Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

তরুণ প্রজন্ম দেশের সম্ভাবনাময় সম্পদ

তরুণ প্রজন্ম দেশের সম্ভাবনাময় সম্পদ
তরুণ প্রজন্ম দেশের সম্ভাবনাময় সম্পদ

একটি দেশের মূল উপাদান জনসংখ্যা । জনসংখ্যা ছাড়া কোনো দেশের অস্তিত্ব অকল্পনীয় । একটি দেশ কীভাবে উন্নয়নশীল দেশ থেকে ধাপ ধাপে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে তা নির্ভর করে ঐ দেশের জনসংখ্যার মেধা ও কার্যাবলির উপরে । আমাদের রয়েছে হাজার বছরের সভ্যতা-সংস্কৃতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য । যুদ্ধবিধ্বস্ত ক্ষত-বিক্ষত বাংলাদেশের ক্রমান্বয়ে ভাঙ্গাগড়ার মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলায় তরুণদের ভূমিকা তুলনাহীন । তারুণ্য এক প্রত্যয়, চেতনার উৎস, অনুপ্রেরণা । বাঙালির স্বপ্নে যুগ যুগ ধরে তরুণরাই নেতৃত্ব দিয়েছে । ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব স্বপ্নের সূচনা তরুণদের চোখে-মুখেই ধরা দিয়েছে আলোর ঝলকানি হয়ে । তারণ্যের জোয়ারকে বেঁধে রেখে নয়, বরং সেই জোয়ারকে শক্তির টারবাইনে স্থানান্তরিত করে দেশকে সম্মুখে এগিয়ে নিতে হবে বিদ্যুতের মতো । সম্প্রতি এই তরুণ ও যুবকরাই দেশের জন্য বড়ই উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে । কারণটি হয়তো বুদ্ধিসম্পূর্ণ কারোরই অজানা নয় । সোনার বাংলা খ্যাত দেশটি যখন ২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত বাংলাদেশ’ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে; ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে একটি উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে বিশ্বমণ্ডলে পরিচিত হতে চাচ্ছে; তখন সময় এসেছে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের তাদের নিজেদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে জানার ও সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ।
দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী দেশের বড় ও শ্রেষ্ঠ সম্পদ । এ সম্পদকে ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারলে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব । বিদ্যমান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট (জনমিতি) তথ্য অনুযায়ী ২০৩১ সাল পর্যন্ত বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বড় শক্তি । তাদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে সুযোগ কাজে লাগাতে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর অপরিহার্য । তবে বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে তরুণদের এই যাত্রা খুব সহজ হবে না, যদি না তারা সঠিকভাবে নিজেদের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, ইচ্ছা, সম্ভাবনা ও সীমিত সম্পদের সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যম তৈরি করে । পরিসংখ্যান ব্যুরোর সূত্র অনুযায়ী ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার । এর মধ্যে ৪৯ শতাংশই তরুণ । আর কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫৬ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ । আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ । যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, বাংলাদেশে তরুণদের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৬ লাখ । কিন্তু হতাশার ব্যাপার হল, এ বিশাল জনশক্তির অধিকাংশই বেকার, অনিশ্চিত জীবনের পথে । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমান অশিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ এবং শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ । প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দেশে প্রাথমিক পাস করা বেকার যুবকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ, মাধ্যমিক পাস করা যুবকের সংখ্যা ৯ লাখের বেশি, উচ্চমাধ্যমিক পাস করা বেকার যুবকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ আর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা বেকার যুবকের সংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজারের বেশি । উল্লেখ্য, সর্বস্তরের বেকাররাই বয়সে তরুণ । অন্যদিকে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এসএসসি পাস করা তরুণ-তরুণীদের ২৭ শতাংশ, এইচএসসি পাস করা তরুণ-তরুণীদের ২৮ শতাংশ বেকার এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ৩৭ ও ৩৪ শতাংশ । এর সঙ্গে যুক্ত হল ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষা না দিয়ে পাস করা আরও ১৩ লাখ তরুণ-তরুণী ।
অন্যদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের হিসাব মতে, করোনাকালীন মহামারীর কারণে দেশে বেকার হবে প্রায় দেড় কোটি মানুষ । এ প্রেক্ষাপটে নয়া জন্ম নেয়া এ শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সচেতন মহল খুবই উদ্বিগ্ন । দেশে তরুণ-তরুণীরা কাজ চায়; কিন্তু পায় না । কারণ তারা উন্নত বিশ্বের মতো বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কর্মমুখী শিক্ষা পায়নি । তারা শুধু পাস করেছে আর সার্টিফিকেট অর্জন করেছে । ফলে সার্টিফিকেট নির্ভর লেখাপড়া তাদের কোনো কাজে আসছে না । তরুণ-তরুণীদের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শেষ করতে চলে যায় ২৪-২৫ বছর । লেখাপড়া শেষে একটা ভালো চাকরি পাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা তাদের নেই । ফলে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে এক বিপজ্জনক পথে পা বাড়াচ্ছে এবং ভুল পথ বেছে নিচ্ছে । এক জরিপে উঠে এসেছে করোনাকালীন সময়ে তরুণদের ৬১.২ শতাংশ বিষন্নতায় ভুগছেন এবং ৩.৭ শতাংশ আত্মহত্যার চেষ্টা করছে । আঁচল ফাউন্ডেশন করোনাকালীন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার হার সংক্রান্ত একটি জরিপ বলেছে, আত্মহননকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৯ শতাংশই তরুণ । বেকারত্বের জন্য তরুণদের মধ্যে ফিরে আসছে না স্থিরতা । ফলে অপরাধ আর বিশৃঙ্খলা যেন বেড়েই চলেছে । জাতির দুর্ভাগ্য এই যে, তারা দীর্ঘ অর্ধশত বছরেও পেল না একটি যুগোপযোগী, সময়োপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা, পেল না সামগ্রিক জনবান্ধব একটি রাষ্ট্র । দেশে বিপুল জনশক্তি বেকার অথচ দেশীয় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করা হচ্ছে । কারণ ওই একটাই- বাজারের চাহিদানুযায়ী দক্ষ জনশক্তির অভাব । আর এ কারণেই দেশের এ বিপুল জনশক্তি তেমন কোনো কাজে আসছে না । জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান হার দেশকে বড় ধরনের ঝুঁকির দিকে নিয়ে যেতে পারে । অনুমান করা হয় ২০২১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে ১৭ কোটি ২৩ লাখ । আর ২০৫০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৩ কোটিতে । বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের সম্পদ ও জমির তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি । যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না । বর্তমানে দেশের মোট জনশক্তির ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম আর ১৫ বছর পর এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৭০ শতাংশে । অর্থাৎ কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা হবে প্রায় ১৩ কোটি । আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে

 

লেখক: মো. তোফাজ্জল হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক রুদ্রবার্তা