বৃহস্পতিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
বৃহস্পতিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

মামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এক অসহায় মা!

মামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এক অসহায় মা!

একটি মামলায় প্রতিবন্ধী ছেলের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত। তাই ছেলেকে বাঁচাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অসহায় এক মা। এখন ওই মা নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু কোথাও কোন সমাধান পাচ্ছেন না। অবশেষে সাংবাদিকদের স্মরনাপন্ন হয়েছেন তিনি।

জানাগেছে, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের কেচুয়ারচর গ্রামের মৃত ছমেদ সরদারের ছেলে প্রতিবন্ধী বাবুল সরদারের (৪৫) বিরুদ্ধে একই গ্রামের নাসির ঢালীর মেয়ে সুমি আক্তার ২০১২ সালের ৪ মে গোসাইরহাট থানায় একটি ধর্ষণ মাললা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয় ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল সন্ধ্যার পরে কর্মচারী ফরহাদের সাথে বিয়ের কথা পাকাপাকি করার জন্য বাবুল সরদার সুমিকে ফোন করে তাদের বাড়ি যেতে বলেন। বাবুলের কথায় বিশ্বাস করে সুমি বাবুলের বাড়িতে গিয়ে ফরদাহকে দেখতে পান এবং জানতে পারেন বাবুলের স্ত্রী বাড়ি নাই। আলাপ আলোচনা শেষে পরবর্তী শুক্রবার ফরহাদ ও সুমির বিয়ের দিন ধার্য করেন বাবুল। পরে বাবুল ইশারায় ফরহাদকে চলে যেতে বলেন। ফরহাদ চলে যাওয়ার পর বাবুল সুমিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনার ১২ দিন পর সুমি বাবুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ফরহাদের বিরুদ্ধে বাবুলকে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ এনে গোসাইরহাট থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ বাবুলকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে আসামী জামিনে বের হন। পরে পুলিশ আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করে আদালতে চার্জশীট দায়িখল করেন। শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা নং ৭৭/১২। আসামী ফরহাদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ প্রমাণ না পাওয়ায় আদালত ফরহাদকে মামলা থেকে খালাস প্রদান করেন। মামলাটি আদালতে দীর্ঘদিন বিচারাধীন থাকার পর গত ২ জুলাই মামলার আসামী বাবুল সরদারের অনুপস্তিতিতে তাকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন আদালত।

আসামী বাবুল সরদারের মা মমতাজ বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের ফাঁসানোর জন্য ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। এই মিথ্যা মামলায় তার ছেলেকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে আদালত।
মমতাজ বেগম আরো বলেন, দীর্ঘদিন যাবত জায়গা জমি নিয়ে এলাকার কিছু মানুষের সাথে আমার বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিক সালিশ দরবার হয়েছে এবং আদালতে মামলা মোকদ্দমা চলছে। যাদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ তারাই এলাকার এক মেয়েকে দিয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়েছে। সেই মিথ্যা মামলায় আমার ছেলের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে আদালত। যে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে আমি এখন সেই জমি চাই না। সব জমি আমি সরকারকে দান করে দিবো। তবুও আমি আমার ছেলেকে বাঁচাতে চাই, আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানার জন্য সরেজমিন গিয়ে স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে অনেকেই জানান তারা ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না। প্রতিবেশীরাও ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটছে কিনা তা বলতে পারেন না। অনেকেই বলেন, তারা শুনেছেন সুমি নামের একটি মেয়ে প্রতিবন্ধী বাবুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা তা বলতে পারেন না অথবা ঘটনা কেউ দেখেছে কিনা এ ধরণের কোন লোকজনকেও খুজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে প্রতিবেশী আবুল কালাম শিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা আমরা জানিনা। আমরা শুনেছি বাবুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে। কিন্তু আমরা কেউ ঘটনা দেখি নাই।

সালাম সরদার বলেন, আমি শুনেছি বাবুলের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষন মামলা হয়েছে। কিন্তু এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেছে তা আমরা জানিনা এবং শুনিও নাই।

আব্দুল গণি বিশ্বাস বলেন, বাবুল একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। স্বাধীনের সময় তার পা পুড়ে পঙ্গু হয়ে যায়। বাবুল এ ধরণের কাজ করবে বলে আমার মনে হয়না। আর এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়, জানা জানি হয়। কিন্তু এ ঘটনা এলাকার কেউ জানে না এবং দেখেওনি।

সুলতান সরদার বলেন, বাবুল একজন পঙ্গু মানুষ। আমার বিশ্বাস হয়না বাবুল এ ধরনের কোন কাজ করতে পারে। এখন শুনি বাবুলের বিরুদ্ধে আদালত যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটা অত্যন্ত দূঃখজনক।

আমির হোসেন বলেন, এলাকার কেউ তাদের ধরেও নাই কেউ দেখেও নাই। কিছুদিন পর শুনি বাবুলের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। আসলে এটা আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়না।

এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী সুমির বাড়িতে গিয়ে সুমিকে পাওয়া যায়নি। সুমির বাবা ইউনুছ ঢালীকেও বাড়িতে পাওয়া যায়নি। সুমির ভাই জানন, সুমি তার শশুড় বাড়ি রয়েছেন।

আসামী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. রাশেদা মির্জা বলেন, দীর্ঘদিন মামলাটি আদালতে চলমান ছিলো। পরবর্তীতে স্বাক্ষগ্রহণের সময় আসামী উপস্থিত না হওয়ায় আমরা জেরা করার সুযোগ পাইনি। রায়ের দিন আসামী অনুস্থিত থাকায় বিজ্ঞ আদালত আসামীকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি অ্যাড. মির্জা হজরত আলী বলেন, আসামীরা জামিনে গিয়ে পলাতক ছিলো। আদালতে যখন স্বাক্ষী প্রমান শুরু হয় তখন আসামী আদালতে হাজির হননি। আসামী পলাতক থাকার কারণে জেরা করাও হয় নাই। স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামীর অনুপস্থিতিতে আদালত যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তুষ্ট।


error: Content is protected !!