
মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ। এক মাস ধরে ফেরি বন্ধ থাকায় শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বিপাকে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা হচ্ছে অসুস্থ রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনের। দ্রুত ঢাকা পৌঁছাতে না পারায় মুমূর্ষু রোগী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রোগীদের পারাপার করা হচ্ছে।
কয়েক দফায় নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর পিয়ারে (খুঁটিতে) ফেরির ধাক্কায় ও নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় গত ১৮ আগস্ট থেকে ওই নৌপথে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিটিসি)। এরপর জাজিরায় বিকল্প একটি ফেরিঘাট নির্মাণ করা হলেও ২৭ দিনে সেটা চালু করা সম্ভব হয়নি।
বিআইডব্লিটিএ, বিআইডব্লিউটিসি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাবাজার শিমুলিয়া নৌপথ নৌপথ ব্যবহার করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঢাকা,
চট্টগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ জেলায় যাতায়াত করে। এ নৌপথে যানবাহন পারাপার করার জন্য ১৮টি ফেরি চলাচল করত। শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার মানুষ জরুরি ও উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য ঢাকায় যায়। ফেরি বন্ধ থাকায় এ পথে অ্যাম্বুলেন্স পারাপার বন্ধ। জরুরি ও মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্বজনেরা। অনেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও লঞ্চে রোগীদের পারাপার করছেন। আবার কেউ কেউ অ্যাম্বুলেন্সে রাজবাড়ী জেলা হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌপথ ব্যবহার করে ঢাকায় যাচ্ছেন। এতে সময় বেশি লাগছে, পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
নড়িয়ার কালিকাপ্রসাদ গ্রামের ইউনুস খালাসির (৭০) বুকে ব্যথা হলে তাঁর স্বজনেরা তাঁকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার চিকিৎসকেরা ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। স্বজনেরা তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে জাজিরার সাত্তার মাদবর, মঙ্গল মাঝির লঞ্চঘাটে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পদ্মা পাড়ি দিয়ে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছান। এরপর ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ইউনুস খালাসির ছেলে আনিস খালাসি বলেন, ‘আমার বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তাঁকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল অথবা হৃদ্রোগ হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু ফেরি না চলাচল করায় সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সে নিতে পারিনি। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পার হতে হয়েছে।’
সাত্তার মাদবর, মঙ্গল মাঝির লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা লঞ্চে পারাপার হচ্ছেন। অনেক অসুস্থ রোগী নিয়ে তাঁদের স্বজনেরা লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি নৌ–অ্যাম্বুলেন্স আছে, যা জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু রোগী ব্যবহার করতে পারেন। ওই নৌ–অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় রোগীর স্বজনদের অস্থায়ী চালকের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
নড়িয়া উপজেলার কমলাপুর গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব দেবনাথের (৪২) হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা দেখা দেওয়ায় গত শুক্রবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া নৌপথ হয়ে ঢাকায় রওনা হন স্বজনেরা। ঢাকায় নিতে দেরি হওয়ায় পথেই তাঁর মৃত্যু হয়।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, স্রোতের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত এ নৌপথে ফেরি ছাড়া হবে না। এ কারণে শরীয়তপুরের জাজিরার সাত্তার মাদবর, মঙ্গল মাঝির ঘাট এলাকায় ২৫ আগস্ট নতুন করে একটি ফেরিঘাট নির্মিত হয়েছে। নতুন এ ঘাটে ছোট ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, সরকারি দপ্তরের জরুরি গাড়ি পারাপার করার কথা। ঘাটের জন্য একটি রো রো ফেরির পন্টুন আনা হয়েছে। এ ঘাটে তিন থেকে চারটি কে টাইপ ফেরি চলাচল করার কথা ছিল।
বিআইডব্লিউটিসির বাণিজ্য বিভাগের পরিচালক আশিকুজ্জামান দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, যে চ্যানেল ব্যবহার করে সাত্তার মাদবর, –মঙ্গল মাঝির ঘাটে ফেরি চলাচল করবে, সে চ্যানেলে পলি জমে নদীর বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। তাই আপাতত ওই নৌপথে ফেরি চালানো হচ্ছে না। স্রোত কমে এলে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হবে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, ফেরি বন্ধ থাকায় মানুষ অনেক দুর্ভোগে আছে। রোগীদের পরিবহনে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এমন কথা অনেকেই জানান। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে নদীর নাব্যতা–সংকট ও স্রোত থাকায় ফেরি চালানো যাচ্ছে না।