Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

শরীয়তপুরে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ইতালির স্বপ্নভঙ্গ, মাফিয়াদের নির্যাতনে গুরুতর আহত তিন তরুণ

শরীয়তপুরে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ইতালির স্বপ্নভঙ্গ, মাফিয়াদের নির্যাতনে গুরুতর আহত তিন তরুণ
রাকিব খান, আল-আমিন ফকির ও ফেরদাউস মাদবর ।

শরীয়তপুরে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ইতালির স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তিন তরুণের। ইতালিতে পাঠানোর প্রলোভন দিয়ে তাদের লিবিয়া নিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয় দালালরা। সেখানে ১১ মাস আটকে রেখে মাফিয়ারা তাদের নির্যাতন করে। পরে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

ভুক্তভোগীরা হলেন- শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের উত্তর ভাষানচর এলাকার ফেরদাউস মাদবর (২৫), আল-আমিন ফকির (২৩) ও নড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ নড়িয়া এলাকার রাকিব খান (২২)।

জানা যায়, ২০২২ সালের মার্চে লিবিয়া দিয়ে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে ফেরদাউস, আল-আমিন ও রাকিবের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয় স্থানীয় দালাল চক্রের সদস্য হাবিবুল ব্যাপারী ও তাঁর ছেলে ছলেমান ব্যাপারী।

পরে দালাল চক্র তাদের লিবিয়ার একটি স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে বাংলাদেশের আরও দুই দালাল মকবুল হোসেন ও মকুল তাদের ইতালি পাঠানোর কথা বলে আরও সাড়ে ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে দালাল চক্র তাদের মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

মাফিয়ারা তিন তরুণকে জিম্মি করে নির্যাতন করে আরও ১৫ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে। পরে মাফিয়া চক্রের সদস্য মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা তুহিন ও তাঁর সঙ্গীরা বাংলাদেশে তাদের পরিবারকে মোবাইলফোনের মাধ্যমে ভিডিও কল করে জিম্মিদশা ও নির্যাতনের দৃশ্য দেখান। তারপর তুহিনের মামী বাংলাদেশের মনিরা বেগমের মাধ্যমে মুক্তিপণের ১১ লাখ টাকা করে পরিশোধ করে তিনটি পরিবার।

মাফিয়া চক্র টাকা পেয়ে ওই তরুণদের লিবিয়ার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সেখানে দুই মাস তিন দিন থাকার পরে চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর ফেরদাউস, ২৯ নভেম্বর রাকিব ও আল-আমিন দেশে ফেরেন।

দেশে ফেরার পর তারা শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ভুক্তভোগীরা বলেন, দালালদের প্রলোভনে পড়ে আমরা ইতালিতে যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে আমরা ১১ মাস নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমরা দেশে ফিরে এসে উপযুক্ত শাস্তি চাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের ফকির বলেন, ভুল পথে দালালদের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে অসহায় তিনটি পরিবার জমি, বসতভিটা বিক্রি করেছে। তাছাড়া সুদ ও এনজিওর কাছ থেকে ঋণ এনে এখন পরিশোধ করতে পারছেন না। তাই দলালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারের সব অর্থ ফেরত দিতে হবে।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার একটি মামলা দায়ের করেছে। যারা দোষী তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই মামলায় অতিদ্রুত দোষীদের আদালতে বিচারের সম্মুখীন করব। জেনেশুনে কিন্তু ওই তরুণ-যুবকেরা দালাল ও বিভিন্ন প্রতারকের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এই লোভ–লালসা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। সুতরাং এই অবৈধ পথ পরিহার করে, অবশ্যই সঠিক পথে, সঠিক ভিসা নিয়ে, সঠিক এজেন্সি ও স্কিল নিয়ে কাজের জন্য বিদেশ গমন করতে হবে।’