
শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মাহমুদপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইতালি প্রবাসী সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শাহ আলম। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের বর্তমান কোন কমিটিতে না থেকেও মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে তৃনমুলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। আজ দলীয় নেতাকর্মীরা শাহ আলমের মনোনয়ন বাতিলের দাবীতে বিক্ষোভ করেছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আগামী ১১ নভেম্বর শরীয়তপুর সদরের ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়ার লক্ষে গত ৩ অক্টোবর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা স্থানীয় দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা থেকে তৃনমুলের প্রার্থীদের নামের তালিকা রেজুলেশন করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠানো হয়। ওই তালিকায় মাহমুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের জন্য শাহ আলমের নাম ছিলনা। ১০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন। সেখানে সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে শাহ আলমের নাম রয়েছে।
শাহ আলম ইতালি প্রবাসী। তিনি বর্তমানে ইতালিতে রয়েছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলিন। তখন তিনি ওই নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি। ওই নির্বাচনের পর ২০১৭ সালে শাহ আলম ইতালিতে চলে যান। এর পর আর এলাকায় ফেরেননি। আওয়ামী লীগ থেকে ঘোষনা দেয়া প্রার্থী তালিকায় শাহ আলমের নাম দেখে তৃনমুলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্দ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনোনয়নের বিরোধীতা করেন। তারা মনোনয়ন প্রত্যাহারেরও দাবী জানান।
মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিতরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ শাহজাহান ঢালী, দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত লিয়াকত হোসেন হান্নান ঢালী, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সুমন ঢালী, হারুন খালাসী, মামুন খান প্রমূখ।
মাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান ঢালী বলেন, শাহ আলম ইতালি প্রবাসী, কোন দলীয় পদে নেই। তৃনমুল থেকে তার নামও প্রস্তাব করা হয়নি। তাহলে কিভাবে তিনি মনোনয়ন পেলেন? এভাবে ভৌতিক মনোনয়ন দিলে স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা হতাশ হন। আমরা চাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে কোন ত্যাগী নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হোক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেতে নিয়ম হলো, কারো পক্ষে মনোনয় ফরম যে কেউ সংগ্রহ করতে পারেন। কিন্তু যিনি প্রার্থী তিনি নিজে মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করবেন এবং নিজে জমা দিবেন এটা নিয়ম। এখন প্রশ্ন উঠেছে শাহ আলম মুন্সী প্রবাসে, তার দলীয় মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করলেন কে?
ইতালি থাকায় শাহ আলমের বক্তব্য নেয়া যায়নি। তার ভাগ্নে সোহেল রানা বলেন, আমার মামা ইতালিতে আছেন। দুই-এক দিনের মধ্যেই দেশে আসবেন। এ ছারা তিনি সবসময় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখেন ও আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকেন। দল তাকে যোগ্য মনে করেই মনোনয়ন দিয়েছেন।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত ৩ অক্টোবর সদর উপজেলা ও শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে তৃণমূল থেকে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামের তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে। সেই তালিকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখানে মাহমুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে শাহ আলম মুন্সীর নাম নেই। শাহ আলম বিদেশে বসে কীভাবে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, কে তার আবেদন পত্রে স্বাক্ষর করেছেন আর কিভাবেই তিনি মনোনয়ন পেলেন এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। তবে বিষয়টিতে অনেকেই হতবাক হয়েছেন।