
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেমা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারী বরাদ্ধের তথ্য গোপন করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কৃষকের জন্য সার বীজ, ফসলের প্রদর্শনী প্লটে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আর্থিক সহায়তার তথ্য গোপন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের সত্যতা যাচায়ের জন্য প্রকল্প সর্ম্পকে তথ্য চেয়েও পাওয়া যাচ্ছেনা ওই কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে। তথ্য অধিকার আইনকেও তোয়াক্কা করছেন না তিনি। সাংবাদিকরাও তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তার স্বেচ্ছাচারীতায় ।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানাযায়, দীর্ঘদিন যাবত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজস্ব প্রকল্প, ন্যাশনাল এগ্রিক্যালচারাল টেকনোলজী প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২), আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মশলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প এবং সাত জেলা প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প এ উপজেলায় চালু রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতয়ায় বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষকদের মাধ্যমে ফসলের প্রদর্শনী প্লট বাস্তবায়ন করছে উপজেলা কৃষি অফিস। কিন্তু এসব প্রদর্শনী প্লটে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প থেকে কি সহায়তা দেয়া হয়- তা কৃষকের কাছে স্পষ্ট নয়। কোন ফসলের কতটুকু জমির প্রদর্শনী প্লটে- কি পরিমান সার, বীজ বা অন্যান্য সহায়তা কৃষক পাবে সে সর্ম্পকে সুষ্পষ্ট তথ্য তাদের দেয়া হয়না বলে অভিযোগ কৃষকদের। নাম মাত্র কিছু বীজ সার দিয়ে দায় শেষ করেন কৃষি কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত প্রদর্শনী প্লটের অধিকাংশ খরচ বহন করতে হয় কৃষকেরই। এতে কৃষক তার প্রদর্শনীতে সরকারের দেয়া বরাদ্ধের কতটুকু পেলেন তাও বুঝার উপায় থাকেনা। এ কারণে উপজেলা কৃষি অফিসের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন কৃষকদের মাঝে।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসে চলমান প্রকল্প ও প্রদর্শনী প্লটের সংখ্যা, এ সকল প্রদর্শনী প্লটে কৃষকের জন্য সরকারে দেয়া সহায়তা সর্ম্পকে জানতে চেয়েও কোন তথ্য পাচ্ছেন না স্থানীয় সাংবাদিকরা। স্থানীয় সাংবাদিকরা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও এটিএন বাংলা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান পারভেজ, দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকা ও বাংলাভিশন টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি শহিদুজ্জমান খান, দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি রায়েজুল আলম, স্থানীয় সাপ্তাহিক আজকের শরীয়তপুর পত্রিকার সম্পাদক টিএম গোলাম মোস্তফাসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা ইসলাম এ উপজেলায় যোগদানের পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পে নামে বে নামে প্রদর্শনী প্লট দেখানো, বিভিন্ন প্রকল্পে মাঠ দিবস বাস্তবায়ন না করে ভূয়া বিল ভাউচার বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, প্রদর্শনী প্লটে কৃষকদের বরাদ্ধের তথ্য গোপন করে নামমাত্র সার বীজ দিয়ে আখের গুছিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কৃষক পর্যায়ে অভিযোগ পেয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রকল্প সর্ম্পকে জানার চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু রহস্য জনক করণে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোন ধরণের সহযোগীতা পাইনি। বাধ্য হয়ে একাধিকবার তথ্য প্রযুক্তি আইনে আবেদন করেছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা ইসলাম কোন আবেদনের উত্তর দেননি। তার স্বেচ্ছাচারিতা চরমে পৌঁছেছে। এত দিনে লক্ষ লক্ষ টাকার অনিয়ম দূর্নীতি প্রকাশ হওয়ায় ভয়ে তথ্য দিতে রাজি হচ্ছেন না তিনি। এসব অভিযোগ প্রমান হওয়ার ভয়ে তথ্য লুকিয়ে রাখার কৌশল নিয়েছেন তিনি। তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে দাবী সাংবাদিকদের। কৃষকদের স্বার্থে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভূক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা ইসলাম বলেন, তথ্য চেয়ে আবেদন আমার হাতে পাওযার পর উর্দ্ধতণ কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য পাঠিয়েছি। উর্দ্ধতণ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত কোন তথ্য আমার দেয়ার বিধান নেই। কৃষককে আগে তথ্য দিয়ে উপকরণ দিতে হবে এমন নির্দেশনা আমাদের নেই। যখন যা বরাদ্দ আসে আমরা তাদের মাঝে বিতরণ করে থাকি। অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। যদি কোন কৃষক করে থাকে ওই কৃষককে আমার অফিসে নিয়ে আসেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আল নাফিস বলেন, বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছি। তথ্য পাওয়ার অধিকার সকলের আছে। যদি অনিয়ম দূর্নীতি সর্ম্পকে কোন সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।