
শরীয়তপুর সদর উপজেলার স্বর্ণঘোষ গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে রাতের আঁধারে প্রতিপক্ষের উপর নির্বিচারে সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর ও লুটাপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিশু, কলেজ ছাত্রী, নারী-পুরুষ সহ ৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজন এখনও শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় মামলা দায়েরের পর আসামীরা জামিনে এসে আবারও তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের চিকিৎসায়ও বাঁধা বিঘœ সৃষ্টি করছেন হামলাকারীরা। হামলাকারীরা অবৈধ টাকা ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুইবার করে হাসপাতাল থেকে রোগীদের নাম কেটে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মামলা ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার স্বর্ণঘোষ গ্রামের মৃত আজিজ শেখের ছেলে দরিদ্র শাহাবুদ্দিন শেখের সাথে দীর্ঘদিন যাবত একই গ্রামের প্রভাবশালী হাসেম শেখ ও তার ছেলে ফরিদ শেখ গংদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের জের ধরে গত ২৯ আগস্ট দিনগত রাত ৩টার সময় হাসেম শেখের নির্দেশে তার ছেলে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ফরিদ শেখ ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে রাতের অন্ধকারে শাহাবুদ্দিন শেখের বাড়িতে নির্বিচারে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। হামলাকারীরা কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে বসতঘর ভাংচুর ও শাহাবুদ্দিন (৫৫), শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী হাজেরা বেগম (৪০), কলেজ পড়–য়া মেয়ে লিমা আক্তার (১৮), ছেলে তালহাকে (১৫) গুরুতর জখম করে। হামলাকারীরা ভাংচুর চালিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি ও নগদ ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ৫ হাজার টাকা মূল্যমানের টিন নিয়ে যায়। পরে আহতদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পরদিন শাহাবুদ্দিন শেখ বাদী হয়ে হাসেম শেখ ও তার ছেলে ফরিদ শেখ সহ ১২ জনকে আসামী করে পালং মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর আসামীরা শাহাবুদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজনকে হাসপাতালে গিয়ে ও বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়া হামলায় আহতদের ঠিক মতো চিকিৎসাও করাতে দিচ্ছেনা সন্ত্রাসীরা। তারা প্রভাব খাটিয়ে আহতদের চিকিৎসায় বাধাবিঘœ সৃষ্টি করছে এবং কয়েকবার হাসপাতাল থেকে আহতদের নাম কেটে দিয়েছে। পরে সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপে আহতদের পূনরায় ভর্তি করানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করে এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শাহাবুদ্দিন ও তার পরিবার। সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকির কারণে তারা এখন বাড়িতেও যেতে ভয় পাচ্ছেন।
শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী হাজেরা বেগম বলেন, হাসেম শেখ ও তার ছেলেদের সাথে জায়গা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আমাদের বিরোধ চলে আসছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় জোরপূর্বক আমাদের জায়গা জমি, গাছপালা ও ফলফলাদি ভোগ করছে। এর প্রতিবাদ করতে গেলেই তারা আমাদের উপর হামলা করে। তাদের ভয়ে আমরা কিছু বলতেও পারিনা। এর আগেও তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আমাদের আহত করেছে। এ নিয়ে থানায় মামলাও হয়েছে। গত ২৯ আগষ্ট সকাল বেলা আমি রান্না ঘরে রান্না করতেছিলাম। এ সময় হাসেম শেখ আমার রান্না ঘরের উপর নারকেল গাছ থেকে নারকেল পাড়তে ও গাছ বাছতে গাছে লোক উঠায়। আমার রান্না করা খাবার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় এ সময় আমি তাদের গাছে উঠতে নিষেধ করি। কিন্তু তারা আমার নিষেধ না শুনে গাছে উঠে নারকেল ও নারকেলের ডাল পেড়ে আমাদের রান্না ঘরের উপর ফালায়। এতে আমার রান্না করা খাবার নষ্ট হয়ে যায়। এর প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং মারতে আসে। কাজ শেষে আমার স্বামী বাড়ি এসে ঘটনা জানতে পেরে এর প্রতিবাদ করলে তারা আমার স্বামীকে মারার জন্য ধাওয়া করে। এ সময় আমার স্বামী দৌড়ে এক বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ ঘটনা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে হাসেম শেখকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনার জের ধরে ফরিদ শেখ ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে রাতের আঁধারে আমাদের বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও আমাদের সবাইকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। আমার হাতের হাড় ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার কলেজ পড়–য়া মেয়ে ও ৪ বছরের ছোট ছেলেকেও তারা ছাড়েনি। তারা আমাদের প্রায় ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি ও নগদ ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় মামলা করলে তারা আমাদের জীবনের তরে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে আমরা এখন বাড়িতেও যেতে পারছিনা। তারা হাসপাতাল থেকে কয়েকবার আমাদের নাম কেটে দিয়েছে। তারা আমাদের ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে দিচ্ছেনা। তাদের ভয়ে এখন আমরা আতঙ্কে আছি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
শাহাবুদ্দিন শেখ বলেন, ফরিদ শেখ এলাকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এছাড়াও সে একাধিক নারী কেলেঙ্কারী সহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। ইতিপূর্বে পুলিশ তাকে ১০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট সহ গ্রেফতার করেছে। অবৈধ উপায়ে সে অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়েছে। সেই অবৈধ টাকার গরমে তারা সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে আসছে। তারা জোরপূর্বক আমাদের জায়গা জমি ভোগ দখল করছে। তাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। তাদের ভয়ে আমরা এলাকায় কোন কথা বলতে পারিনা। তারা আমার ছেলে মেয়ে স্ত্রী সহ আমাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। এ ঘটনায় মামলা করায় তারা এখন আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে আমরা বাড়িতে যেতে পারিনা। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে জানার জন্য ফরিদ শেখ ও তাদের লোকজনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন বলেন, স্বর্নঘোষ গ্রামের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের বসতবাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট ও আহত করার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত চলছে। আসামীরা বাদীকে হুমকি দিচ্ছে কিনা এ বিষয়ে আমার জানা নাই। এ বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে কিছু বলে নাই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।