Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

নড়িয়া নশাসন বাজারে ব্যবসায়ীদের মাঝে ভিটি বরাদ্দে অনিয়ম

নড়িয়া নশাসন বাজারে ব্যবসায়ীদের মাঝে ভিটি বরাদ্দে অনিয়ম

নড়িয়া উপজেলার নশাসন বাজারের ব্যবসায়ীদের মাঝে সরকারি ভাবে ভিটি বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের সাথে নশাসন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দত্ত ও বাজার কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা মাঝি জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। বাজারে ভিটির জন্য আবেদন করতে শতগুন অতিরিক্ত টাকা অগ্রিম গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও মুখ খুললে ভিটি হারানোর আশঙ্কা কাজ করছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।
আরও অভিযোগ উঠেছে নশাসন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দত্ত স্থানীয় একটি শক্তিশালি মহলের সহায়তায় ব্যক্তি মালিকানা জমি খাস করেছে। সেই জমিতে ১৯৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (ভিটি) নকশা করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া করেছে। সরকারি মূল্যের শতগুন অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ওই ভিটি বরাদ্দ পেতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আবেদন আহবান করেছে। অতিরিক্ত টাকা প্রদানে রাজী না হওয়ায় প্রকৃত ব্যবসায়ী ও জমির প্রকৃত মালিকগণ সেই ভিটি হারাতে বসেছে। যে সকল ব্যবসায়ীগণ ভিটি পেতে আবেদন করে কর্মকর্তার চাহিদা মতো অতিরিক্ত টাকা গুনে গোপনিয়তা প্রকাশ করেছে সেই সকল আবেদনকারীদের টাকা ও আবেদন পত্র ফেরত দিয়েছে এ কর্মকর্তা।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্বত্ব দখলীয় জমি হারিয়েও ভিটি না পাওয়ার আশঙ্কায় বাজারের এক ব্যবসায়ী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দত্তকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করে প্রতিকার চেয়েছে। আদালত ওই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
নশাসন ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, অসৎ উদ্দেশ্যে ওই ভূমি কর্মকর্তা নশাসন বাজারের মালিকানা জমি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত করে ৯৭ শতাংশ জমি পেরিফেরির আওতায় আনে। প্রতি শতাংশে ১৩ বর্গমিটার করে ২টি ভিটি করা হয়েছে। প্রতি বর্গমিটার জমির বার্ষিক সরকারি খাজনা ধরা হয়েছে ২৫ টাকা। সে অনুযায়ী ১৩ বর্গমিটারের প্রতি ভিটির বার্ষিক খাজনা হয় ৩২৫ টাকা। ৩২৫ টাকা বার্ষিক খাজনার প্রতি ভিটির জন্য ব্যবসায়িদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ চক্রটি। প্রকৃত ব্যবসায়িদের মাঝে ভিটি বরাদ্দ দেয়ার নিয়ম থাকলেও অব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের মাঝে ভিটি বরাদ্দ দেয়ার পায়তারা করছে ওই কর্মকর্তা।
নড়িয়া উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. মইনুল হাসান জানায়, এ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩৫টি আবেদন পাওয়া গেছে। আবেদন নশাসন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সুমন এর কাছে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। সে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার পর দোকান বরাদ্দ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে এই সার্ভেয়ার নশাসন বাজারে কয়েকবার গিয়েছিল বলে জানিয়েছে। তার কাছেও এলাকাবাসী এ অনিয়মের অভিযোগ করেছে। অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান এ সার্ভেয়ার।
