মঙ্গলবার, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ১১ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১১ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
মঙ্গলবার, ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

শরীয়তপুর পদ্মার ভাঙন শুরু, তীর রক্ষা বাঁধের ২৮০ মিটার ধ্বস

শরীয়তপুর পদ্মার ভাঙন শুরু, তীর রক্ষা বাঁধের ২৮০ মিটার ধ্বস

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীর ভাঙন রোধের ”নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা” বাধেঁর ২৮০ মিটার অংশ ধসে পরেছে। বাঁধ ধসে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর কেদারপুর গ্রামের ১২টি বসত বাড়ি নদীতে বিলিন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পরে যাওয়ায় আরো ৫০টি বসত বাড়ির ঘর সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ভাঙনের খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম ও পানি উন্নয় বোর্ডের উধ্বতন কর্মকর্তারা। ভাঙন রোধের জন্য ওই অংশে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো শুরু করেছে পাউবোর শ্রমিকরা। যাদের বাড়ি নদীতে বিলিন হয়েছে তাদের ১০ হাজার টাকা ও যাদের ঘর সরিয়ে নেয়া হচ্ছে তাদেও মধ্যে ২৪জন ৫ হাজার করে টাকা দিয়েছেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রােত বেড়েছে। স্রােতের কারনে গত ১৯ সেপ্টেম্বর নড়িয়া রক্ষা বাধেঁর ৪০ মিটার অংশে ধস দেখা দেখা দেয়। ওই ধস ঠেকাতে পাউবোর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাধুর বাজারের ওই স্থানের পাশে হঠৎ ধস শুরু হয়। মুহুর্তের মধ্যে তীর উপচে নদীর পানি উঠে যায়। আর বালু ভর্তি জিও ব্যাগ গুলো নদীতে তলিয়ে যেতে থাকে। আস্তে আস্তে তীরের পাশের মাটি ধসে যেতে থাকে।
কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান জানান,তীর রক্ষা বাধে ধসের খবরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছরিয়ে পরে। খবর ছরিয়ে পরলে সাধুর বাজার এলাকায় শতশত মানুষ জরো হয়। আতঙ্কে তীরের মানুষ বাড়ি ঘর ফেলে নিরাপদ স্থানে সরে যায়। ১২টি বসত ঘর ও একটি মসজিদ বিলিন হয়ে যায়।
আছমা বেগম বলেন আমি কেবল নদীর থেকে ওজু করে মাগবিরের নামাজের সময় পাই নাই। শুধু ছেলে মেয়েদের
নিয়েবেড় হয়ে এসেছি । পিছনে তাকিয়ে দেখি আমাদের বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।এ ভাবে কতটু পর
পর মাটি ডেবে যায় মুর্হুতের মধ্যে ১২/১৩ টি বাড়ি নদী গর্ভে চলে গেল। আমাদের এখন মাথাঘোজার ঠাই নাই। নদীর পরিস্থিতি ভাল না যে ভাবে ভাঙ্গছে পানি উন্নয় বোর্ড সঠিক ভাবে যদি কাজ করে।কারন আমাদের ধারনা এখান দিয়ে নদীর গভীর বেশীছিল কিন্ত জিও বেগ ডাবল করে দিলে এই সমস্যা হইতো না অন্যথায় নদীর উত্তর পার দিয়ে নদী ড্রেজিং করে স্রােত সড়িয়ে দেওয়ার কথাছিল সেখান দিয়ে হয়তোবা স্রােত সরানো হয় নাই।যে কোন জায়গায় কাজের ভুল আছে তাহা না হলে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না। নুরম্মহদ বেপারী বলেন আমার চাচাতো ভাই তার কানে শব্দ পায় যে বাড়ি ঘর সব নদীর বাধঁ ভেঙ্গে তলিয়ে যাইতেছে সে আতংকে মঙ্গল বেপারী (৭০) মারা যায়।আমাদে সব সময় আতংকে থাকতে হয়। আল্লাহ যদি আমাদের রক্ষা করেন।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়,গত বছর নড়িয়ার আট কিলোমিটার এলাকা জুরে ব্যাপক ভাঙন ছিল। ভাঙনে ওই এলাকার সাড়ে ছয় হাজার পরিবার গৃহহীন হয়। নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অসংখ্য স্থাপনা বিলিন হয়ে যায়। ভাঙন ঠেকাতে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় এক হাজার ৯৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্পর অনুমোদন করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নৌবাহীনির প্রতিষ্ঠান খুলনা শীপইয়ার্ড লিমিটেডকে ওই কাজের কার্যদেশ প্রদান করেন। যার মধ্যে ৫৫২ কোটি টাকা ব্যায়ে নড়িয়ার সুরেশ^র হতে জাজিরার কায়ুম খার বাজার পর্যন্ত আট দশমিক নয় কিলোমিটার অংশে নদীর তীর রক্ষার কাজ। বাকি টাকা দিয়ে নদীর চরখনন করা হবে। গত বছর ১২ ডিসেম্বর ওই প্রকল্পের নদীর তীর রক্ষার কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে তিন বছরে। প্রথম বছরে ৪০ লাখ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। দ্বিতীয় বছর ও তৃতীয় বছরে ৩২ লাখ ৫০ হাজার সিসি ব্লক ফেলা ও প্রকল্পের অন্যান্য কাজ করার কথা। ইতোমধ্যে পাউবোর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপ নড়িয়া ও জাজিরার সাত কিলোমিটার এলাকায় ৩২ লাখ ৭০ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছে। আর ২৫ হাজার সিসি ব্লক ফেলেছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর হতে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাঁচ দিনে নড়িয়ার সুরেশ^র পয়েন্টে ৬৮ সেন্টি মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে স্রােত বেরেছে। বৃহস্পতিবার নড়িয়ার সাধুর বাজার এলাকায় নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের ৪০ মিটার অংশের মধ্যে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ধ্বসে যেতে থাকে। তখন পাউবো তাদের ইকো সাউন্ডার নামে একটি যন্ত্র ব্যবহার করে ওই স্থানে। ওই যন্ত্রেও সাহায্যে নদীর তলদেশ থেকে বস্তা সরে যাওয়ার আলামত পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে ওই স্থানের ধ্বস ঠেকাতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো শুরু করে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ১২ হাজার বালুর জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছে।
শরীয়তপুর পউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও ওই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন,নদীতে পানি ও স্্েরাত বারার কারনে ৪০ মিটার জায়গায় বালুর জিও ব্যাগ নীচের দিকে দেবে যাচ্ছিল। তখন ওই স্থানে সার্ভে করা হয়। সাথে সাথে জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু করি। চার দিনের মধ্যেই স্থানটি ঝুকি মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সাধুর বাজারের পাশে হঠাৎ কেন ধস শুরু হয়েছে তা বুঝতে পারছি না। বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন,নড়িয়া প্রকল্পটি অনেক বড়। ওই প্রকল্পর কাজ করার কারনে এ বছর নড়িয়ার ভাঙন ঠেকেছে। নদীতে স্রােত ও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি জায়গায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাউবো কাজ করছে। আশা করছি দুই-এক দিনের মধ্যেই ভাঙন থেমে যাবে।


error: Content is protected !!