
দাম্পত্য জীবনের ৪২ বছরে এসে ৭৫ বছর বয়সী ছাত্তার রাড়ী নামে এক সৌদি প্রবাসী স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তার বৈবাহিক জীবনের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন। এই নিয়ে এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রশিকজনদের মুখে শোনা যাচ্ছে নানা কথা। তিনি প্রায় ৩২ বছর সৌদি প্রবাসে থেকে ৬ বছর পূর্বে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার ৬ বছরের মাথায় স্ত্রী শাহিদাকে চলতি মাসের ৩ তারিখ বিবাহ রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে কাজীর মাধ্যমে তালাক সম্পন্ন করেছেন।
তালাক দেয়ার সংবাদ পেয়ে স্ত্রী শাহিদা বেগম (৬৫) বাংাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর কার্যালয় গিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। কমিশনের সভাপতি ৫ আগষ্ট শুনানীর জন্য দিন ধার্য করে বিবাদী ক্ষকে নোটিশ করেছেন।
সরেজমিন গিয়ে জানাযায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার গ্রামের মৃত ছিটু রাড়ীর পুত্র মো. ছাত্তার রাড়ী। বিগত ৪২ বছর পূর্বে ডামুড্যা উপজেলার ধনঐ গ্রামের মৃত হাতেম আলী মাদবরের মেয়ে শাহিদা বেগমকে বিয়ে করেন। ছাত্তার-শাহিদার দাম্পত্য জীবনে শুরেতেই কন্যা সন্তান সোনিয়ার জন্ম হয়। সোনিয়া যখন দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে তখন ছাত্তার রাড়ী সৌদি প্রবাসে যায়। ৩০ বছর পরে সৌদি প্রবাস থেকে ৬ বছর পূর্বে দেশে ফিরেছে। এখন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ছাত্তার রাড়ী শাহিদা বেগমকে তালাক দিয়েছে। এর পূর্বেও কয়েকবার এই ধরনের তালাকের কথা গুঞ্জন শোনাগেছে। শাহিদা বেগম এখন মেয়ে সোনিয়ার স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করছেন।
শাহিদা বেগম বলেন, আমার বাবা-মা পছন্দ করে ছাত্তার রাড়ীর সাথে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার বিবাহিত স্বামী আমাকে বিয়ের পর থেকে অনেক অত্যাচার করত। বাবা-মা ও শ্বশুর পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে স্বামীর সকল অত্যাচার সহ্য করতাম। আমার বড় মেয়ে যখন দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে তখন আমার স্বামী সৌদি আরব যায়। মেয়ে সোনিয়াকে বিয়ে দিয়েছি এখন সোনিয়রর মেয়ে আইএ পড়ে। তার পড়েও আমার আরও দুই মেয়ে হয়েছে। তাদেরও বিয়ে দিয়েছি। এই বয়সে আমাকে তালাক দিয়ে মেয়ে, জামাতা, নাতি-নাতনী, আত্মী-স্বজন ও সমাজের কাছে চরিত্রহীন হিসেবে ছোট করেছে। আমি স্বামীকে অনেক বলেছি,‘আমার বাবা-মা কেউ নাই, আমি বাবার বাড়িতে মরতে চাই না। আপনি প্রয়োজনে আরও একটা বিয়ে করে আনেন। তবুও আপনার পরিচয়ে আমাকে মরতে দেন।’ সে আমর কোন কথা না রেখে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তালাক দিয়েছে। তালাকের নোটিশ আমার বাবার ঠিকানায় চলে গেছে। পরে আমি মানবাধিকার কমিশনে গিয়ে অভিযোগ করেছি।
শাহিদার মেয়ে সোনিয়া বলেন, আমার বাবা ছাত্তার রাড়ী আমার মাকে অনেক অত্যাচার করত। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের চোখের সামনে আমার মাকে অত্যাচার করেছে। এখন আমার মাকে আমার বাবা অত্যাচর করে তালাক দেয়। এতে আমাদের শ্বশুর পরিবার ও ছেলে-মেয়েদের কাছে নিজেকে ছোট মনে হয়। এবার আবার শুনেছি আমার বাবা কোর্টে গিয়ে মাকে তালাক দিয়েছে। তাই আমার মাকে ১ মাস যাবৎ আমাদের বাড়িতে এনে রেখেছি।
একই বাড়ির আনিছ উদ্দিন বেপারী বলে, শাহিদা বেগম যে অভিযোগ করেছে তার শতভাগ সত্যতা আছে। শাহিদা বেগম অনেক অত্যাচার সহ্য করে সংসার করছে। এখন বৃদ্ধা বয়সে স্বামীর থেকে তালাক প্রাপ্ত হয়েছেন। এমটা সুশিল সমাজের কাম্য নয়।
মো. ছাত্তার রাড়ী বলে, বিয়ের পর থেকেই এই স্ত্রীকে নিয়ে আমি সুখি ছিলাম না। পরবর্তীতে সৌদি প্রবাসে চলে যাই। সেখান থেকে প্রতি বছর ছুটিতে আসতাম। ছুটিতে এসেও কোন শান্তি পেতাম না। অনেক সময় ছুটি থাকতেও চলে যেতাম। আমার প্রবাস জীবনের সকল রোজগারের টাকা, সোনাদানা, সম্পদ স্ত্রী সন্তানের নামে রেখেছি। এখন আমার বসত বাড়িও তাদের নামে নিতে চায়। তাই আমার সাথে ঝগড়া করে। ৬ বছর হল দেশে ফিরেছি। এর মধ্যে একদিনের জন্যও স্ত্রীর সাথে ভালো সময় কাটেনি। মাসের মধ্যে ১০ দিন না খেয়ে থাকি। অন্যান্য ২০ দিন মরিচ আলু সিদ্ধ করে ভাত খাই। আমার ছাঁয়াও সে পাড়ায় না। এর পূর্বেও একবার তালাক দিয়েছিলাম। তখন কাজী সাহেব ও স্থানীয় লোকজন মিলে সেই তালাক বন্ধ করে আমাদের মিলিয়ে দেয়। এবার আদালতে গিয়ে উকিল ও কাজীর মাধ্যমে তালাক দিয়েছি।
এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনের শরীয়তপুর জেলা সভাপতি এডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, তালাক প্রদানের কোন বয়স নাই। যে কোন বয়সে স্বামী স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে। শাহিদা বেগম নামে একজন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী এসে আমার কাছে অভিযোগ করেছে। আমি বিবাদীকে নোটিশ করেছি। আগামী ৫ আগষ্ট বিকাল ৩টায় আমার কার্যালয়ে এসে যদি বিবাদী তার মতামত ব্যক্ত করে এবং বাদীর খোরপোষ, ভরনপোষন দাবী মেনে নেয় তাহলে ভালো। অন্যথায় বাদী পক্ষে আমাদের পক্ষ থেকে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করব।