সোমবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৩ ইং, ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
সোমবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৩ ইং

ভেদরগঞ্জে চাকুরীতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গ্যাঁড়াকলে শিক্ষক

ভেদরগঞ্জে চাকুরীতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গ্যাঁড়াকলে শিক্ষক

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে চাকুরী ক্ষেত্রে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাশ করা সায়েদুর রহমান নামে এক শিক্ষক গ্যাঁড়াকলে পড়েছে। তার বেতন-ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। প্রথমে ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ইসলামী শিক্ষা বিষয় পদে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন সায়েদুর রহমান। এরপর উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন প্রকার ছাড়পত্র না নিয়ে তথ্য গোপন রেখে উপজেলার ৩১ নং চরহোগলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরীতে যোগদান করেন এবং প্রায় ১ বছর যাবত সরকারী বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন তিনি। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকুরি ছেড়ে পুনরায় কলেজে যোগদান করে বেতন ভাতাদি তুলতে পারছেন না এই শিক্ষক।
ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এর কলেজ শাখাও জাতীয়করণ হচ্ছে- এলাকায় এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকুরী ছেড়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সাথে যোগসাজশে পুনরায় কলেজ শাখায় প্রভাষক পদে যোগদান করেন সায়েদুর রহমান। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি তার। ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বেতন-ভাতা আটকে দেয়ায় তিনি এখন গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, সায়েদুর রহমান ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি গ্রামের আবু বকর মাদবরের ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশুনাকালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতেন।
ভেদরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে উপজেলা সদরে একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের অংশ হিসেবে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরে অবস্থিত ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।
২০১৫ সালে বিদ্যালয়টিতে দ্বাদশ শ্রেণি পযর্ন্ত কলেজ শাখার পাঠদান অনুমতি আনা হয় এবং কয়েকটি বিষয়ে প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এদের মধ্যে সায়েদুর রহমান উক্ত কলেজ শাখায় ২০১৫ সালের মে মাসের শেষের দিকে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এরপর সায়েদুর রহমান উক্ত কলেজ থেকে কোন প্রকার ছাড়পত্র/অব্যাহতি পত্র না নিয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৩১নং চর হোগলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর তারিখে যোগদান করেন। এদিকে ভেদরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টির কলেজ শাখাও জাতীয়করণ করা হচ্ছে-এমন গুঞ্জন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে চাকুরী ক্ষেত্রে সরকারী বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে সায়েদুর রহমান চলতি বছরের ৩ আগস্ট তারিখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সাথে যোগসাজশে উক্ত কলেজে পুনরায় প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।
তথ্য গোপন করে পুনরায় কলেজ শাখায় যোগদান করায় সায়েদুর রহমানের বেতন-ভাতা আটকে দেয় ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন তিনি। এতে বিপাকে পড়েছে সায়েদুর রহমান। বেতন-ভাতা উত্তোলনের জন্য নানাভাবে তয়-তদ্ববির চালাচ্ছেন সায়েদুর রহমান। এর পূর্বেও এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সায়েদুর রহমান বলেন, নন এমপিও অত্র কলেজ শাখায় যখন যোগদান করি তখন কোন বেতন পেতাম না। এ বিষয়ে কতিপয় অভিজ্ঞ লোকদের সাথে আলাপ করি এবং তাদের পরামর্শে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরি নেই। এখন কলেজ এমপিও হওয়ার সুযোগ এসেছে। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকুরি ছেড়ে কলেজ শাখায় যোগদান করি। আমার বিল ভাউচার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে আমার বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করেনি। বলেছে একটা অভিযোগ হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। এখন বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাব্বির আহমেদ বলেন, সায়েদুর রহমানের বিরুদ্ধে একটা লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। আপাতত ওই শিক্ষকের বেতন-ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


error: Content is protected !!