মঙ্গলবার, ৩রা অক্টোবর, ২০২৩ ইং, ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
মঙ্গলবার, ৩রা অক্টোবর, ২০২৩ ইং

শরীয়তপুরে অপচিকিৎসায় শিশুর হাতে পচন, কবিরাজ আটক

শরীয়তপুরে অপচিকিৎসায় শিশুর হাতে পচন, কবিরাজ আটক

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় অপচিকিৎসার অভিযোগে মোফাজ্জল বেপারী (৬০) নামে এক কবিরাজকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (৩ আগষ্ট) দুপুরে সদর হাসপাতাল থেকে তাকে আটক করা হয়। কবিরাজ মোফাজ্জল বেপারী সদর উপজেলার গুড়িপাড়া গ্রামের মৃত আলী একাব্বর বেপারীর ছেলে। সে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় হাড় ভাঙ্গা রোগীদের চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন।
পুলিশ, চিকিৎসক ও ভুক্তভোগী সুত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের চরপাতানিধি গ্রামের হযরত আলী তালুকদারের ছেলে ও গুড়িপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সাকিব হোসেন গত ১৪ দিন পূর্বে ভ্যান থেকে পড়ে বাম হাতের কনুইর হাড় ভেঙ্গে যায়। তখন পাশ^বর্তী গুড়িপাড়া গ্রামের কবিরাজ মোফাজ্জল বেপারী শিশু সাকিবের চিকিৎসা দেন। সে বিভিন্ন লতাপাতা, মুরগীর মাংস ও বাশের চটি দিয়ে সাকিবের হাত বেঁধে দেয়। এছাড়া কবিরাজ মোফাজ্জল হাড় ভাঙ্গার কিছু অসুধ ফার্মেসি থেকে কিনে সাকিবকে খাওয়াতে বলে। কিন্তু এতে সাকিবের হাত ভালো না হয়ে উল্টো হাতে পচন ধরে যায়। শনিবার (৩ আগষ্ট) বেলা ১১টার দিকে সাকিবের মা-বাবা কবিরাজ মোফাজ্জল সহ সাকিবকে শরীযতপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স চিকিৎসক ডা. আকরাম এলাহী পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখেন শিশু সাকিবের হাতের অবস্থা গুরুতর, হাতে পচন ধরে গেছে। তখন ডা. আকরাম এলাহী বিষয়টি পালং মডেল থানা পুলিশকে ফোনে জানান। দুপুরের দিকে পুলিশ সদর হাসপাতাল থেকে কবিরাজ মোফাজ্জলকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান।
সরেজমিন হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, সাকিবকে কোলে করে তার মা লাখি বেগম ডা. আকরাম এলাহীর চেম্বারে বসে আছে। সাকিব পচন ধরা হাতের যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন।
এ সময় শিশু সাকিবের লাখি বেগম মা বলেন, কবিরাজ মোফাজ্জল বেপারী বলেছিলেন তার কাছে চিকিৎসা নিলে ছেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে এবং টাকাও কম লাগবে। কবিরাজ আমাদের বাড়ি এসে লতাপাতা, মুরগীর মাংস ও বাঁশের চটি দিয়ে আমার ছেলের ভাঙ্গা হাত বেঁেধ দেয় এবং হাত ভাঙ্গার কথা বলে ফার্মেসী থেকে কিছু অষুধ কিনে ছেলেকে খাওয়াতে বলে। কিন্তু এতে আমার ছেলের হাত ভালো না হয়ে উল্টো খারাপের দিকে যেতে থাকে। এ ব্যাপারে কবিরাজকে জানালে সে বাড়ি এসে হাতের বাঁধ খুলে দেয়। তখন দেখা যায় আমার ছেলের হাতে পচন ধরে গেছে। তখন কবিরাজ সহ আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তার দেখে বলেছে আমার ছেলের হাতের অবস্থা খুবই খারাপ। হাত বাঁচানো যায় কি না সন্দেহ। কবিরাজের ভুল চিকিৎসার কারণে আজকে আমার ছেলের এই অবস্থা। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স চিকিৎসক ডা. আকরাম এলাহী বলেন, ১৪ দিন আগে সাকিব নামে এক শিশু পড়ে গিয়ে বাম হাতের কনুইর হাড় ভেঙ্গে যায়। তখন এলাকার এক কবিরাজ তার চিকিৎসা দেন। কবিরাজের চিকিৎসা দেওয়ার পর থেকে রোগীর অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকে। আজকে ওই শিশুকে কবিরাজ সহ আমার কাছে নিয়ে আসে। আমি শিশুটির হাত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলাম, এলবো জয়েন্টের নিচে পচন ধরেছে। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর আমার মনে হচ্ছে এই হাত বাঁচে কি না সন্দেহ রয়েছে। রোগীকে সদর হাসপাতালে ভর্তি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি দীর্ঘদিন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে হাড় ভাঙ্গা রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। সদর হাসপাতালে যখন আমি আউটডোরে বসি তখন প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন রোগী আমার কাছে আসে যারা কবিরাজের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন কোন রোগীর হাত কাটা যায়, কোন কোন রোগীর পা কাটা যায়। কিন্তু কবিরাজ ধরা ছোয়ার বাইরে থাকে। আজকে এই শিশুটির সাথে কবিরাজকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে আমি তাকে পুলিশে সোপর্দ করি।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম উদ্দিন বলেন, কবিরাজ মোফাজ্জল বেপারী দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় হাড় ভাঙ্গা রোগীদের অপচিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। তাই আমরা তাকে আটক করেছি। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


error: Content is protected !!