
জমিতে রোপনকৃত ধানের চারা তুলে নেয়াকে কেন্দ্র করে মারধোর। এই নিয়ে আদালতে মামলা। মামলার চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার পায়নি গরিব অসহায় রাবেয়া।
মামলার বাদী রাবেয়া মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে উকিলের কাছে জানতে চাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করার অভিযোগ। ন্যায় বিচার না পেয়ে কোর্ট চত্বরে এসে দিশেহারা হয়ে ঘুরছে রাবেয়া বিচার পাওয়ার আসায়।
ঘটনাটি ২৫ জুলাই ২০১৫ সালের শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার নরসিংহপুর খালাসী কান্দি গ্রামে স্বামী আনোয়ার হোসেন নান্টু’র স্ত্রী রাবেয়া আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন, মামলা নং জি.আর ১১০/১৫ মামলা সূত্রে জানা যায়, রাবেয়ার চাচাতো ভাই হারুন রোপনকৃত ধানের চারা তুলে জমিতে রেখে বাড়িতে যায়। ঘন্টা খানেক পর জমিতে এসে দেখে ধানের চারা নাই। পরবর্তিতে জানতে পারে একই গ্রামে হাছান আলী ধানের চারা নিয়ে গেছে। হাছান আলীর বাড়িতে গিয়ে রাবেয়ার চাচাতো ভাই ধানের চারা আনতে যায়। তখন হাছান আলী মিজি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। এক পর্যায়ে হারুনকে ৫/৭ জন মিলে এলোপাথাড়ি মারধোর করে। তখন সাথে থাকা নগদ ১০ হাজার টাকা সহ একটি নকিয়া মোবাইল সেট নিয়ে যার আনুমানিক মূল্য ১৮ হাজার টাকা। এছাড়াও রাবেয়া তার ভাইকে রক্ষা করতে গেলে আসমীরা তার গলায় থাকা ৮ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন যার মূল্য ১৯ হাজার টাকা ও একটি সিমফনি সেট মূল্য ৬ হাজার টাকা। আসামীরা মারধোর করে নিয়ে যায়।
এলাকা সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনায় গ্রাম্য শালিস হয়েছিল। চেয়ারম্যান মিমাংশার জন্য চেষ্টা করেছে। আসামী পক্ষ শালিস না মানলে। রাবেয়া বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। এরপর আদালতে শুরু হয় ধনি গরিবের মামলার লড়াই। আসামী পক্ষ টাকার জোরে জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর বাদী পক্ষ ৪ বছর মামলা চালিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে এখনো ন্যায় বিচার চেয়ে ঘুরছে।
সোমবার ২১ অক্টোবর দৈনিক রুদ্রবার্তাকে ভুক্তভোগী মামলার বাদী রাবেয়া এক ভিডিও স্বাক্ষাতকারে বলেন, আমাদের মামলাটি নিয়ে এড. মীর শাহাব উদ্দিন উজ্জল এর কাছে আসি। এড.উজ্জল আজ জামিন শুনানি, কাল জামিন শুনানি বলে, আমার কাছে যখন যে টাকা চেয়েছে, আমি তাই দিয়েছি। প্রতিবার ২ হাজার ৩ হাজার ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আমার কাছ থেকে নিয়েছে। আমাকে বলে ১০ দিন ১২ দিন পর জামিন শুনানি। এই বলে আমাকে শরীয়তপুর আদালত পাড়া চেম্বারে আনিয়ে খরচাপাতি নেয়।
যেদিন আসামীদের জামিন হয়ে যাবে, সেই দিন এড.উজ্জল বলেন, আজকে তুমি ৫ হাজার টাকা দাও, টাকা দিলে আসামীদের জামিন হবে না। ওনার কথায় আমি ৫ হাজার টাকা দেই। সে দিনই আসামীরা জামিন পেয়ে যায়। রাতে বাড়িতে গিয়ে শুনি আসামীরা বাড়িতে। পরের দিন আমি উজ্জল উকিল এর কাছে গিয়ে আসামীদের জামিনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসামীরা এতোদিন জেল খাটে নাকী। যা খাটছে এই তো বেশী।
এই মামলা ৬ মাস হলে নাকী সরকারবাদী হয়ে যায়। তখন মামলাটি এপিপি এড.আব্দুল আউয়াল সাহেব এর কাছে যাই। এড.আউয়াল আমার মামলার কাগজ দেখে বলে, ওদের জামিন আমি নামঞ্জুর করবো। আমাকে তুমি ৫ হাজার টাকা দাও। আমি তার কথায় ৫ হাজার টাকা দেই। পরে জামিন নামঞ্জুর করতে পারে নাই। পরবর্তী তারিখে আসলে এড. আউয়াল বলেন, আজকে ০৩ হাজার টাকা দাও। আজ আসামীদের জামিন নামঞ্জুর করবই। আমি ৩ হাজার টাকা দিলাম। কিন্তু সে দিন শেষে বলে, আজকেও জামিন হয় নাই। আসামীদের স্থায়ী জামিন হয়ে গেছে।
যাই হোক, মামালায় আমার ১ মাস ১৪ দিন পরপর তারিখ পড়ে। আমি এড. আউয়াল এর কাছে আসলে তাকে ১ হাজার টাকার কমে দেয়ায়-যায় না। ১ হাজার টাকা দিলেও উনি টাকা ছুড়ে ফেলে দেয়। তাকে ১৪’শ ১৫’শ টাকা দিতে হয়। এভাবে টাকা দিয়ে মামলা চলতে থাকে তারপর একদিন স্বাক্ষি ডাকে। আমি ২/৩ জন স্বাক্ষি নিয়ে আদালতে আসি। তখন এড. আউয়াল বলে, আজকে সময় নাই। স্বাক্ষি নিবে না। আমি আবার স্বাক্ষি নিয়ে ফেরত যাই। এরকম করতে-করতে আমি বিরক্ত হয়ে যাই। টাকা-পয়সা আর কুলাই না। অনেক দূরে আমার বাড়িতো, উকিল বায়না দিতে হয়। স্বাক্ষির খরচ, ভাড়ার টাকা। একপর্যায় আমি স্বাক্ষি এনে কোর্টে উঠেছি। জজ সাহেব বললো, তোমরা আপোষ মিমাংশা হয়ে যাও। আমাকে বললো, তোমরা মানবাতো আমি জজ সাহেবকে বললাম মানবো। এই বলে জজ সাহেব দেড় লক্ষ টাকায় মিমাংশা কথা বলে আসামী পক্ষদের জানান। তখন আসামী পক্ষ আদালতকে বলেন, আমরা বুঝে নেই। বোঝার কথা বলে আর কোন কথা নাই। তার পর এভাবেই হাজিরার তারিখ পড়তে থাকে। আমি স্বাক্ষি নিয়ে আদালতে আসতে থাকি, উকিল কোন দিন স্বাক্ষি নেয়। আর বেশীর ভাগ সময় নেয় না। আমি উকিলকে প্রতি হাজিরায় টাকা দেই। উকিল সাহেব কোর্টে উঠে না। আমি কোর্ট এসে-এসে ফেরত যাই।
একদিন আমি একজন স্বাক্ষি আনছি, সেদিনও উকিল সাহেব কোর্টে উঠে নাই। আমি উকিল সাহেবকে ফোন করে বললাম, স্যার আমি আপনাকে খরচাপাতি দিলাম, আপনি কোর্টে উঠলেন না কেন? উনি আমাকে বকাবাজি করে। উনি বলে এই শুয়ারের বাচ্চা এই জন্য তুই আমাকে ফোন দিছস। ফোন রাখ। তুই আমারে বিরক্ত করবি না। ওনার চেম্বারে এসে কথা বললেই আমাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখে।
আমি পরবর্তিতে ফোন দিয়ে উকিল আউয়ালের কাছে মামলার তারিখ জানতে চাই। তিনি আবারও আমাকে গাল দিয়ে বলে, এই শুয়ারের বাচ্চা। আমি কি তোর উকিল, আমি-হলাম পিপি, সরকারি উকিল। এজন্য তুই আমার কাছে আইছো। না হইলে তো আসতি না।
আমি বললাম স্যার, আপনার পাশাপাশি যদি আরেকটা উকিল লাগে তাহলে আমাকে বলেন। আমার মামলাটা এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে স্যার। সে আমাকে রাগান্বিত হয়ে আবারও মুখ খারাপ করে বলে, এই শুয়ারের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা বলে ধমক দেয়। আমি ভয়ে চুপ করে থাকি। এভাবেই আমার মামলা চলতে থাকে। কথা গুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন রাবেয়া।
তিনি আরো বলেন, আসামী পক্ষের আইনজীবি বন্ধু নাকী জজ সাহেব, তারা একই ভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছেন। এজন্য ওনারা স্বাক্ষি নিয়ে গেলে হাসাহাসি করে। কি বলে না বলে আমি বুঝি না। এভাবেই চলতে থাকে। এর পরেও আমি স্বাক্ষি আনলেও এড. আওয়াল সাহেব কোর্টে উঠেনা। উল্টা জিঙ্গাসা করলে মুখ খারাপ করে কথা বলে।
আমি চাই, আমরা গরিব নিরিহ মানুষ যারা আমাদের উপর অন্যায় ভাবে অত্যাচার করেছে। মারপিট করেছে। আমরা ওদের কাছে কোন অন্যায় করিনি। আমি ন্যায় বিচার চাই। এই মামালা ৪ বছর ধরে আদালতে চলছে। আমি এখনো ন্যায় বিচার পায়নি।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের প্রথম আইনজীবি মীর শাহাব উদ্দিন উজ্জল বলেন, আমার কাছে এই মামলার কোন কাজ নাই। এটা এপিপির কাছে চলে গেছে।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবি এড. আব্দুল আউয়াল বলেন, মামলাটা আমি ছেড়ে দিয়েছি। একটা মামলা নিয়েতো আমরা কোর্টের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে পারবো না। আমি বলেছি রাষ্ট্র পক্ষের হয়ে মামলা চালাচ্ছি। অন্য কারো দিয়ে চালাও। তাকে মামলার বিষয়ে অনেক কিছু বলেছি। সে যদি সেটা না শুনে তা হলেতো কিছু করার নাই। স্বাক্ষি ও টাকার নেয়ার কথা জিঙ্গাসা করলে তিনি বলেন, ওরে (বাদী রাবেয়াকে) জোতা দা পিটিয়ে টান বানিয়ে ফেলবো।