
অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) কাজ বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায়। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসূচিতে শ্রমিক সংখ্যাসহ সংশ্লিষ্টদের নামসহ তালিকা সাঁটানো নেই কাজের স্থানে। যার ফলে এর সুফল থেকে বঞ্চিত শ্রমিকসহ স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) থেকে বিগত এক সপ্তাহে এমন চিত্র দেখা গেছে গোসাইরহাটের ইজিপিপি কর্মসূচিতে।
গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে ইজিপিপি কর্মসূচির তালিকা চাইলে তিনি বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করেন। পরে জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া ইজিপিপির তালিকায় দেখা যায়, গোসাইরহাটের ৮টি ইউনিয়নের ১৮ টি ওয়ার্ডে মোট শ্রমিক ৫৯২ কাজ করার কথা। এসব শ্রমিকরা ৪০ দিন কাজ করে প্রতিদিন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ টাকা রোজগার করার কথা। ৪০ দিনে মোট পাওয়ার কথা ৯৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা। কিন্তু ইউনিয়নগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কুচাইপট্টি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের চর মাইজারী শহিদুল্লাহ গাজীর বাড়ি থেকে নাসির মৃধার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার কাজে সোমবার (১৮ ডিসেম্বর ) ২৮ জনের বিপরীতে ১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। ওই প্রকল্পের শ্রমিক সরদার ইয়াকুব আলী বলেন, স্থানীয় মেম্বার খলিল মালের নির্দেশে আমরা ১০ জন কাজ করি। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের ৫ নং ও ৮ নং দুটি ওয়ার্ডে দেখা যায় একই চিত্র। এভাবে প্রত্যেকটি ইউনিয়নেই শ্রমিক সংখ্যা অর্ধেকের চেয়েও কম। নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ভদ্রচাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে জাহাঙ্গীর ফকিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, ৩৭ জন শ্রমিকের মধ্যে ৮ জন কাজ করছেন। ওই প্রকল্পের সরদার হেলাল উদ্দিন খান বলেন, কোনোদিন ১২ জন, কোনোদিন ৮ জন কাজ করি। আমরা লেবার মানুষ কতজন কাজ করার কথা এটা আমাদের চেয়ে মেম্বার ভালো জানে। তবে এ ব্যাপারে ওই প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় মেম্বার বলেন, ২০ থেকে ২৫ জন রোজ কাজে হাজির হন। একই ইউনিয়নের ৪ নং ও ১ নং ওয়ার্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রকল্পে ২৫ জনের মধ্যে ৮ জনকে কাজ করতে দেখা যায়। ওই প্রকল্পের শ্রমিকেরা বলেন, তারা শুরু থেকেই ৯/১০ জন কাজ করে আসছেন।এছাড়াও উপজেলার সামন্তসার, গোসাইরহাট, আলাওলপুর, কোদালপুর, নলমুড়ি, ইদিলপুরসহ সবকটি ইউনিয়নে ৪০ দিনের কর্মসূচিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
এসব কর্মসূচির প্রকল্প তালিকায় দরিদ্র ব্যক্তিদের নাম থাকলেও বাস্তবে কাজ করানো হচ্ছে বাইরের শ্রমিক দ্বারা। এতে প্রকল্পের বরাদ্দের বড় একটি অংশের ভাগ দিতে হয় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরকে। তাই গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তদারকি না থাকায় ও কাজ দেখ ভাল না করার অভাবে কর্মসৃজন এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশয় দেখা দিয়েছে।এভাবে নানা অনিয়মের কারণে কাজের বিনিময়ে টাকা দিয়ে মঙ্গাকালীন কর্মহীন দুঃস্থ, অসহায় মানুষকে সহযোগীতা করার লক্ষ্যে সৃষ্ট সরকারি প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মেম্বার, চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একে অপরকে দোষারোপ করে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রকৃত দরিদ্ররা ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
এ ব্যাপারে গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: ইকবাল কবির বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে কিছু কাজে অনিয়ম পেয়েছি। সবগুলো ইউনিয়নে এখনো যাওয়া সম্ভব হয় নি। তারপরও প্রকল্পে অনুপস্থিত শ্রমিকের বিপরীতে কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হবে না।
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা জান্নাত তাহেরা বলেন, কোনো অনিয়ম বা কারো কোনো গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।