
শরীয়তপুরে ধেয়ে আসছে বন্যার পানি। দ্রুতগতিতে তলিয়ে যাচ্ছে নিন্মঞ্চল। জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহ সদর উপজেলাতে ও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। সদর উপজেলার ২ কিঃমিঃ দূরে ডোমসার, তুলাসার ইউনিয়ের অনেক রাস্তা তলিয়ে বাড়ির উঠানে পানি চলে এসেছে। পাট তলিয়ে যাওয়ায়, কৃষকরা পাট নিয়ে পড়েছে বিপাকে। ৭শত টাকা মুজুরি দিয়েও মিলছেনা মুজুর।
এদিকে জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের জিরো পয়েন্টে পদ্মা নদীর পার ভাঙতে শুরু করেছে।
পদ্মা নদীর পানি বেড়ে সোমবার (২২ জুলাই) জোয়াড়ের সময় সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদ সিমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
জেলার জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের জিরো পয়েন্টে পদ্মা নদীর পার ভাঙতে শুরু করেছে। এরমধ্যে উকিল উদ্দিন মুন্সীরকান্দি গ্রামের ভাঙনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
গত ছয় দিনের ব্যবধানে পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে ওই গ্রামের ১৫ বিঘা ফসলি জমি। ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে ১০টি পরিবার।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নড়িয়া-ঢাকা ভায়া জাজিরা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই সড়কের পাচুখারকান্দি এলাকায় বিকল্প সড়ক ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। পদ্মায় স্রোত বাড়ায় নড়িয়ার নওপাড়ার মুন্সিকান্দি গ্রামে অস্থায়ীভাবে তীররক্ষা কাজের ১০০ মিটার অংশ ধসে গেছে।
পানি বৃদ্ধির কারণে নড়িয়ার মোক্তারেরচর, চরআত্রা, নওপাড়া, জাজিরার বিলাশপুর, বড়কান্দি, পালেরচর, ভেদরগঞ্জের কাঁচিকাটা এবং তারাবুনিয়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এসব এলাকার ফসলি জমি, কাঁচা-পাকা সড়ক ও বসত বাড়ির উঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। নড়িয়া-জাজিরা সড়কের শেহের আলী মাদবরকান্দি, পাচুখারকান্দি এলাকায় পানি উঠেছে। ওই সড়কের পাচুখারকান্দি এলাকায় একটি সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য তৈরি বিকল্প সড়কটি ভেঙে গেছে। ফলে ওই সড়কে গত বৃহস্পতিবার থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানি ঢুকেছে লোকালয়ে।
এ ছাড়া ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৬টি ও জাজিরা উপজেলার ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের মাঠে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
ঢাকা-শরীয়তপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর ডুবুলদিয়া নামক স্থানে নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশের বিকল্প সড়কটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এই সড়কের জাজিরার কাজীরহাট থেকে মঙ্গলমাঝির ঘাট পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে নড়িয়া-জাজিরা ও নড়িয়া বিলাশপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠে খানাখন্দ হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এসব রুটে চলাচলকারী স্কুল কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীসহ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। অপরদিকে নড়িয়া উপজেলার নশাসন মালতকান্দি দেলোয়ার হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৬টি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় ও মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
নওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ আজগর সোহেল মুন্সি বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে তীব্র স্রোত। ফলে ভাঙন রোধে নদীর তীরে ফেলা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ তলিয়ে যাচ্ছে। অন্তত ১০০ মিটার এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। বালুর বস্তা তলিয়ে যাওয়ায় ফসলি জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মাছের ঘের তলিয়ে গিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গরু-ছাগলের খাদ্য সঙ্কটে শিশু খাদ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, নদীতে পানি বাড়ায় প্রকল্প এলাকার বেশ কিছু স্থানে তীর তলিয়ে গেছে। ওইসব স্থানে কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। আর তীব্র স্রোত থাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে সমস্যা হচ্ছে। যেখানে সমস্যা হচ্ছে সেখানেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার শরিফুল আলম বলেন, পানি কমে গেলে কাজির হাট-মঙ্গলমাঝির ঘাট বিকল্প রাস্তাটি মেরামত করে এ রুটে সরাসরি যানবাহন চলাচলের ব্যস্থা করা হবে।