
শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবুর রহমান ঢালী ও তার লোকজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানির চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার ৬ নভেম্বর দুপুর ১২টায় সময় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে নৌকার প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ঢালীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান ঢালী।
আনারস প্রতীকের প্রার্থী হাবিবুর রহমান ঢালী বলেন, আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ঢালী ও তার লোকজন আমাকে ও আমার লোকজনকে প্রতিনিয়ত নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিয়ে যাচ্ছেন। আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন, আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করছেন এবং আমার কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চালাচ্ছেন। সিরাজুল ইসলাম ঢালী ও তার লোকজন বিভিন্নভাবে আমার লোকজনকে হয়রানি করেছেন।
তিনি বলেন, আমি ৩৫ বছর যাবত রুদ্রকর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্বে আছি। আমার জীবন যৌবন টাকা-পয়সা সব দলের পিছনে ব্যয় করেছি। রুদ্রকরের জনগণ দুই দুইবার আমাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। সিরাজুল ইসলাম ঢালী আওয়ামী লীগের কেউ নন। রুদ্রকরে তার কোন জনপ্রিয়তা নাই। তাকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সিরাজুল ইসলাম ঢালী জানে নির্বাচনে তার ভরাডুবি হবে। এটা জেনেই সে এবং তার লোকজন শুরু থেকে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা ফিকির করে যাচ্ছেন। সে যখন দেখলেন কিছুতেই আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছিনা তখন তিনি আমার বিরুদ্ধে ভিন্ন ষড়যন্ত্র করতে লাগলেন। তিনি আমাকে ও আমার লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে লাগলেন। তিনি বিভিন্ন সময় জনসম্মুখে আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেন । গত শুক্রবার রাতে সিরাজ ঢালী ও তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে সুবচনী বাজারে আমার নির্বাচনী ক্লাব ভাঙচুর ও আমার লোকজনের উপর হামলা করেছে। তাদের হামলায় আমার প্রায় ১০ জন লোক আহত হয়েছে। আহতদের মাদারীপুর সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা আমাদের ওপর দায় চাপানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে সুবচনী বাজারের আওয়ামী লীগের ক্লাব ভাঙচুর করেছে।
হাবিবুর রহমান ঢালী বলেন আমি রুদ্রকর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। বিগত দিনে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। সুবচনী বাজারের আওয়ামী লীগের এই ক্লাবটি আমার পকেটের টাকায় আমি গড়ে তুলেছি। যেই ক্লাব আমার নিজের হাতে গড়ে তুলেছি সেই ক্লাব আমি ভাঙচুর করব এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।
সিরাজ ঢালী নাটক সাজিয়ে নাটক তার লোকজন দিয়ে বাজারের আওয়ামী লীগের ক্লাব ভাঙচুর করে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আমি জানতে পেরেছি সিরাজ ঢালী নিজে ক্লাবের বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করার সময় কাঁচের টুকরো তার চোখে লেগেছে।
এখন শুনতে পাচ্ছি, তারা বলছে আমরা নাকি আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করেছি। আমরা নাকি গুলি করে সিরাজ ঢালির চোখের ক্ষতি করেছি। আমরা আরো জানতে পেরেছি তারা নাকি আমাদের শতাধিক সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা করতেছে। সিরাজ ঢালী নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার হবে জেনে নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে সে আমাকে ও আমার লোকজনকে হয়রানি করার জন্য এ সকল চক্রান্ত করছে। রুদ্রকরের মানুষ চেয়ারম্যান হিসেবে সিরাজ ঢালী কখনোই মেনে নিবে না। কারণ সিরাজ ঢালী আওয়ামী লীগের কেউ নন। তিনি রুদ্রকরের বাসিন্দাও নন। বছরে একবারও তিনি রুদ্রকরে আসেন না। রুদ্রকরে তার কোন ভোটার নেই। এই কারণেই তিনি ছলে বলে কলে কৌশলে নির্বাচনে জিততে চায়। আমি সিরাজ ঢালী ও তার লোকজনের এ সকল ষড়যন্ত্র ও কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি বলতে চাই সিরাজ ঢালী উদ্দেশ্য সফল হবে না। সিরাজ ঢালী যতই ষড়যন্ত্র করুক তাতে কোন কাজ হবে না। রুদ্রকরের মানুষ সিরাজ ঢালীর সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে। তারা চেয়ারম্যান হিসেবে আবারো আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। আমি প্রশাসনের কাছে দাবি করছি, রুদ্রকরে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান ঢালীর সমর্থক ও বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রুদ্রকর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বারবার নির্বাচিত সভাপতি ও রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ঢালী আসন্ন রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ঢালী।
নৌকার প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ঢালীর ভাই রুহুল আমিন ঢালী বলেন, শুক্রবার রাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান ঢালী লোকজন সুবচনী বাজারের আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ সময় আমার ভাই সিরাজুল ইসলাম ঢালীর চোখে গুলি লেগে গুরুতর জখম হয়েছে। সিরাজুল ইসলাম ঢালী সহ আমাদের জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে আমার ভাই সিরাজুল ইসলাম ঢালী সহ তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, রুদ্রকর ইউনিয়নের সুবচনী বাজারে শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সিরাজুল ইসলাম ঢালী আহত হয়েছে। এ ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।