পরিচয় গোপন রেখে ভিটি প্রত্যাশী অনেকেই জানায়, তারা প্রত্যেকেই ভিটির জন্য টাকা দিয়েছে। এ পর্যায়ে মুখ খুললে তারা ভিটি পাবে না। এর পূর্বে কয়েক ব্যবসায়ী ভিটি বরাদ্দের জন্য অতিরিক্ত টাকা দেয়ার কথা সাংবাদিকের কাছে স্বীকার করায় তাদের টাকা ও কাগজপত্র ফেরত দিয়েছে। তারাও ভিটি পাবে না। তাই অতিরিক্ত টাকা গুনে অনেকেই ভিটির প্রত্যাশায় মুখ বন্ধ রাখছে।
নশাসন বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী মোহন মালত বলেন, বাজার কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা মাঝি আমাকে বলে বাজারে ভিটি বরাদ্দ দেয়া হবে। তুমিতো বাজারের ব্যবসায়ী। তোমার একটা ভিটি দরকার। ভিটি পেতে হলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। পরে আমি তহশিলদারের সাথে আলাপ করি। সেও বলে সভাপতি মোস্তফা মাঝিকে নিয়ম বলে দেয়া হয়েছে। দোকান পেতে হলে তার সাথে আলাপ করতে হবে। সভাপতিকে বলে কয়ে ৩০ হাজার টাকা ও আবেদন দেই। কয়েকজন লোক এসে বিষয়টি আমার কাছে জানতে চায়। আমি সত্য কথা বলে দেই। পরে বুঝতে পারি তারা সাংবাদিক ছিল। সভাপতি তা জানতে পেরে আমার আবেদন ও টাকা ফেরত দিয়ে বলেছে ‘তুমি সাংবাদিকদের টাকার কথা বলেছ সেজন্য তুমি ভিটি পাবে না’। এ বলে আমার টাকা ও আবেদন ফেরত দিয়েছে।
বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মুক্তিযোদ্ধা মোতাহের হোসেন হাওলাদার বলেন, এ তহশিলদার আসার পরে ওই অফিসে যাই না। অফিসারের আচরণ ভালো না। সে মানুষের সাথে খুব খরাপ আচরণ করে। টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না। সে সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অফিসে থাকে। বিকাল ৫টার পরে তারকাছে অপরিচিত কিছু লোকজন আসে। অফিসের দরজা বন্ধ করে তাদের নিয়ে আড্ডা করে। উনি আসার পরে আমাদের মালিকানা জমি খাস করে সরকারিভাবে ভিটি বরাদ্দ দিতেছে। আমারও এক শতাংশ জমির একটা দোকান ভিটি খাস করেছে। বাজারের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি এ ভিটিতে ব্যবসা করতাম। ১৫ বছর ধরে বিকর্ণ বেপারীর কাছে ভাড়ায় দিয়েছে। সে স্বর্ণকারের কাজ করছে। বিআরএস রেকর্ডও আমার নামে।
নশাসন বাজারের অপর ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক গং ব্যবসা ও ভিটি হারিয়ে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের নড়িয়া সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছে। মামলা নং দেওয়ানী ৫৮/২০১৯। আদালত বিবাদী হিসেবে নশাসন ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দত্ত বলেন, বাজারের উন্নয়নের জন্য এ জমি খাস করা হয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিসে ব্যবসায়ীরা আবেদন করবে। সেখান থেকে ভিটি বরাদ্দ হবে। আমি অতিরিক্ত কোন টাকা নিতে পারব না। আমার কথা বলে অন্য কেউ যদি টাকা নেয় সেটা দায়-দায়িত্ব আমার না। আমার ইউনিয়নে কাজের প্রচুর চাপ। আদায়ও ভালো। তাই আমাকে রাত ১১ পর্যন্ত অফিসে থাকতে হয়।
বাজার কমিটির সভাপতি মোস্তফা মাঝি বলেন, টাকা নেয়ার একটা প্রক্রিয়া ছিল। ঝামেলা হয় তাই অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মু. রাশেদুজ্জামান বলেন, দোকান বরাদ্দের প্রাথমিক যাচাই বাছাই চলছে। এ পর্যায়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রশ্নই আসে না। যদি কোন চক্র কোন অবৈধ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকে তা তদন্ত করে দেখব। একজন অফিসার ২৪ ঘন্টা অফিসে থাকতে পারে না। সে সেখানে কী করছে সেটা দেখার বিষয়। সে যদি অফিস টাইমের বাহিরে অফিসে বসে কোন অনিয়ম করে তাও খতিয়ে দেখা হবে।