Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025
শরীয়তপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা

ভেদরগঞ্জে কথিত ভূয়া ডা. মোহাব্বত আলমের ভূল চিকিৎসায় পঙ্গু হলো শিশু জুনায়েদ

ভেদরগঞ্জে কথিত ভূয়া ডা. মোহাব্বত আলমের ভূল চিকিৎসায় পঙ্গু হলো শিশু জুনায়েদ
ভেদরগঞ্জে কথিত ভূয়া ডা. মোহাব্বত আলমের ভূল চিকিৎসায় পঙ্গু হলো শিশু জুনায়েদ

ডাক্তার পরিচয়দানকারী এক ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন লালচান নামে এক ব্যক্তি। ২৭ অক্টোবর মঙ্গলবার শরীয়তপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল এ্যাক্ট এবং দন্ড বিধি আইন লঙ্ঘণের অপরাধ এনে এই মামলা করেন। ডা. পরিচয়দানকারী মোহাব্বত আলম আসলে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সাকমো) মাত্র। তিনি ভেদরগঞ্জ উপজেলার তারাবুনিয়া ২০ শয্যা হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। নানান অপকর্ম ও দুর্নীতির দায়ে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার তদন্ত করে শাস্তিমূলক বদলীও করেছেন কর্তৃপক্ষ। কোন কিছুতেই তার বেপরোয়া কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না।

মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট সখিপুর থানার পূর্ব বালাকান্দি গ্রামের লালচান বেপারীর ৩ বছর বয়সী ছেলে জুনায়েদ বাড়ির উঠানে খেলাধুলা করছিল। সেখানে পড়ে গিয়ে জুনায়েদ কোমড়ে ব্যথা পায়। তখন লালচান তার সন্তানকে দ্রুত ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার জরুরী বিভাগে দায়িত্বে থাকা সাকমো মোহাব্বত আলম তাদের সাথে ডাক্তার পরিচয়ে প্রথমে এক্স-রে করাতে বলে। পরবর্তীতে হাসপাতাল থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বালার বাজারের সালমা মেডিকেল কর্ণারে অসুস্থ জুনায়েদকে নিয়ে যেতে বলে। সেখানে ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে জুনায়েদের চিকিৎসার কাজ শুরু করেন ওই কথিত ডাক্তার। শিশুর ক্ষতস্থান চিহ্নিত না করে প্রথমে পায়ের হাটুর নিচ থেকে হাটুর উপর পর্যন্ত প্লাষ্টার করে। ১ মাস পরে সেই প্লাষ্টার খুললে শিশুটি আর উঠে দাড়াতে পারে না। তখন ভুয়া চিকিৎসক মোহাব্বত আলম জুনায়েদের বাবাকে বলে অনেক দিন বেঁধে রাখায় পায়ের ক্যালসিয়াম শুকিয়ে গেছে। তখন আবার ১ মাসের ক্যালসিয়াম ওষুধ লিখে দেয় সে। আরও একমাস ক্যালসিয়াম খাইয়ে শিশুটির কোন পরিবর্তন না হওয়ায় আবার কথিত সেই ডাক্তারের কাছে শিশুটিকে নিয়ে আসে। তখন কথিত ডাক্তার পরিচয়দানকারী মোহাব্বত আলম শিশুটিকে পাশ্ববর্তী চাঁদপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এদিকে ২ মাস অতিবাহিত হওয়ায় শিশুটি প্রায় পঙ্গু হয়ে যায়। শিশুটিকে চাঁদপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার দ্রুত ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। কোন উপায়ন্ত না দেখে ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায় লালমিয়া দম্পতি। সেখান থেকে ডাক্তার জানিয়েছে এই চিকিৎসার জন্য কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন।

বাদী তার বক্তব্যে বলেন, আমি একজন রাজমিস্ত্রী। কাজ করলে দিনে ৪০০ টাকা হাজিরা পাই। কোনরকম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলছিল। আমার ছেলে জুনায়েদ খেলতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পায়। আমি তাৎক্ষণিক ভেদরগঞ্জে হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে যাই। তখন মোহাব্বত আলম ডাক্তার পরিচয় দিয়ে আমাদের কাছে আসে। প্রথমে একটা কাগজ লিখে দিয়ে এক্স-রে করাতে বলে এবং পরে বালার বাজারের সালমা মেডিসিন কর্ণারে যেতে বলে। সেখানে ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে আমার ছেলের চিকিৎসা শুরু করে। পরে আরও ১০ হাজার টাকা নেয়। অথচ ক্ষত স্থান বাদ দিয়ে ভালো স্থানে প্লাষ্টার করে দুই মাস অতিবাহিত করে। এরমধ্যে আমার ছেলের পায় অচল হয়ে যায়। পরে কথি ডাক্তারের পরামর্শে ছেলেকে চাঁদপুর নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসক এক্স-রে করিয়ে দেখে ক্ষতস্থানের কোন চিকিৎসাই করা হয় নাই। পরবর্তীতে এই চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ছেলেকে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি ছেলের বর্তমানে যে অবস্থা তার চিকিৎসা করতে কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন। তারপরেও আমার ছেলে হাটতে পারবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই। বিষয়টি আমি কথিত ডাক্তার মোহাব্বত আলমকে জানালে আমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করে বলে, ‘এই বিষয়ে তার কোন দায়দায়িত্ব নাই’। তাই নিরুপায় হয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হই।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারী মাসে কথিত এই ডাক্তারের অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি উল্লেখ করে স্থানীয় দৈনিক রুদ্রবার্তা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রথমে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মেঘনাদ সাহা ও পরে সিভিল সার্জন দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি তদন্তকালে পত্রিকায় প্রকাশিত বিষয়ের সত্যতা পায়। সেই ভাবেই প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটি। ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক বদলিও করেছে তাকে।