
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সেনেরচর দক্ষিণ আফাজ উদ্দিন মুন্সিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসি সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসমার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে সেনেরচর দক্ষিণ আফাজ উদ্দিন মুন্সিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। কিন্তু কাগজে-কলমে বিদ্যালয় স্থাপনের সন ২০১৩ দেখানো হয়েছে যা, নিয়ম-নীতি পরিপন্থী। স্কুল প্রতিষ্ঠায় জমি দান করেন স্থানীয় মোঃ চুন্নু হাওলাদারের পিতা হাজী জালাল উদ্দিন হাওলাদার। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে স্কুলটিতে কবিরাজ কান্দির শাহিনা আক্তার প্রধান শিক্ষক পদে ও আফাজউদ্দিন মুন্সিকান্দির হেনাসহ ৪ জন শিক্ষক সম্পূর্ন বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছিল। ২০১৩ সালে স্কুলটি জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়করনের সময় স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক শাহিনা আক্তার ও সহকারি শিক্ষক হেনাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাদ দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে আসমা ও সহকারি শিক্ষক পদে জাকারিয়াকে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এ প্রসঙ্গে বাদ পড়া প্রধান শিক্ষক শাহিনা আক্তার ও সহকারি শিক্ষক হেনা জানান, স্কুল এসএমসি কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার তাদের নিকট জনপ্রতি ২ লাখ টাকা দাবি করলে টাকা দিতে তারা অপারগতা প্রকাশ করলে তাদেরকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাদ দেওয়া হয়। এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসমা ও সহকারি শিক্ষক জাকারিয়াকে সভাপতি অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে রাতের আঁধারে কাজগপত্র জাল-জালিয়াতি করে নিয়োগ প্রদান করেন।
এদিকে বিদ্যালয়ের জমি দাতার পক্ষে মোঃ চুন্নু হাওলাদার বলেন,আমি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা ও জমি দানকারির ছেলে। আমরা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করেছি কিন্তু আমাকে না জানিয়ে স্কুল ভবন নির্মান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্কুল ভবনটি আমার বাড়ীর সৌন্দর্য নষ্ট করে নির্মাণের পায়তারা করতেছে বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসমা। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয় এসএমসি কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার এসএমসি এরিয়ার বাইরের লোক। তিনি অবৈধভাবে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে অদ্যাবদি সভাপতি পদ আঁকড়ে আছেন এ বিদ্যালয়ের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি জাজিরা সদরের বাসিন্দা। কোনদিনই তিনি বিদ্যালয়ের ধারে কাছে আসেন না। জাজিরা বসে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে বিদ্যালয় উন্নয়নের সকল টাকা পয়সা লুটেপুটে খাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের এসএমসির কমিটির সহ-সভাপতি পদে কাগজে-কলমে আমার স্ত্রীর নাম রাখা হলেও কোন মিটিংয়ে তাকে ডাকা হয়না এবং তার সই-স্বাক্ষর নেওয়া হয়না। বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন কখন হয়, কিভাবে হয়, কমিটির মেয়াদ কখন শেষ হয় তা বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কাউকে জানানো হয় না। এ কাজটি সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বসে সংগোপনে করে থাকেন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসমার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার মতো যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও স্বক্ষমতা নেই। সভাপতির একান্ত লোক হিসেবে তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাকে এলাকাবাসী জেএমবি সদস্য হিসাবে দীর্ঘ দিন যাবৎ সন্দেহ করে আসছেন। তিনি সবসময় কালো নেকাব দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন। তাকে দেখলে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা ভয় পায়। এ কারনে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তার মাদরাসা পড়–য়া ২ ছেলের নামে উপবৃত্তি উত্তোলন করে আসেছেন। বিষয়টি তার মোবাইল নম্বর পরীক্ষা করলেই জানা যাবে। বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে অবৈধভাবে র্দীঘদিন যাবৎ আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার জেকে বসে আছেন। তিনি এলাকার লোক না হয়ে অবৈধভাবে সভাপতি পদটি দখল করেছেন। তার এ অবৈধ কাজে সহায়তা দিয়ে আসছেন অযোগ্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসমা। তাছাড়া বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান ও পরীক্ষার ফলাফল খুব খারাপ। গত বছরের সমাপনী পরীক্ষায় মাত্র ২ জন ছাত্র-ছাত্রী কৃতকার্য হয়েছেন। বিদ্যালয়ের মূলভবন নির্মানের প্রক্রিয়ায় সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নানা ষড়যন্ত্র করছে। বিদ্যালয়ের মূলভবন নির্মানের জায়গা নির্বাচনে তারা বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের মতামত উপেক্ষা করে চলছেন। এভাবে চলতে থাকলে এলাকাবাসী কর্মসূচী ঘোষণা করে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। তারা বিদ্যালয়ের অবৈধ সভাপতি ও অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারন দাবি করেছেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসমাকে তার কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি। মুঠো ফোনে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততা দেখান।
বিদ্যালয় সভাপতিকে খোঁজ করে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার মুঠো ফোন নম্বরও কেউ দিতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবুল কালাম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি এবং আমার নিকট লিখিত অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।