৭০ বছর বয়সী ভিক্ষুক আব্দুল হক সরদার। তিনি নড়িয়া উপজেলার কানারগাঁও এলাকার বাসিন্দা। আজ থেকে ৫২ বছর পূর্বে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে যথাযত চিকিৎসার অভাবে অন্ধ হয়ে যায়। পিতার রেখে যাওয়া সম্পদ বিক্রি করে স্ত্রী সন্তানদের ভরণপোষন করাতে গিয়ে এক সময় ভিটেমাটি হারাতে বসেছিলেন এই ভিক্ষুক। প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্দবদের পরামর্শে ১৫ বছর পূর্বে ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করে বসত বাড়ি রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে সে। এখন ছেলেদের রোজগার ও নিজের ভিক্ষাবৃত্তির টাকায় ভালই আছে স্বপরিবারে। পাশাপাশি সরকারি ভাতাও পায় সে।
এক প্রশ্নের জবাবে এই ভিক্ষুক বলেন, শিশু বয়স থেকে তিনি সুস্থ সবল একজন মানুষ ছিলেন। বয়স যখন ১৭-১৮ বছর তখন মহামারি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে চক্ষু হারায় সে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি তখন ছিলনা বলেই বিনা চিকিৎসায় তাকে অন্ধত্ব বরণ করতে হয়েছে। সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করেও কোন সুফল মিলেনি তার।
অন্ধত্ব বরণ করার পরে তিনি বিয়ে করেন। বর্তমানে তিনি ৪ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। বড় দুই ছেলেকে বিয়ে দিয়ে ভিন্ন করে দিয়েছেন। মেয়েদেরও ভালো জায়গায় বিয়ে হয়েছে। তারাও ভালই আছে। এখন ছোট দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। ছেলেরা আয় রোজগার করে তবুও সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে পারছেনা তিনি।
প্রতিদিন ভোরে অটোরিক্সা যোগে ১৫ কিলোমিটার পথ অতিবাহিত করে শরীয়তপুর শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় আসেন তিনি। বসেন ডাকবাংলো এলাকার ছোট ব্রিজের ওপর দিয়ে যাওয়া পানির পাইপে। অবিরাম বলতে থাকেন ‘আমি অন্ধ, আমাকে সাহায্য করুন”। অনেকে ৫-১০ টাকা করে দিতে থাকে। এমনি ভাবে নিয়মিত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার রোজগার হয়। বিশেষ কোন ব্যক্তি বড় অংকের টাকা দিলে রোজগার বেড়ে যায়।
অটোরিক্সা চালকরাও তাকে সহায়তা করে। কানারগাঁও থেকে শরীয়তপুরে আসতে ৪০ টাকা ভাড়া লাগে। সেই ক্ষেত্রে অটোচালকরা তার কাছ থেকে ৩০ টাকা নেয়। তিনি প্রতিবন্ধি ভাতা পায়।