বৃহস্পতিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
বৃহস্পতিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

গোসাইরহাটে দুই সন্তানের জন্য স্বামী সংসার ফিরে পেতে চায় গৃহবধু তাছলিমা

গোসাইরহাটে দুই সন্তানের জন্য স্বামী সংসার ফিরে পেতে চায় গৃহবধু তাছলিমা
গোসাইরহাটে দুই সন্তানের জন্য স্বামী সংসার ফিরে পেতে চায় গৃহবধু তাছলিমা

শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার চরমহিষকান্দি গ্রামের মৃত জুলমত মোল্যার মেয়ে গৃহবধু তাছলিমা (২৭) দুই পুত্র সন্তানের জন্য স্বামী সংসার ফিরে পেতে চায়। গোসাইরহাট উপজেলার শামন্তসার ইউনিয়নের বকসমপট্টি গ্রামের ছালাম হাওলাদারের ছেলে ফারুক হাওলাদারের সাথে গত আট বছর পূর্বে ২০১১ সালে প্রেম করে ঢাকায় হুজুর দিয়ে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাছলিমা সুখে-শান্তিতে বসবাস করে আসছিল। যার কারনে মোঃ তাওহীদ ইসলাম (৬) ও মোঃ তাছিন (৩) দুইটি পুত্র সন্তান তাদের ঘরে জন্ম নেয়। স্বামী ফারুক হাওলাদারের পিতা ছালাম হাওলাদার ও মা জলেখা বিবি নাতিদের কথা চিন্তা করে তাদেরকে গ্রামের বাড়িতে আসতে বললে, তারা গ্রামের বাড়ি চলে আসে। গৃহবধু তাছলিমা ঢাকাতে বিউটি পার্লারের ব্যবসা করতো, যার কারনে সংসারে অভাব অভিযোগ তাছলিমার ছিল না। শশুর-শাশুড়ী দেশের বাড়িতে আসতে বলায়, ঐ ব্যবসার সরঞ্জাম ও ঢাকার বাসাবাড়ির ফার্ণিচার আসবাবপত্র ৮ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেশের বাড়িতে চলে আসে। দেশের বাড়িতে এসে ঐ টাকা দিয়ে বেকার স্বামী ফারুক হাওলাদারকে শশুর-শাশুড়ীর কু-পরামর্শে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। স্বামী ফারুক হাওলাদার বিদেশ যাওয়ার পরপরই গৃহবধু তাছলিমার উপর নেমে আসে অমানসিক নির্যাতন। যে কারনে গৃহবধু তাছলিমা পিতার বাড়িতে চলে যায় এ নির্যাতন থেকে একটু রেহাই পাওয়ার জন্য। নির্যাতন থেকে বাচতে পিতার বাড়িতে যাওয়াটাও তার অন্যায় বলে ধরে নিয়েছে স্বামী ও শশুর-শাশুড়ীরা। এজন্য স্বামী ফারুক হাওলাদারও বিদেশ থেকে স্ত্রীর কথা যাচাই ও বিবেচনা না করে সকল ধরনের যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। এরপর তাছলিমা আবার স্বামীর বাড়িতে চলে আসলে শশুর-শাশুড়ী, দেবররা তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। গৃহবধু তাছলিমা আইনকে শ্রদ্ধা করে বারবার থানায়, ইউনিয়নে সালিশ দরবার করে স্বামীর সংসারে ফিরে যায়। কিন্তু কিছুতেই স্বামীবিহীন সংসারে তাছলিমার শান্তি ফিরে আসে না। একই ধরনের অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। তখন স্বামীর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও তাছলিমা স্বামীর সাথে যোগাযোগ করতে পারে নাই। হঠাৎ স্বামী ফারুক হাওলাদার তাছলিমাকে দেশে ফিরে এসে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়। গৃহবধু তাছলিমা স্বামীর ডিভোর্স লেটার পেয়ে অবাক হয়ে যান। কারন, স্বামীর জন্য এতকিছু করার পরও স্বামী কেন তাকে ডিভোর্স দিল এটা মেনে নিতে তার কষ্ট হচ্ছে। এজন্য নারী ও শিশু কোর্টে স্বামী ফারুক হাওলাদারকে প্রধান আসামী করে শশুর-শাশুড়ী ও দেবরদের নামে একটি মামলা দায়ের করে গৃহবধু তাছলিমা। স্বামী সংসার ফিরে পেতে তাছলিমা বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছে কিন্তু কোনখানেই সমাধান পায়নি। অবশেষে নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচারের আশায় মামলা করেছে তাছলিমা। এখন তাছলিমার প্রশ্ন হলো, আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল তার দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে স্বামী সংসার ফিরিয়ে দিতে পারবে তো? এ উপলক্ষ্যে তাছলিমা বলেন, সালিশ দরবার করে মুরব্বীরা আমাকে দশ লক্ষ ও বিশ লক্ষ টাকা অফার দিয়ে স্বামী সংসার ত্যাগ করতে বলে, তখন আমি বলি, আমার দুই পুত্র সন্তান আছে। ওদের নিয়ে আমি কোথায় যাব? কি করবো? টাকার লোভ থাকলে তো বিউটি পার্লার ও ঢাকার সুখের আসবাবপত্র ছেড়ে স্বামী সংসার ও শশুর-শাশুড়ীর বাড়ি পা রাখতাম না। আমার থেকে স্বামী আর শশুর-শাশুড়ী কি চায়? আমি তো আমার সহায় সম্বল টাকা পয়সা সব তাদেরকে দিয়ে দিয়েছি। আমার সবকিছু নিয়ে আমাকে এত নির্যাতন করার কারন কি? আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই ও স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার করতে চাই।
এ বিষয়ে স্বামী ফারুক হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তাকে পলাতক পাওয়া যায়। শশুরের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
এরপর ফারুক হাওলাদারদের স্থানীয় শামন্তসার ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল কাদেরকে পাওয়া গেলে তিনি বলেন, আমরা সবকিছুই জানি। তাছলিমা নামের এই মেয়েটির উপর ফারুকের বাব-মা ও ভাইরা অমানবিক নির্যাতন চালাইত। ফারুক বিদেশ যাওয়ার পর মেয়েটিকে মারধর ও অমানবিক নির্যাতন করতো। আমরা একাধিকবার মিলিয়ে দিয়েছি। ফারুকের বাবার নিকট মেয়েটিকে ও সন্তানগুলিকে উঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। এজন্য আমরা আর কি করবো? মেয়েটিকে বলেছি, তুমি আইনের আশ্রয় নেও। ওখানেই সুষ্ঠু বিচার পাইবা।
স্থানীয় শামন্তসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বেপারীর নিকট তাছলিমা ও ফারুকের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, ওদের বিষয়ে অনেক দরবার হয়েছে। আমরা মিলিয়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, আসলে শশুর-শাশুড়ীর ঐ খারাপ সংসারে ঐ মেয়েটির শান্তি হবে না। মেয়েটির জন্য সন্তানের কথা চিন্তা করে মায়া হয়। কিন্তু আমরা কি করবো? আইন তো আর নিজের হাতে তুলে নিতে পারি না! এজন্য শুনেছি, তাছলিমা মামলাও করেছে। শশুরকে জেলও খাটিয়েছে। ফারুক পলাতক আছে। আইনে যা সমাধান করে মেয়েটির জন্য, তাই হবে।
গৃহবধু তাছলিমার চাচা নজর আলী মোল্লা বলেন, তাছলিমা আমাদের না জানিয়ে ঢাকাতে ফারুককে বিয়ে করে। দুইটি সন্তানও আছে। বিয়ের কাগজপত্র চাইলে ওরা দেখাতে পারে না। দরবারে মাদবররা বিয়ের রেজিষ্ট্রি কাগজ চাইলে দিতে পারেনি। শুধু ওরা কয়, আমরা ঢাকাতে একা বিয়ে করি। একজন হুজুর খাতায় কি জানি লিখে আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দেয়। আট বছর সংসার করেছে। সরকারি খাতায় নাম নেই। অথচ দুই সন্তানের পিতা হয়েছে ফারুক। শুনেছি ডিভোর্স দিয়েছে তাছলিমাকে। বিয়ের প্রমাণ নেই অথচ ডিভোর্স দিয়েছে এটা হাস্যকর নয় কি? আসলে আমাদের মেয়েকে সহজ-সরল পেয়ে রেজিস্ট্রিবিহীন বিয়ে করে ফারুক মস্ত বড় অন্যায় করেছে। আইনের কাছে ওদের বৈধতা কিভাবে মিলবে আমার বুঝে আসতেছে না। এখন আইনের নিকট আমাদের দাবী ফারুককে আইনে আওতায় এনে সমাজের নিকট, রাষ্ট্রের নিকট বৈধ করে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে ভালো ও শান্তিপূর্ণভাবে সংসার করার জন্য আদেশ দেওয়ার অনুরোধ জ্ঞাপন করছি।
এছাড়া ইদিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার শিকারী ও গোসাইরহাট থানা এসআই আব্দুস সালাম মুঠোফোনে বলেন, আমরা তাছলিমা ও ফারুক হাওলাদারের পরিবারকে মিলিয়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।


error: Content is protected !!