
শরীয়তপুর আংগারিয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধীর ভাতা বন্ধ করে, বয়স্কভাতার তালিকায় নাম দিয়ে ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবন্ধী ও বয়স্কভাতা না পাওয়ায় অবহেলিত হয়ে পড়েছেন সজনদের কাছে। বয়স্কদের চেয়ে তার স্বজনদের তীব্র কন্ঠের অভিযোগ শোনা যায়। ভাতা না পেলে বাঁচার কোন উপায় নাই বলে জানান বয়স্করা। এছাড়াও ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।
১৩ জুন রবিবার সরেজমিনে গেলে আংগারিয়া ইউনিয়নের চর মধ্যপাড়া ১ নং ওয়ার্ডের ধিরেন চন্দ্র মন্ডল (৮৩) বলেন,আমি প্রতিবন্ধী। বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে পা’ খোঁড়া হয়ে গেছে। আমি এতোদিন প্রতিবন্ধি ভাতা পাইছি। ইউপি সচিব জুয়েল পারভেজ আমার প্রতিবন্ধী ভাতা কেটে বয়স্কভাতার করে দিছে। আমি এখনো ভাতার টাকা পায়নি। আমি চেয়ারম্যান আনোয়ার হাওলাদারকে বলছি। চেয়ারম্যান সচিবকে বলছে, তোমাদের মধ্যেই এই কাজটা হইছে। বিষয়টি আমি সদর উপজেলার ইউএনও সাহেবের কাছে বলবো। এই বলার পেছনে বৃদ্ধাকে সাহায্য করছেন, তার ছেলের বউ সবিতা।
একই গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী কালু শিকদার (৭০) তার বয়স্কভাতার তালিকায় নাম দিয়ে টাকা উত্তলনের নাম্বার দিয়েছে মেম্বার শাহ আলমের।
এবিষয়ে মেম্বার শাহ আলম এর মুঠোফোনে কল দিলে তার মেয়ে বলেন,আমার বাবা এলাকার একটা ঝামেলায় বাহিরে আছে। একসপ্তাহ পর আসবে। পরে যোগাযোগ করেন।
চর মধ্যপাড়া গ্রামের রেপুতি মন্ডল (৭৫) দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, আমার বাড়ির ভেতর একজন বয়স্কভাতা পেয়েছে শুনে, কয়েক বার ইউনিয়ন পরিষদে আমার ছেলে গেছে, ছেলের বউ গেছে, নাতনি গেছে তারা আজ না কাল এই বলে ফিরিয়ে দিছে। স্বজনরা বলেন আমরা পরিষদে গেলেই তালবাহানা করে। একই অভিযোগ বাবু রাম মন্ডল (৭০) ও মজিবর মোল্লা’র (৭৩) বয়স্ক ভাতা নিয়ে।
সাংবাদিক শুনে আরেক স্বজন এক বৃদ্ধা কালা চান মন্ডল (৬৪) কে নিয়ে এসে বলেন, ৬/৭ বছর বয়স্কভাতা পাওয়ার পর এখন তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ আমার নাকী বয়স কম। ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্টের কথা জানান তিনি।
পশ্চিম ভাষানচর এসকান্দার হাওলাদার এর ছেলে নিয়াজ মাহমুদ বাচ্চু দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, মোবাইল নাম্বার সঠিক ভাবে দেয়ার পরও তারা ভুল নাম্বার দিয়েছে। উপজেলা সমাজ সেবায় গিয়ে জানতে পারি আমার বাবার টাকা ভুল নাম্বারে বরিশাল ঝালকাঠি অজ্ঞাত একজনের কাছে চলে গেছে। এতে করে ভাতা পাওয়ার উপকারের চেয়ে হয়রানি বেশি হতে হচ্ছে।
আংগারিয়া ইউনিয়নের সচিব জুয়েল পারভেজ দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, সরকার শতভাগ ভাতা প্রদানে অনলাইন করেছে। অনলাইন প্রক্রিয়ায় পুরুষদের ৬৫ বছরের উর্ধ্বে, মহিলাদের ৬৩ বছরের উর্ধ্বে। এর মধ্যে আংগারিয়া ইউনিয়নের এক ব্যাক্তি তার নাম ধিরেন মন্ডল তিনি ১৯৩৮ সালে জন্ম তারিখ। তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়। এটা অনলাইন প্রক্রিয়ার আগে দেয়া হয়। তখন তার বইটি অনলাইন করতে গেলে ১৯৩৮ সালে তার জন্ম তারিখ। প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় অনলাইন গ্রহন করেনি। মেশিনে এমআইএইচ পদ্ধতিতে বয়স্কভাতায় সেভ করে নেয়।
