
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার সময় আট ব্যক্তিকে আটক করেন উপজেলা ভূমি কার্যালযের সহকারি কমিশনার । ভ্রাম্যমান আদালতের ওই নির্বাহী ম্যাজিষ্টেটকে অবরুদ্ধ করে আটক পাঁচ আসামীকে ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে নড়িয়া উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, নড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যনের স্বামী মোস্তফা সিকদারে বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ এ সময় মোস্তফা শিকদারের ভাই সুমন সিকদার সহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। আটক অপর দুইজন হলেন, বরগুনা সদর উপজেলার পাতাঘাটা এলাকার মের্জেলী খানের ছেলে আলী হোসেন খান (৩৬) ও পটুয়াখালী সদর উপজেলার গলাচিপা এলাকার রাসেল ফকির (২৮) । নড়িয়া থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, নড়িয়ার পদ্মা নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিলেন উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সিকদার। তিনি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা আক্তারের স্বামী। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট ও নড়িয়া উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার রাশেদুজ্জামান ওই খননযন্ত্রটি জব্দ করেন। সেখানে বালু উত্তোলনে জরিত আট ব্যক্তিকে আটক করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামীদের নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের দল নড়িয়া লঞ্চঘাট এলাকায় পৌছলে মোস্তাফা সিকদার ও তার ভাই সুমন সিকদারের নেতৃত্বে তার সমর্থরা ভ্রাম্যমান আদালতের ওই দলকে অবরুদ্ধ করে পাঁচ আসামীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট মোস্তফা সিকদারকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলে সে দৌঁড়ে পালায়। তখন পুলিশ তার ভাই সুমন সিকদারকে আটক করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ভাঙন ঠেকাতে নড়িয়া লঞ্চঘাট এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ওই ঠিকাদারি কাজটি করছেন মোস্তফা সিকদার। তিনি ওই কাজে ব্যবহারের বালু অবৈধভাবে পদ্মা নদী থেকে উত্তোলন করছিলেন। মোস্তফা সিকদারের সাথে মুঠোফোনে আলাপ করলে জানান, ভাঙন ঠেকাতে নড়িয়া লঞ্চঘাট এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ভরার জন্য পদ্মার মাঝ নদীতে খননযন্ত্র¿ সেট করার কাজ চলছিলো বালু ভরাট কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অনুমতির জন্য শরীয়তপুর আবেদন নিয়ে যাচ্ছিলাম পথি মধ্যে মোবাইল ফোনে শুনি আমার লেবারদের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমি নড়িয়া ফেরত চলে যাই। আমি নড়িয়া গিয়ে শুনতে পাই লেবারদের আটকরে কথা শুনেই স্থানীয় লোকজন জড়োহয় তখনই লেবাররা ছুটে যেতে সক্ষম হয়। মোস্তফা সিকদারের স্ত্রী নড়িয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্বামী অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে যুক্ত নয়। তিনি নড়িয়া লঞ্চঘাট এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ করছেন। তখন সেখানে হৈচৈ দেখে এগিয়ে যান। ওই সময় এসিল্যান্ড তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলে সে দৌঁড়ে পালায়। নিবার্হী ম্যাজিষ্টেট ও উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার রাশেদুজ্জামান বলেন, নড়িয়ায় পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করার সময় একটি খনন যন্ত্র জব্দ করি। এ কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটজনকে আটক করি। স্থানীয় এ আওয়ামী লীগ নেতা ওই খনন যন্ত্র ও আটক ব্যক্তিদের ছিনিয়ে নেয়। তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে মামলা করা হবে। মোস্তফা শিকদার ও তার ভাই সুমন শিকদারের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা ও পরে অবরুদ্ধ করে আসামীদের ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় মোস্তফা শিকদারের ভাই সুমন শিকদারকে আটক করা হয়েছে। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মঞ্জুরুল হক আকন্দ বলেন, সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আর ওই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, পদ্মা নদীর অবৈধ ড্রেজার উচ্ছেদে মোবাইল কোর্ট নিয়মিত পরিচালিত হয়ে আসছে। অবৈধ ড্রেজার উচ্ছেদ পরিচালার সাথে জড়িত দোষি ব্যাক্তিদের আইনের আওতায় আনার প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থাগ্রহনের জন্য নড়িয়ায় নিবার্হী ম্যাজিষ্টেট ও উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার রাশেদুজ্জামান অভিযান চালায়।