Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

ভেদরগঞ্জে প্রতারণা করে ভূমিহীনদের নামে সরকারি জমি দখল

ভেদরগঞ্জে প্রতারণা করে ভূমিহীনদের নামে সরকারি জমি দখল

ভেদরগঞ্জে সরকারি জমি ভূমিহীনদের নাম করে প্রতারণার মাধ্যমে দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি উঠেছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের লাকার্তা গ্রামের মৃত হোসেন সরদারের পুত্র জামাল সরদারের বিরুদ্ধে। স্থানীয় কাজী রাশিদুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করে তৎকালিন স্থানীয় সহকারী ভুমি কর্মকর্তা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বরাদ্দকৃত জমির বন্দোবস্ত বাতিল করার জন্য উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করেছেন।
স্থানীয় কাজী রাশিদুর রহমানের অভিযোগ ও সরেজমিনে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার লাকার্তা মৌজার ১ নং খতিয়ানের ১০৩২ নং দাগের খাস ভূমির ১৬ শতাংশ জমি ১৫২৯/১৭ নং সাব কাবলা দলিল মুলে বন্দোবস্ত নেয় স্থানীয় আব্দুস সাত্তার হাওলাদারের স্ত্রী সেলিনা, সালাউদ্দিন আয়ৌকরের স্ত্রী মাকসুদা বেগম এবং জামাল সরদার ও তার স্ত্রী শোভনার নামে বন্দোবস্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে জামাল সরদার সেলিনা ও মাকসুদা বেগমের অংশ না দিয়ে জামাল সরদার ভুমিহীন না হয়েও তিনি এবং তার স্ত্রী এককভাবে দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেলিনা ও মাকসুদা বেগম তাদের নামে বন্দোবস্তকৃত সম্পত্তি দাবী করে। পরে আমিন ও স্থানীয় লোকজন শালিস দরবার করে অংশ বুঝিয়ে দিতে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। শালিসদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে জামাল সরদার নির্মাণাধীন ভবনের কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেললেও অদ্যবধি সেলিনা ও মাকসুদার অংশ বুঝিয়ে দেয় নাই।
এ বিষয়ে কাজী রাশিদুর রহমান বলেন, জামাল সরদার, তার স্ত্রী শোভনা, শ্যালিকা (স্ত্রীর বোন) সেলিনা ও মাকসুদা বেগমের নামে সরকারি খাস ১৬ শতাংশ জমি ভূমিহীন হিসেবে গ্রহন করে। পরবর্তীতে সেই জমির হিস্যা ভূমিহীন সেলিনা ও মাকসুদাকে না দিয়ে জামাল সরদার একাই ভূমিহীনদের জমিতে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের ৩ তলা বিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেলিনা ও মাকসুদা আমার কাছে এসে বিষয়টি অবগত করে। পরে স্থানীয় গন্যমান্যদের নিয়ে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা করে দেই। শালিসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামাল সরদার ভবনের কতিপয় পিলার ভেঙ্গে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করে। একপর্যায়ে পিলার ভাঙ্গা স্থগিত রেখে অপর অংশীদার সেলিনা ও মাকসুদাকে হুমকি দিতে থাকে। অথচ জামাল সরদার ও শোভনা বেগম ভূমিহীন না হয়েও তথ্য গোপন করে সরকারি জমি বরাদ্দ নেয়ার বিষয়টি তদন্তের জন্য আমি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করি। আবেদনের বিষয়টি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খবির উদ্দিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। জামাল সরদার ভূমিহীণ না হয়েও ভূমিহীন সেলিনা ও মাকসুদা নামে বরাদ্দকৃত জমিতে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে।
জামার সরদার নিজেকে ভুমিহীন দাবী করে বলেন, জমির অংশীদার সেলিনা ও মাকসুদা আমার কাছে জমির বদলে টাকা দাবী করে। তাদের টাকা দিয়ে বিদায় করব ভেবে অর্ধেক জমিতে তিন তলা বিশিষ্ট পাকা দালান নির্মাণের কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে সেলিনা ও মাকসুদা এসে বলে তারা টাকা নিবে না। তাদের জমি দরকার। এই বিষয়ে স্থানীয় শালিসী হয়। শালিসদের সিদ্ধান্ত মেনে ভবনের কতিপয় পিলার ভাঙ্গা শুরু করি। পরে ভেবে দেখি এতে আমার ৭/৮ লাখ টাকা ক্ষতি হবে। এখন ভাবছি বাড়ির পিছন অথবা অন্য কোন জায়গা দিয়ে তাদের জমি বুঝিয়ে দিব। স্থানীয় কতিপয় কুচক্রীদের কুপররামর্শে এই বিষয়টা সেলিনা ও মাকসুদা মানতে চায় না। তাছাড়া আমিও ভূমিহীন। শ্বশুরের বাড়িতে থাকি।
বিষয়টি তদন্তকারী ছয়গাঁও ইউনিয়নের সাবেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খবির উদ্দিন বলেন, ভূমিহীন হওয়ার জন্য একজন নাগরিবের যে পরিমান ভূমি থাকার কথা জামাল সরদারের তার চাইতে একটু বেশী রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছি। ভূমিহীন জমি গ্রহীতার বসত বাড়ি করার জন্য অন্য কোন জমি না থাকলে বরাদ্দকৃত সরকারি জমিতে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে বসত বাড়ি করতে পারবে। জামাল সরদারের নামের বরাদ্দকৃত সরকারি জমির বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারে। সেই বিষয়ে আমার কোন হাত নাই। আমি শুধু তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছি।