
শরীয়তপুর সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাজিত মেম্বার প্রার্থী ও বিজয়ী মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বোমা বিস্ফোরণে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সংঘর্ষে তুলাসার ইউনিয়নের নৌকা মার্কার সমর্থক মেহেদী হাসান কোতোয়াল নামে একজনকে মারাত্মকভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। মেহেদী হাসান কোতোয়াল হলো তুলাসার ইউনিয়নের হারিছ কোতোয়ালের ছেলে।
রোববার (১৪ নভেম্বর) সকাল থেকে সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে পরাজিত মেম্বার প্রার্থী আ: মতিন ছৈয়াল ও বিজয়ী প্রার্থী আলি আজগার খানের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলাকালে এ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। দিনভর সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালসহ ঢাকা মেডিক্যাল ও বিভিন্ন ক্লিনিক এ ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে মেহেদী হাসান কোতোয়ালের ভাই কবির হোসেন কোতোয়াল বলেন, আমরা তুলাসার ইউনিয়নে নৌকা মার্কার সমর্থনে কাজ করেছি এবং বিজয় লাভ করেছি। আমাদের প্রতিপক্ষ ইউনুচ কোতোয়াল, শাহআলম ফকির ও রেজাউল ডোমসার ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে পরাজিত মেম্বার প্রার্থী আ: মতিন ছৈয়াল ও বিজয়ী প্রার্থী আলি আজগর খানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার ভাই মেহেদী হাসানকে আমাদের বাড়ির সংলগ্ন তেতুলিয়া প্রাইমারি স্কুলের সামনে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। সে এখন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছে। আমার ভাই মারামারি বন্ধের জন্য স্থানীয়দের আবেদন করলে, তাকেসহ রুবেল কোতোয়াল এবং এক মহিলাকেও আহত করা হয়। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে বর্তমান মেম্বার মতিন ছৈয়াল ও আলী আজগর খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে মতিন ছৈয়ালকে পরাজিত করে আলী আজগর খান বিজয় লাভ করেন। আলী আজগর খান বিজয়ী হওয়ার পর রোববার সকালে মতিন ছৈয়ালের এলাকায় গেলে সেখানে মতিন ছৈয়ালের লোকজনের সাথে আলি আজগর খানের লোকজনের বাকবিতন্ডা ও মারামারি হয়। এ খবর আলি আজগার খানের সমর্থকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও হাতবোমা নিয়ে সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুতি নেন। এদিকে মতিন ছৈয়ালের সমর্থকরাও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও হাতবোমা নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কীর্তিনাশা নদীর দুই পাড়ে দুই পক্ষের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করেন। মতিন ছৈয়ালের একটি গ্রুপ চরপালং স্কুল হয়ে নদীর পাড় দিয়ে আলী আজগর খানের লোকজনকে দাওয়া করলে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও বোমা বিস্ফোরণ। দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণে কীর্তিনাশা নদীর পাড় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে উভয়পক্ষের কম পক্ষে ১৫ জন আহত হোন। আহতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আলি আজগর খান বলেন, আমি নির্বাচনে জয় লাভ করে আমার ভোটারদের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে পরাজিত প্রার্থী মতিন ছৈয়ালের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের তিনজন লোক আহত হয়। খবর পেয়ে আমাদের লোকজন এগিয়ে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
পরাজিত প্রার্থী মতিন ছৈয়াল বলেন, আলী আজগর খান নির্বাচনে জিতে আমার ও আমার লোকজনের উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আমাদের প্রায় ১২ জন লোক আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন বলেন, গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মতিন ছৈয়ালের মামলার আলোকে মেম্বার আজগর খানের সমর্থকদের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। আজগর খানের পক্ষ থেকে কোন মামলা নেয়া হয়নি।