Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

প্রকৃতির শোভাবর্ধক অতিথি পাখি শরীয়তপুরের হাওরে

প্রকৃতির শোভাবর্ধক অতিথি পাখি শরীয়তপুরের হাওরে

শরীয়তপুরের আকাশে অতিথি পাখি উড়তে দেখা গেছে। প্রকৃতির শোভাবর্ধক এই অতিথি পাখি শীতকালে বিভিন্ন জলাশয় ও হাওরে অবস্থান করছে। অতিথি পাখি যে জলাশয়কে অভয় আশ্রম মনে করে সেখানেই বাসা বেঁধে দিন-রাত যাপন করাসহ বংশ বিস্তার করে। অতিথি পাখির এমন একটি অভয় আশ্রম হলো শরীয়তপুর পৌরসভার তুলাসার এলাকার হাওর। যা শরীয়তপুরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড় থেকে ২০০ মিটার পশ্চিমে। সরকারের হস্তক্ষেপে এই হাওর ঘিরে হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। অতিথি পাখি পাল্টে দিতে পারে হাওর ও আশাপশ এলাকর পরিবেশ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতি বছরের অগ্রহায়ন মাস থেকে বহু প্রজাতির অতিথি পাখি এই হাওরে আসতে শুরু করে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই সময় অতিথি পাখির প্রকৃত সৌন্দর্য (যেমন পানিতে ভেসে থাকা, সাঁতার কাটা ও আকাশে উড়া) দেখতে দর্শনার্থীদের ভীড় পড়ে যায়। অতিথি পাখি ঝাঁক বেধে উড়া শুরু করলে আকাশে রঙ পরিবর্তন হয়ে কালো রঙ ধারণ করে। পথচারিসহ যাত্রিবাহী পরিবহন থামিয়েও পাখির কার্যকলাপ উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা।
শীত শেষে বসন্তের গরম হাওয়া বইতে থাকলে অতিথি পাখির ফিরে যাওয়া শুরু হয়। যে সকল অতিথি পাখি বাসা বেঁধে ডিম পেড়ে বাচ্চা দিয়েছে সেই সকল পাখি ছাড়া অন্যসব অতিথি পাখি গরম বাড়ার সাথে সাথে চলে যায়। ডিম পেড়ে বাচ্চা দেওয়া পাখিগুলোর বাচ্চারা উড়তে শিখলে বাচ্চাসহ সেই পাখিগুলোও উড়ে যায়। জানা গেছে যখন সাইবেরিয়ায় বরফ পড়তে শুরু করে তখন অতিথি পাখিগুলে সেখান থেকে বাংলাদেশ সহ পার্শ্ববর্তী যে দেশগুলোতে একই ধরণের আবহাওয়া বিরাজ করে সেই দেশের জলাশয়ে এসে অবস্থান করে।
তুলাসার গ্রামে অবস্থিত হাওরের পাড়ের দোকানদার শাওন জানায়, প্রতিদিন অতিথি পাখি দেখতে অনেক দর্শণার্থী এখানে ভীড় করে। যখন পাখিগুলো একযোগে উড়তে শুরু করে তখন আকাশের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়। ঘন্টাব্যাপি পাখিগুলো উড়তে থাকে। তখন পথচারী ও গাড়ি থমিয়ে যাত্রিরা দাড়িয়ে যায়। এমন দৃশ্য খুব ভালো লাগে।
হাওরের পার্শ্ববর্তী এলাকা চরপালং এর বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানায়, প্রতিবছরই শীতকালে পাখিগুলো এই হাওরে অকস্থান করে। কেউ পাখি শিকাড় করে না বা ঢিলও ছুড়ে না। এক কথায় এই হাওড় অতিথি পাখির জন্য অভয় আশ্রম বলা চলে।
পৌরসভার বাঘিয়া এলাকার রিকশা চালক আনোয়ার চৌকিদার রিকশা থামিয়ে অতিথি পাখির উড়া দেখে। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সে যখনই যাত্রি নিয়ে এই হাওরের পাড় দিয়ে যায় তখনই অতিথি পাখির দিকে তাকিয়ে থাকে। যখন রিকশায় যাত্রি না থাকে তখন সে বেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে অতিথি পাখির পানিতে ভেসে থাকা ও একযোগে উড়ে বেড়ানো উপলব্ধি করে। অতিথি পাখি দেখতে তার খুব ভালো লাগে।
হাওরের প্রতিবেশী যে দিনের অনেক সময় হাওরে কাজকর্ম করে এমন একজন আবু আলম মাদবর। তিনি বলেন, প্রতি শীতের শুরুতেই এই পাখিগুলো এখানে আসে। পূববর্তী বছরগুলোতে হাওরের মাঝখান কচুরীপানা মুক্ত থাকত। তখন পাখিগুলোর বেশী নিরাপত্তায় ছিল। এ বছর হাওর পুরোপুরি কচুরিপানায় আবদ্ধ। পাখিগুলো স্বাধীন মতো পানিতে ভাসতে পারে না। পাখিগুলো যখন কচুরিপানার উপর বসে তখন গুইসাপ সহ কিছু হিংস্র প্রাণী পাখির পা ধরে পানির নিচে নিয়ে যায়। এমনিভাবে অনেক পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। এই হাওরটি অতিথি পাখির অভয় আশ্রম করতে চাইলে সরকারি উদ্যোগে হাওরের কচুরিপানা অপসারণ করতে হবে। আগে অনেক শিকাড়ি এসে এখান থেকে পাখি শিকাড় করে নিয়ে যেত। কয়েক বছর যাবত কোন শিকারী এই এলাকায় আসে না।
দর্শনার্থীরা উপজেলা ও জেলার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, শরীয়তপুরে বিনোদনের তেমন কেন জায়গা নাই। দর্শনার্থীরা অতিথি পাখি দেখে বিনোদন উপভোগ করে। এই হাওরটি যদি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাস্তার পাশ দিয়ে দর্শনার্থীদের বসার স্থান তৈরী করা হয় তাহলে শরীয়তপুরবাসীর একটা বিনোদনের জায়গা হবে। এই হাওরটি অতিথি পাখির অভয় আশ্রম ও দর্শণার্থীদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হবে। অনেক দর্শণার্থী এখানে আসবে।