
শরীয়তপুরে গত পাঁচদিন ধরে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল মানুষের। তীব্র শীত আর এক টানা ঘন কুয়াশার কারণে শরীয়তপুরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তুষারাচ্ছন্ন বাতাস আর ঘন কুয়াশায়সহ হাড় কাপাঁনো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এ জেলার মানুষ। সূর্যের দেখা মেলেনা দিনে একবারও। আগুন জ্বেলে চলছে শীত নিবারণের চেষ্টা। আর এ দিকে শীতবস্ত্রের দোকানে উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে শীতের শুরু থেকেই। স্বল্প আয়ের মানুষেরা ফুটপাতে বা রাস্তার ধারে বসা পুরনো গরম কাপড়ের দোকানে ভীড় করে তাদের পছন্দের শীতবস্ত্র কিনে শীত নিবারণের শতভাগ চেষ্টা করছে।
প্রচন্ড শীতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধসহ সকল বয়সী মানুষ। ক্রমাগত তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। আগামী কয়েকদিন এই অবস্থা চলমান থাকতে পারে বলে স্থানীয় কৃষি আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে জানা গেছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে সর্দি, কাশি ও হাপানিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর উপচে পড়া ভীড় রয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশুই শীতের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ডায়রিয়া সহ নিউমোনিয়ার মত রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা। রোগীর স্বজনরা অনেকে অভিযোগ করছে তারা এখান থেকে পুরোপুরি চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আর এদিকে ডাক্তার স্বল্পতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ খাজা হুমায়ুন কবির বলেন, শীতের কারনে এসময় বাচ্চাদের ঠান্ডা কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রোনকাইলেজিস্ট, শ^াস কষ্টের এবং প্রচুর ডায়েরিয়ার রোগী বেড়ে গেছে। এ সময় মায়েদের একটু সচেতন থাকতে হবে। ডায়েরিয়া থেকে বাঁচতে হলে মায়েদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকতে হবে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুমন কুমার পোদ্দারের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুই বেশী ভর্তি হচ্ছে। বৃদ্ধ রোগীরা শ্বাসকষ্ট রোগে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে। শীত শুরু থেকেই এই সকল রোগীর চাপ বেশী। যে পরিমান বেড আছে তার চাইতে রোগী বেশী হওয়ায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমসিম খাচ্ছি।
১০০ শয্যা শরীয়তপুর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মুনীর আহমেদ খান বলেন, আমাদের জনবল স্বল্পতা রয়েছে মোট ৫১ টি পদের মধ্যে ১৬ টি পদে জনবল রয়েছে বাকি ৩৫ টি পদ শূন্য রয়েছে। এই স্বল্প জনবল দিয়ে আমাদের সেবার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে শূন্য জনপদের তালিকা দিয়েছি তারা চেষ্টা করতেছে শূন্য পদে জনবল নিয়োগ দেয়ার জন্য। আমাদের এখানে ৭০% ঔষুধ সরবারহ করতে পারি, বর্তমানে ডায়েরি রোগী বেড়ে যাওয়ায়, ডায়েরিয়া বিভাগের আমাদের কিছু ঔষুধের ঘাটতি রয়েছে আমরা প্রথমে সবাইকে একটা করে সেলাইন দেই, যদি কারও বেশি লাগে তখন আমরা তাকে বাহিরে থেকে কিনে আনতে বলি।
শরীয়তপুরের তৈরী পোষাকের বিভিন্ন মার্কেটে দেখা গেছে উপচে পরা ভীড়। সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী শীতের গরম বস্ত্র কিনছে সকল বয়সী মানুষ। শীত নিবারণ প্রয়োজন কিন্তু সাধ্য ও সামর্থ কোনটাই নাই এমন মানুষেরা ভীড় জমাচ্ছে পুরাতন শীতবস্ত্রের মার্কেটে বা রাস্তার পাশে ভ্যান মার্কেটে। সাধ্য অনুযায়ী ভীড় করে তারা শীতবস্ত্র ক্রয় করছে।
যে সকল মানুষ রাতে কাজকর্ম করে শীতবস্ত্র তাদের তেমন কোন উপকারে আসে না। সেই সকল মানুষ শীতকে প্রতিহত করতে খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত তাড়ায়। গত বুধবার থেকে সকাল ও দিনের বেলায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণে করতে দেখে গেছে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামবাসীকে।
মজুর পরিবারের মধ্য বয়সী ও বৃদ্ধারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলাগুলো ঘুরে দেখা যায়, জেলার গোসাইরহাট, ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া, জাজিরা ও সদর উপজেলা জুড়ে নেমে এসেছে উত্তর পশ্চিমের কনকনে শৈত প্রবাহ। প্রচন্ড তীব্র শীত আর এক টানা ঘন কুয়াশার কারনে শরীয়তপুরের জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ঘন কুয়াশার কারণে যাবাহনগুলোকে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতের প্রকোপে অভাবী মানুষের জীবন বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে।
মনোহর বাজার এলাকার ভ্যান চালক দেলোয়ার হোসেন ঢালী বলেন, আমি ভ্যান চালিয়ে আমার সংসার চালাই প্রচন্ড শীত থাকার কারণে আজ আমি ভ্যান চালাইতে যেতে পারি নাই। যদি এ রকম শীত পরে তাহলে আমার সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পরবে।
গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টির আব্দুর রহিম বলেন, প্রচন্ড তীব্র শীত আর এক টানা ঘন কুয়াশার কারনে আমরা ক্ষেতে যেতে পারছি না। কিভাবে যে সংসার চালাবো জানিনা।
ডামুড্যা উপজেলার ধানকাটি ইউনিয়নের মোঃ ওসমান আকন বলেন, আমরা কয়েকদিন যাবত শীতে বাসা থেকে বের হতে পারছিনা। কবে যে শীত কমবে তাতো জানি না।
জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, অন্যান্য জেলার মতো শরীয়তপুরেও তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন কিছুটা অচল হয়ে পড়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র সব উপজেলায় পৌঁছিয়ে দিয়েছি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ঢাকায় মিটিং থাকার কারণে দু’ এক দিনের মধ্যে এসে শীতবস্ত্র বিতরণ করবে