপুরে ইমামতি করতে এসে নিখোঁজ !

ময়মনসিংহের ফরিদুল শরীয়তপুরে ইমামতি করতে এসে নিখোঁজ !

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ফরিদুল ইসলাম (৪৫) এক মসজিদের ঈমাম ১৮ দিন যাবৎ নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ ৬ বছর যাবৎ ঈমামতির চাকুরি করতেন। তার দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার মৃত এরশাদআলীর পূত্র।

নিখোজ ঈমামের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন স্বামীকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে অপহরণ করে খুন করে গুম করার অভিযোগে জেলা পুলিশ সুপারের নিকট সঠিক ভাবে তদন্ত করে দ্রুত বিচার চেয়ে একটি আবেদন করেন।
ঈমামের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, আমাদের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার পূর্ব বিরাশী গ্রামে। আমার স্বামী পেশায় মসজিদের ঈমাম। আমার একটি ১০ বছর বয়সী মেয়ে ও ৬ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ছেলে মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। আমরা খুবই গরিব। আমাদের সংসার স্বামীর ঈমামতির উপরেই নির্ভরশীল। আমার স্বামী কখনও কোন রাজনৈতিক দল বা অন্য কোন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না। আমার স্বামীর মুখে শুনেছি। মসজিদ নিয়ে ঐ গ্রামে দুই দল হইয়া দলা-দলিতে জড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে আমার স্বামী মাঝে মাঝে আমাকে ফোনে জানাত। আমার স্বামীকে ওখানে যাওয়া নিষেধ করলে। সে বলতেন ৩০ শতাংশ জমি চষাবাদের জন্য টাকার বিনিময় কটে রেখেছি। তাতে পাট আবাদ করেছি। পাট উঠলে আমি ওখান থেকে চলে আসব। পাটের আবাদ শেষ না হতেই গত রমজানে রোজার ঈদে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসে। ছুটিতে আসার সময় এক পক্ষ বলেছে, আপনি আর আসবেন না। অন্য পক্ষ বলেছেন আপনি আসবেন। আমার স্বামী গত ২০ জুন বৃঃহস্পতিবার ভোর বেলা বাড়ি থেকে শরীয়তপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মোড়লকান্দি গ্রামে পৌঁছে তিনি এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করেন। ও বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বার্তা বলেন। আমার স্বামী যে মসজিদে ইমামতি করতেন তার পাশ্ববর্তী গ্রামে থাকে আমার দেবর ফরহাদ তার পাশে থাকে আমার স্বামীর বোন জামাই আনিসুর রহমান ও গরম বাজার মসজিদের ইমাম আমার ভাসুরের ছেলে। এদের সঙ্গে বা আমার সঙ্গে কোন কথা বা পরামর্শ না করেই জাজিরা,থানায় সাধারণ ডায়রী করে। ডায়রী করে তারা আমার স্বামীর নামে বিভিন্ন ধরনের খারাপ অপবাদ দেয়া শুরু করে। আমার সন্দেহ ঐ গ্রামের কতিপয় লোক আমার স্বামীকে হাইজ্যাক করে নিয়ে খুন করে লাশ গুম করে ফেলেছে।
হঠাৎ রাত ১০ টা ২২ মিনিটের সময় তার মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরের দিন ২১ জুন জুম্মার নামাজের পর মোড়লকান্দি গ্রামের হোসেন মোড়ল (৪৮) আমাকে ফোন করে বলে ইমাম সাহেব কে পাওয়া যাচ্ছে না। সে কোথায় গেল, কি ব্যাপার। তখন আমি বলি আপনারাই তো ভালো জানেন, আমিতো বহুদূরে।
তিনি ২১ জুন মোড়লকান্দি থেকে নিখোঁজ হন। মুসল্লিরা তার মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে বন্ধ পায়। পরে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়েজাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন।
সোমবার (৮জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তার সাথে গ্রামের কারও সাথে কোন শত্রুতা নাই। একদিন হঠাৎ করে এসেছিল। আবার হঠাৎ করে চলে গেছে।
মসজিদের পাশে থাকা মো.ইউনুছ বলেন, ঈমাম সাহেব ভালো লোক ছিলো। এতো দিন মসজিদে নামাজ পড়িয়েছে। সে কোথায় গেছে কেউ জানেনা।
আকবর আলী মোড়ল জানান, আমাদের মসজিদে ইমাম ফরিদ হোসেন ৬ বছর যাবৎ ইমামতি করে। সে এই মসজিদের বারান্দায় থাকতো। সে ২০ জুন এশার নামাজ পড়িয়ে আমার চাচাত ভাই ইকরাম আলী মোড়লের ঘরে রাতের খাবার খায়। এবং খাওয়া শেষে ঘুমানোর জন্য মসজিদে যায়। পরের দিন ২১ জুন গ্রামের মুসল্লিরা ফযর নামাজ পরার জন্য মসজিদে গিয়ে দেখে ইমাম সাহপব নেই। ইমাম থাকার রুমের দরজা বাহির থেকে শিকল দেয়া। অনেক খোঁজার পর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা।
একই গ্রামে আরেক মসজিদের পাশে থাকা ফারুক মোড়ল জানান, সব শেষে শুক্রবার আমাদের এই জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ানোর কথা ছিল, কিন্তু সে আসে নাই। তারপর সবার টনকনড়া দেয়। কি হলো হুজুরের। এছাড়া আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা ঐ গ্রামে মসজিদের আশে পাশের পাট ক্ষেত সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ লাগিয়েছি। সবাইকে বলে এসেছি এবং আমার নাম্বার দিয়েছি। কেউ কোন তথ্য জানলে আমাকে ফোন করে জানাতে। আমি তথ্যদাতার নাম গোপন রাখবো। সেই সাথে গ্রামের সবাই যাতে ইমামকে খোঁজ করে সন্ধান দেয়। তাছাড়াও আমরা আমাদের সিস্টেমে আগাবো। ঘটনার তদন্ত চলছে। ইনশাল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি ইমামের খোঁজ পাবো বলে আশাকরি।


error: Content is protected !!