
শরীয়তপুরে কৃষি ও কৃষক উন্নয়নের টাকায় কৃষি কর্মকর্তার পকেট ভারী হয়েছে বলে অভিযোাগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে অনুসন্ধান করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। উপজেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা টাকা বিতরনে অনিয়মের কথা স্বীকার করলেও জেলা কর্মকর্তা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন সরক্ষণ ও বিতরণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় জেলায় ১১৬টি প্রদর্শনী প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে কৃষি জমিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারী সার-বীজের সরবরাহের পাশাপাশি আন্তঃপরিচর্যার জন্য নগদ টাকার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
সুবিধাভোগী কৃষক পর্যায়ে অনুসন্ধান করে জানাযায়, কৃষক বরাদ্দের তুলনায় নামমাত্র সার-বীজ পেয়েছে কিন্তু কোন নগদ টাকা পায়নি। অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদর্শনী প্রকল্প দেয়ার কথা বলে জমি অনাবাদী রেখেছে। এক পর্যায়ে ওই কৃষকের বরাদ্দ অন্য কৃষককে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রেও প্রত্যারিত হয়েছে কৃষক।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের চর নিয়ামতপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাইর সাথে আলাপ কালে জানাায়, সে ২০ শতাংশ জমিতে কালোজিরা গবেষণার জন্য প্রদর্শনী প্রকল্প করেছে। আংগারিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএও) প্রদীপ কুমার সিকদার ভাষানচর ব্লকের দায়িত্বে আছেন। সেই কর্মকর্তা কৃষক আব্দুল হাইকে ২০ থেকে ২২ কেজি বিভিন্ন প্রকারের সার দিয়েছে। সাথে ছাইয়ের মতো দেখতে ২৫ কেজি ওজনের এক বস্তা দিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় সেই সার কম ছিল তাই নিজ উদ্যোগে সার ক্রয় করে জমিতে দিয়েছেন তিনি। আশানুরূপ ফলন পাননি তিনি। কৃষি কর্মকর্তা আর কোন খোঁজ খবরও রাখেনি। কৃষি অফিস থেকে জানাযায, এ কৃষকের নামে ৫০ শতাংশ জমিতে কালোজিরা চাষ দেখানো হয়েছে। বীজ- ১.৫ কেজি , ইউরিয়া-৩০ কেজি, টিএসপি-৩০, পটাশ-২০ কেজি, জিপসাম-১৭ কেজি, জিংক-৩ কেজি, বোরন-১ বস্তা, বালাই নাশক-২০০ গ্রাম বরাদ্দ দিয়েছে। আন্তঃপরিচর্যার জন্য ২ হাজার ৫০০ নগদ টাকা ও প্রায় ৮০ কেজি সার প্রতি কৃষকের বরাদ্দ থেকে চলে গেছে। তাহলে একটা প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ১১৬ জন কৃষকের কাছ থেকে কত টাকা চলে গেছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরসেনসাস বালাকান্দি ব্লকের কৃষক মো. আলী মালের সাথে কথা হয়। তিনি জানায়, মুনতাসীর মামুন নামে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাকে প্রদর্শনী দেয়ার কথা বলে শেষ পর্যন্ত দেয়নি। তার ৫০ শতাংশ জমি অনাবাদি রয়েছে। অথচ দেখা গেছে মো. আলী মালের নামেও সার-বীজ ও নগদ অর্থ বিতরণ দেখানো হয়েছে। কথা হয়েছে ডিএম খালীর চরচান্দা ব্লকের কৃষক ফারুক মাঝির সাথে। তিনিও জানায় তার জমিতে একটা প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। সে অপর্যাপ্ত সার-বীজ পেয়েছে কিন্তু কোন নগদ টাকা পায়নি সে।
এ বিষয়ে কথা হয় সদর উপজেলার ভাষানচর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সিকদারের সাথে। উপজেলা অফিস থেকে আমাদের যে সার-বীজ দেয়া হয়েছে তাই আমরা কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করেছি। এ প্রকল্পে কৃষকের জন্য নগদ টাকার বরাদ্দ ছিল তাও আমি জানতাম না। উপজেলা অফিস থেকে কৃষকের জন্য কোন নগদ টাকা দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কথা হয় শরীয়তপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন এর সাথে। প্রথমেই তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেছে?’ পরে তিনি বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। আমার পূর্ববর্তী কর্মকর্তা কি করেছে তা বলতে পারব না।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ মুহম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের অনেক অডিট ও অপ্রাসঙ্গিক সমস্যা ফেস করতে হয়। সেই জন্য আংশিক টাকা রেখে অপর টাকা উপ-সহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে পৌছে দিয়েছি। আমরা শতভাগ সঠিক কাজ করতে পারিনা তবে আমার কাজে স্বচ্ছতা আছে।
কথা হয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ী) উপ-পরিচালক মো. রিফাতুল হোসাইন এর সাথে। আন্তঃপরিচর্যার জন্য নগদ টাকা বরাদ্দের কথা শুনে তিনি প্রথমে অবাক হন। পরে তিনি ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে ফোনে আলাপ করে টাকার বিষয়ে নিশ্চিত হন। তখন তিনি বলেন, প্রকল্পের টাকা বিতরনে যদি কোন অনিয়ম থাকে তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।