
শরীয়তপুরে অনলাইন নিবন্ধনের নামে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নে সরকারের দেওয়া ১২ শতাধিক বিধবা ও বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তদের অনলাইনে নিবন্ধনের নামে জনপ্রতি দেড়শত টাকা করে হাতিয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাড়ী। সর্বমোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর জানা গেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের থেকে এই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যদেরও তিনি বিষয়টি অবহিত করেননি। পরে ইউপি সদস্যগণ পরিষদ মিটিংয়ে উত্থাপন করলে ‘অনলাইনের খরচ’ বাবদ ওই টাকা নিয়েছেন বলে মেম্বারদের জানান চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন রাড়ী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে যে নাগরিক বিধবা বা বয়স্ক ভাতার আওতায় রয়েছেন, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অনলাইন নিবন্ধন শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে থাকা সরকারি ডিজিটাল সেন্টার থেকে বিনামূল্যে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে। এ ইউনিয়নেও ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসি জানান, ‘গত ঈদুল আযহার পরে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে বয়স্ক ও বিধবা ভাতাপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে মাইকিং করা হয়। তাদের অনলাইন নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে পরিষদে চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এতে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে অনেক অসহায় লোকজন পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাড়ী সরকারী খরচ ও অনলাইন নিবন্ধন ফি বাবদ ১৫০ টাকা করে দাবি করেন। বাধ্য হয়ে সেই টাকা পরিশোধ করেন সবাই। গত কয়েকদিনে এভাবে বিধবা ও বয়স্ক ভাতার সুবিধাপ্রাপ্ত ১২শত ৪০ জনের কাছ থেকে চেয়ারম্যান ১৫০ টাকা করে আদায় করেন।’ যদিও এই নিবন্ধন বিনামূল্যে করার কথা।
তারা আরও জানান, সরকারি ফি’র কথা বলে চেয়ারম্যান সাহেব ওই টাকা নিয়েছেন। কিন্তু কাউকে কোনো রশিদ দেননি নিজাম উদ্দীন। নিজাম উদ্দীন রাড়ী পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের খুবই আস্থাভাজন হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। কেননা থানা পুলিশ সবই তাদের কথায় চলে।
চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন রাড়ী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল কেন্দ্রে যারা কাজ করছে তাদের নির্ধারিত বেতন নেই। বিধবা ও বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তদের অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য যারা কাজ করছে তারাই টাকা নিয়েছে। বিষয়টি আমার কাছে আসলে পরবর্তীতে টাকা নিতে নিষেধ করা হয়েছে।’
এদিকে ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য লোকমান হোসেন ঢালী বলেন, ‘সবার থেকে ১৫০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে না। তবে ৫০ টাকা করে নিচ্ছে। শুধু এই ইউনিয়নে নয় পাশের ইউনিয়নেও টাকা নিয়ে কাজ করছে।’
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নাঈম বলেন, ‘উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার থেকে খরচের জন্য টাকা নিতে বলা হয়েছে যার জন্য নিয়েছি। প্রথমে ১৫০ টাকা নিলেও এখন ৫০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।’ সমাজ সেবা অফিস কর্মকর্তার নাম জানতে চাইলে নাঈম তার নাম বলেননি।
নড়িয়া উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে টাকা নিতে বলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মোহাম্মদ মমিনুর রহমান অস্বিকার করে বলেন, আমরা টাকা নিতে বলবো কোন? প্রশ্নই আসে না! অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য কোনো টাকা লাগে না। তবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের কোন বেতন নেই যার জন্য জনপ্রতি ২০/৩০ টাকা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর চামটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সবার টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। চেয়ারম্যান আমাকে জানালেন তিনি টাকা ফেরতও দিয়েছেন।
নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে থাকা সরকারি ডিজিটাল সেন্টার থেকে বিনামূল্যে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে। টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। অভিযোগ সত্য হলে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’