বৃহস্পতিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
বৃহস্পতিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

নড়িয়ায় যুবলীগ নেতার ভয়ে গ্রাম ছাড়া ১১টি পরিবার

নড়িয়ায় যুবলীগ নেতার ভয়ে গ্রাম ছাড়া ১১টি পরিবার
নড়িয়ায় যুবলীগ নেতার ভয়ে গ্রাম ছাড়া ১১টি পরিবার

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নে যুবলীগ এক নেতার ভয়ে ১১টি পরিবার বসত-ভিটা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামে ছয় মাস যাবত ওই পরিবারগুলো নিজ বসত-ভিটা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাছাড়া ১৫টি পরিবারে পুরুষ শূন্য হয়ে পরেছে। পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়া ব্যাহত হচ্ছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে শরীয়তপুর পুলিশ সুপার বারবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি পরিবার।
অভিযুক্ত মাসুম ছৈয়াল (৩০) উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামের মৃত ছিটু ছৈয়ালের ছেলে। তিনি নশাসন ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে নড়িয়া থানা ও পালং মডেল থানায় ১২টি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগি পরিবার সূত্র জানায়, মাসুম ছৈয়াল ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ফসলি জমিতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নিজ বাড়িতে বালি উত্তোলন করছিলেন। স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসলে অবৈধ ড্রেজার মেশিনটি পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেন প্রশাসন। স্থানীয় জলিল আকন প্রশাসনকে জানিয়েছে অপবাদ দিয়ে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে মাসুম ও তার বাহিনী। বর্তমানে জলিল আকন ঢাকা পঙ্গু হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। সেই ঘটনায় জলিল আকন ভাই এমদাদ আকন বাদি হয়ে মাসুমকে প্রধান আসামী করে দশ জনের বিরুদ্ধে নড়িয়া একটি মামলা করেন। সেই মামলায় জামিনে এসে এলাকায় তান্ডব শুরু করে মাসুম ও তার বাহিনী। মামলা তুলতে বাদি পক্ষের লোকজনদের হামলা, লুটপাট ও মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করেন। মাসুম বাহিনীর ভয়ে পাড়াগাঁও গ্রামের ধলু আকন, এনায়েত আকন, জলিল আকন, খলিল আকন, কাদির আকন, আনসার আকন, আলম আকন, আজিদ আকন, মাসুম আকন, ভুট্টু আকন ও নরুল হক আকন তাদের বসত-ভিটা ছেড়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাছাড়া ১৫টি পরিবারে পুরুষ শূন্য হয়ে পরেছে। পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়া ব্যাহত হচ্ছে। আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী।
ঝুমা আক্তার বলেন, আমি ডোমসার জগৎ চন্দ্র ইনস্টিটিউশন এন্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে পড়ি। মাসুমদের ভয়ে আমার বাবা ও ভাইরা বাড়িতে আসতে পারে না। আমি ভয়ে স্কুলে যেতে পারি না। আমার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার জোগার হয়েছে।
আহত ধলু আকন বলেন, মাসুম মাদক খায় ও বিক্রি করে। এই গ্রামে মাদক বিক্রি করা যাবে না এমন প্রতিবাদ করলে আমাকে রাতে একা পেয়ে ৮/১০ জন মিলে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। শরীরের সেই আঘাতের কথা এখনো মনে পরে। এ ঘটনায় মামলা করি। কিন্তু মামলা করা সত্বেও বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতে পারিনা, পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তাছাড়া এলাকার লিটন হাওলাদার, জসিম দেওয়ান ও জলিল আকনকে কুপিয়েছে মাসুম ও তার বাহিনী। সন্ত্রাসী মাসুমের সঠিক বিচার হলে এলাকাবাসী শান্তি পাবে।
নশাসন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন সরদার বলেন, ড্রেজার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সন্ত্রাস মাসুম ও তার বাহিনীর ভয়ে পাড়াগাঁও গ্রামের অনেক পরিবারের মানুষ ঘর ছাড়া। এ বিষয়ে আমি আইনশৃঙ্খলা মিটিং ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেছি। তারা কিভাবে নিজ বাড়ি ফিরতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্তু ছয় মাস পাড় হয়ে গেলেও এখনো এর কোন সমাধান হয়নি।
অভিযুক্ত নশাসন ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম ছৈয়াল বলেন, আমরা গ্রাম্য রাজনীতি করি। আমাদের নেতা নশাসন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদার। আর বিপক্ষ দলের নেতা নশাসন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন সরদার। তাদের সাথে জমি সংক্রান্ত ও রাজনীতি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সামসুদ্দিন সরদাররা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তারা বিভিন্ন মামলার আসামী তাই নিজ ভিটা ছেড়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, যারা জামিনে আছেন তাদের তো আমরা গ্রেফতার করতে পারি না। তবে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে মাসুমদের বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নড়িয়া থানার ওসিকে বলে দিচ্ছি।


error: Content is protected !!