মনে হয়েছে, অফিস ভুল ক্রমে প্রতিবন্ধীর পরিবর্তে বয়স্ক ভাতা করে দিয়েছে। পরবর্তীতে অফিস যখন তার মোবাইল নাম্বারে টাকা ঢুকানোর পদ্ধতি চালু করেছে। তখন বয়স্ক বিধবা বরাদ্দের তালিকায় গিয়ে ঝামেলা হয়েছে। অফিস পরবর্তীতে সংশোধনের জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু! ধীরেন মন্ডল সংশোধনের সেই সুযোগ দেয় নাই।
আংগারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হাওলাদার দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, ভাতা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা। এটা আমাদের কাজ না। উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কাজ। ভুক্তভোগীরা টাকা পায় না! নগদে আসে না! এই টাকা আরেক জায়গায় চলে যায়। এই নিয়ে ভুক্তভোগীর আমার বেড রুম পর্যন্ত চলে যায়। ভাতা নিয়ে বিভিন্ন ভাবে মানুষকে হয়রানি করায়। সরকার সাহায্যও দিলো, আবার হয়রানি করলো, তাহলে এই সাহায্যের কি দরকার। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সব তথ্যই ঠিক ভাবে দেই। সমাজ সেবা থেকে তারা নাম্বার ভুল করে দেয়। এরকম ভুল তারা বার-বার করতেছে। আমাদের করার কিছু নেই। টাকা চলে যায় বরিশাল, চলে যায় রংপুর, দিনাজপুর। তারা তাদের আত্মীয় স্বজনের নাম্বারওতো দিয়ে দিতে পারেন? বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, আসলে আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রথম বাস্তবায়ন হচ্ছে। সাড়া দেশে প্রায় ৮৮ লক্ষ মানুষের কাছে আমরা এই মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দিয়েছি। এতে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। কারণ আমরা এই বিশাল কর্মযজ্ঞ, এই প্রথম বারের মতো বাস্তবায়ন করতেছি। যাদের নাম্বার ভূল হচ্ছে তাদের আমরা সময় দিচ্ছি এডিট করার জন্য। সাড়া রমজান মাস সহ এখনো নাম্বার ভুল নাম্বার এডিট করে দিচ্ছি। অনেক প্রতিবন্ধী বয়স্কতে এন্ট্রি হয়ে গেছে। যে সকল প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধী জরিপ কার্ড নাই,বয়স ৫০ এর উপরে এদের গুলো ভুলে বয়স্ক ভাতায় এন্ট্রি নিয়েছে। আমরা এগুলো ও ঠিক করে দিচ্ছি। মাহমুদপুর, চন্দ্রপুর, ডোমসার ইউনিয়ন এরকম কিছু হয়েছে, তা আমরা ঠিক করে দিয়েছি। ধিরেন মন্ডল এর প্রতিবন্ধী জরিপ কার্ড থাকলে, আমরা তাকে আবার বয়স্ক ভাতা থেকে প্রতিবন্ধী ভাতায় নিয়ে আসবো। অনেক ভাতাভুগীরা তাদের নিজের নাম্বার বলতে পারছেন না। তারা কেউ বাড়ির পাশের নাম্বার দিছে,কেউ মেম্বার এর নাম্বার দিছে। এরকমও আছে। নাম্বারে অনেক ভুল হয়েছে। আমরা কেউ ভুলের উর্ধ্বে না। ইউনিয়ন পরিষদের ভুল হতে পারে আমাদের ও হতে পারে পারসোনালি বলতে পারছি না। ইউনিয়নের যে তালিকা দিয়েছে, আমরা তা যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। কেউ ঢাকা থাকে, কেউ বাড়ি ঘরে থাকে না,কোন হদিস নেই। এরকম ১৮২২ জন বাদের তালিকায় আছে। আবাট বয়স হয় নাই, এরকম আরও ৫৭ জন আছে। এদের বয়স্ক ভাতার তালিকায় দিয়েছে। যারা এখনো বয়স্ক ভাতা পায় নাই ৩০ তারিখ থেকে আমরা তাদের খুঁজে খুঁজে বেড় করে তাদের ভাতার আওতায় এনেছি। নাম্বারের একটা ডিজিট ভুল হলে চলে যায়, অন্য জায়গায়। ভুল নাম্বারে টাকা গেলেও আমরা চেষ্টা করছি। টাকা ফেরত আনতে। কেউ টাকা ফেরত দিতে না চাইলে, আমরা তাকে আইসিটি মামলা দেয়ার কথাও বলছি।
#