
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ২২ নং ছাব্বিশপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি) সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে অর্থ আত্মসাৎসহ সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক মো. এরশাদ আলীর বিরুদ্ধে। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্থানীয় শিক্ষিত ও গন্যমান্য লোকদের অসম্মান করে থাকেন নিয়মিত। বিদ্যালয়কে কোচিং সেন্টারে পরিনত করা সহ বিদ্যালয় উন্নয়নের সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে থাকেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা, দাতা সদস্য ও শিক্ষার্থী অভিভাবকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্ল করে আত্মীয়করণের মাধ্যমে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে সভাপতি নির্বাচন করেছেন। ইতোমধ্যে পূর্ববর্তী সভাপতি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও শিক্ষক সমাজসহ উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে প্রধান শিক্ষক এরশাদের স্বেচ্ছাচারিতার দুর্নাম রয়েছে। তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানাগেছে, প্রধান শিক্ষক এরশাদ আলী ২০০৯ সালে ছাব্বিশপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। স্থানীয় হওয়ায় তিনি এলাকার রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে সমাজকে বিভক্ত করে রেখেছেন। তার কারণে এলাকায় অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রধান শিক্ষক নিয়ম করে বিদ্যালয়ে দুই বেলা প্রাইভেট পড়ান। বিদ্যালয়ে নামমাত্র উপস্থিত হয়ে পার্শ্ববর্তী গঙ্গানগর বাজারে আড্ডা করে। তিনি নিজের অপকর্ম আড়াল করতে স্থানীয় শিক্ষিত লোক, শিক্ষার্থী অভিভাবক, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের বাদ দিয়ে ৬ কিলোমিটার দূর থেকে আত্মীয়করণ করে একজনকে এসএমসি সভাপতি করেছেন। এই বিষয়েও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সদ্য বাদপড়া সভাপতি এম.এ. জলিল বলেন, বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় ও ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য সরকারী বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করেছে এই প্রধান শিক্ষক। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য পাওয়া অর্থ আমার স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে উঠিয়ে নেয়। এর পূর্বেও স্বাক্ষর জাল করে ৩ লাখেরও বেশী টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করে প্রধান শিক্ষক এরাশাদ। ১৯-২০ অর্থ বছরে পাওয়া বরাদ্দের কাজ চাপ প্রয়োগ করে ২০-২১ অর্থ বছরের মাঝামাঝি কিছুটা বাস্তবায়ন করেছি। এই প্রধান শিক্ষকের মতো এতো বাজে ও হিনমানসিকতার মানুষ আর দ্বিতীয়টা এই এলাকায় নাই। এছাড়াও ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই ও ১৬ আগস্ট দুইটি চেকে আসার স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে ১ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা এবং চলতি বছরের ৯ মে ও ২৯ আগস্ট ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। প্রধান শিক্ষকের দুর্ব্যবহারে বিদ্যালয়ে কোন পুরুষ শিক্ষক বা মেধাবী শিক্ষক থাকে না। বিভিন্ন সময় শিক্ষা অফিসে ঘুষ দিতে হয় বলেও টাকা নিত সে। ইতোপূবে প্রধান শিক্ষক লিখিত ভাবে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থণা করেও পুনরায় সেই কাজই করছে।
জাজিরা উপজেরা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিএম এনামুল হক বলেন, দুই বছর পূর্বে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে ভুল বুঝাবুছি ছিল। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষা অফিসারদের সমন্বয়ে বিষয়টি সমাধান করেছি। বর্তমানে আরো কোন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে কিনা তা জানি না। তবে এই প্রধান শিক্ষক শিক্ষিত সমাজের কলঙ্ক।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এরশাদ আলী প্রাথমিক ভাবে অর্থ আত্মসাৎসহ সকল অনিয়মের কথা স্বীকার করলেও ক্যামেরার সামনে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তৎকালিন সভাপতির সাথে ভুল বুঝাবুঝির কারণে অন্ত:দ্বন্দ্ব ছিল। আমি কখনও স্বাক্ষর জাল বা টাকাও আত্মসাত করিনি। সভাপতির কাছে কোন ক্ষমাও চাইনি। এলাকায় কোন শিক্ষিত লোক না থাকায় অন্য এলাকার জলিল নামে এক লোককে সভাপতি করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শণ করেছি। প্রধান শিক্ষকের অবস্থা ভালো না। বিদ্যালয়ের অবস্থা আরো করুন। তদন্ত পূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থ গ্রহণ করা হবে।