
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গাজী মো. জাকির হোসেন (৫৩) এক যুবককে গুলি করে হত্যায় জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।
এ ঘটনায় ১২ সেপ্টেম্বর নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান খোকন মোল্যা বলেন, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যায় জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছে। তাই গাজী জাকিরকে উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আর স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ আগস্ট নড়িয়ার আন্ধারমানিক এলাকা থেকে আলমগীর মীরবহর (৩৬) নামের এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডে ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মো. জাকির হোসেন জড়িত থাকার তথ্য পায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি পুলিশ)। তাকে ৯ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
এরপর গাজী জাকির ১০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেজবা উদ্দিন খানের আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য জয়নাল মাতুবরকেও (৫০) যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আটক করা হয়। জয়নালও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।
এছাড়াও ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাজ্জাদ সরদার (২৭), শহীদুল মীরবহরকে (৪৭)।
পুলিশ আরও জানায়, রাজনগরের মালতকান্দি গ্রামের মৃত দলিল উদ্দিন মীরবহরের ছেলে আলমগীর মীরবহর কৃষি কাজ করতেন। গত ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় মহিষখোলা বাজারে যান। রাত ৯টার দিকে আলমগীরের সঙ্গে তার বড় ভাই জাহাঙ্গীরের দেখা হয়।
এ সময় জাহাঙ্গীর তাকে বাড়ি যেতে বললে পরে আসতেছি বলে জানান। এর কিছুক্ষণ পরে তার চাচাত মামা দেলোয়ার হোসেন মীরবহর তাকে জাজিরা উপজেলার মৌলভীকান্দি এলাকায় নিয়ে যান।
সেখানে অবস্থান করছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন। তাকে জানানো হয় গাজী জাকিরের প্রতিপক্ষ দাদন মীর মালত ও সাবেক চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান মীর মালতের সমর্থকরা মারামারি করবে তাতে অংশ নিতে হবে।
৩৫/৪০ জন লোকের সঙ্গে রাত দুইটার দিকে আলমগীরকে নড়িয়ার জামতলা এলাকায় নেয়া হয়। সেখানে তাকে একটি দেশি অস্ত্র টেটা দেওয়া হয়। ওই টেটা হাতে করে আলমগীর অন্যদের সাথে হেঁটে আন্ধারমানিক বাজার গেলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
জেলা ডিবি পুলিশের ওসি সাইফুল আলম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান গাজী জাকির হোসেন দুটি হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলার থেকে রেহাই পেতে, আগামী ইউপি নির্বাচনে নিজের প্রভাব ধরে রাখতে ও আধিপত্য বিস্তার করার জন্য প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন গাজী জাকির।
প্রতিপক্ষের সাথে মারামারি করতে যাওয়ার একটি নাটক করে আলমগীর মীরবহরকে ২৮ আগস্ট রাতে আন্ধারমানিক বাজারে নেয়া হয়। সেখানে ককটেল বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে জাকিরের ভাতিজা সম্রাট গাজী ও জনি গাজী। পরে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমগীরকে। গুলি করার পর সঙ্গে থাকা অন্য ব্যক্তিরা বিভিন্ন দিকে পালায়।
এরপর তাদের সমর্থক এক ভ্যান চালক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে যায়। পথিমধ্যে তার মৃত্যু হলে রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে তার মরদেহ ফেলে সকলে পালায়।
তিনি আরও বলেন, আটক সাজ্জাদ সরদার, শহীদুল মীরবহরের নামে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। যা আগামী ১৪ আগস্ট রিমান্ড শুনানি তারিখ ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়া এই হত্যার ঘটনায় যারা জড়িত আছেন তাদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
মৃত আলমগীরের ভাই জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে ৩০ আগস্ট নড়িয়া থানায় ৫৪ ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার সকল আসামি আলীউজ্জামান মীর মালত ও দাদন মীর মালতের সমর্থক।
মৃত আলমগীরের ভাই জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা নিরীহ মানুষ। চেয়ারম্যান গাজী জাকির সমর্থক। বুঝতে পারিনি এমন একটি গভীর ষড়যন্ত্রের বলি হতে হবে আমার ভাইকে। হত্যা করার পর তারাই (জাকির গাজী) মামলায় বিভিন্ন মানুষের নাম দিয়েছে, তার সমর্থকরা সাক্ষী হয়েছেন। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।