
দশম শ্রেনীর এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) যৌন হয়রানীর অভিযোগে সুজন শিকদার (২৫) নামে এক বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার (২ আগষ্ট) বিকেলে শরীয়তপুরের পালং মডেল থানায় ওই স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এছাড়া সুজনদের সহযোগি রুবেল তালুকদার, সুজনের মা রাহেলা বেগম, বাবা জুলহাস শিকদার ও চাচা রেজাবর শিকদারকে ওই মামলায় আসামী করা হয়েছ।
মামলা ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলীয়া ইউনিয়নের পশ্চিমপাড় গ্রামের জুলহাস শিকদারের ছেলে বিজিবি সদস্য সুজন শিকদার (২৫) দীর্ঘদিন যাবত প্রতিবেশী দশম শ্রেনীতে পড়–য়া এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) উত্ত্যক্ত করে আসছে। প্রায় দুই বছর যাবৎ সুজন বিজিবিতে যোগদানের পরও তার সহযোগি একই এলাকার রেজ্জেক তালুকদারের ছেলে রুবেল তালুকদারের মাধ্যমে ওই স্কুলছাত্রীকে বিভিন্ন ধরনের কু-প্রস্তুাব দিয়ে আসছে। এছাড়া সুজন মাঝে মধ্যে ছুটিতে বাড়ি এসে ওই স্কুলছাত্রীকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে সরাসরি বিভিন্ন ধরনের কু-প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে ওই স্কুল ছাত্রীর মা সুজনের পরিবার ও এলাকার মুরব্বীদের কাছে বিচার দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। গত বৃহস্পতিবার (১ আগষ্ট) ওই স্কুলছাত্রী প্রাইভেট পড়তে খোয়াজপুর যাওয়ার সময় বিকেল ৫টার দিকে চিতলিয়া পশ্চিম পাড় দারুল উলুম মাদ্রসার পশ্চিম পাশে কাঁচা রাস্তায় পৌছলে বন্ধু রুবেলের সহযোগিতায় সুজন শিকদার ওই স্কুলছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেয়। পরে স্কুলছাত্রী সুজনের পরিবারের কাছে বিচার দিতে সুজনের বাড়ি যায়। বিচার নিয়ে মেয়েটি সুজনের বাড়ি গেলে সুজনের মা, বাবা ও চাচা মিলে মেয়েটিকে চুল ধরে টানা হেচড়া ও চর থাপ্পর মেরে মেয়েটিকে লাঞ্ছিত করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রীর মা শুক্রবার দুপুরে মেয়েকে নিয়ে পালং থানায় এসে সুজন, সুজনের বন্ধু রুবেল, মা বাবা ও চাচাকে আসামী করে পালং মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পালং মডেল থানা অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে প্রেরন করে।
যৌন হয়রানীর শিকার ওই স্কুলছাত্রী বলেন, প্রায় তিন বছর যাবত স্কুলে ও প্রাইভেট পড়তে আসা যাওয়ার পথে সুজন আমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। এসব ব্যাপারে আমার মা সুজনের বাবা-মার কাছে বিচার দিতে গেলে তারা বিচার না করে উল্টো আমার মাকে গালাগালি করে ও ঝাড়– দিয়ে পেটাতে আসে। এ নিয়ে সুজনের সহযোগি রুবেল স্কুলে আসা যাওয়ার পথে এ হাসিঠাট্টা ও আজেবাজে কথা বলে। বৃহস্পতিবার প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে সুজন আমাকে কুপ্রস্তাব দেয় এবং রাতের বেলা তার সাথে দেখা করতে বলে। আমি অপমানে রাগে ক্ষোভে সুজনের বিরুদ্ধে তার বাবা-মার কাছে বিচার দিতে তাদের বাড়ি যাই। সুজনের মা আমাকে দেখে বলে আমি নাকি তার ছেলের বউ হওয়ার জন্য তাদের বাড়ি গেছি। এই কথা বলে তারা এলাকার মানুষজন জড়ো করে এবং আমাকে চুল ধরে টেনে হিচড়ে ও চর থাপ্পর দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
ওই স্কুলছাত্রীর মা বলেন, মেয়ের বাবা দেশের বাহিরে থাকার সুযোগে প্রতিবেশী সুজন আমার মেয়েকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছে। এ বিষয়ে এলাকার মুরব্বীদের কাছে বিচার দিয়েও কোন বিচার পাইনি। সুজনের বাবা-মার কাছে বিচার দিতে গেলে তারা আমাকে অপমান করে। সুজন ও তার সহযোগির ভয়ে আমার মেয়ে ঠিকমতো স্কুলে যাওয়া আসা করতে পারেনা। তারা বিভিন্ন সময় আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে। অপমান সইতে না পেরে আমার মেয়ে বিচার নিয়ে সুজনের বাড়িতে গেলে তারা আমার মেয়েকে মারধর করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে জানার জন্য সুজনের বাড়িতে গিয়ে সুজন ও তার বাবা জুলহাস শিকদারকে পাওয়া যায়নি। সুজনের মা রাহেলা বেগম বলেন, সন্ধ্যার সময় ওই মেয়ে আমাদের বাড়ি এসে ঘরে ঢুকে। কি জন্য আসছে জানতে চাইলে সে কোন কথা বলেনা। পরে এলাকার লোকজনের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে তারা বাড়ি এসে ভিড় জমাতে থাকে। পরে এলাকার মুরব্বীরা মিলে মেয়েটিকে তাদের বাড়ি দিয়ে আসে। তাকে কেউ মারধর করেনি।
শরীয়তপুরের আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিন্টু মন্ডল বলেন, পালং মডেল থানা থেকে অভিযোগপত্রটি তদন্তের জন্য আংগাড়িয়া পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগপত্রটি আমি পেয়েছি। শীঘ্রই তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।