
শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলার রাজ নগর পুনাইখার কান্দি গ্রামে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ফকিরের পড়া আটার রুটি খেয়ে কলি আক্তার নামে এক কলেজ ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওই গ্রামের দেলোয়ার বেপারির ঘরের স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য তাকে রুটি খাওয়ানো হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুনাইখার কান্দি গ্রামের দেলোয়ার বেপারির ঘর থেকে গত ৪ অক্টোবর একটি সোনার চেইন ও কিছু অলংকার হারিয়ে যায়। এটি উদ্ধার ও চোর শনাক্ত করার জন্য তার শ্বশুর কালকিনি উপজেলার আব্দুল হাই বেপারি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের নলকোনা গ্রামের ফকির আবদুর রাজ্জাকের কাছে যান। তিনি গত সোমবার আব্দুল হাই বেপারিকে চার কেজি আটা পড়ে দিয়ে সেগুলোর সাহায্যে রুটি তৈরি করে যাদের সন্দেহ হয়, তাদের খাওয়াতে বলেন। তিনি আব্দুল হাই বেপারিকে আরও বলেন, যে স্বর্ণ চুরি করেছে, সে রুটি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
আব্দুল হাই বেপারি তার জামাই বাড়ি ফিরে এসে মঙ্গলবার সকালে গ্রামের কিছু মাদবরদের সম্মুখে কিছু লোককে ‘রুটি পড়া’ খাওয়ার জন্য তাঁর জামাতা বাড়িতে তার মেয়েকে দিয়ে ডেকে আনেন। তাঁর মেয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন ব্যক্তি এলে তাদের ওই রুটি খাওয়ানো হয়। রুটি খাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে কলেজ ছাত্রী কলি আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ হওয়ার পর কলি আক্তারকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কলি আক্তার অচেতন হয়ে শয্যায় পড়ে আছে। চিকিৎসকেরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ কলি আক্তারের ভাই পুনাইখার কান্দি গ্রামের সাগর বেপারি বলেন, ‘বাড়ি থেকে স্বর্ণ হারিয়ে যাওয়ায় আমার চাচি রানী বেগম ও তার বাবা আব্দুল হাই বেপারি আমাদের ফকিরের দেওয়া রুটি পড়া খাওয়াইছে। একটা অন্য কালারের রুটি ছিলো সেই রুটিটি আমার কলেজ পড়ুয়া বোনকে দেয়া হয়, সে ওই রুটিটি না খেতে চাইলে তাকে স্থানীয় মাদবরসহ সবাই জোড় করে ওই রুটি খাওয়ায়। সে আরেকটা রুটি খেতে চাইলে আমার চাচি রানী বেগম বলেন, যাকে যেই রুটিটি দেওয়া হয়েছে তাকে সেই রুটিটিই খেতে হবে। রুটিটি খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে আমার বোন কলি আক্তার।’
স্থানীয় সালিশ মো: নুরুল ইসলাম মাদবর বলেন, আমাদের সামনেই ফকিরের রুটি পড়া সবাইকে খেতে দেয়, কলি আক্তারকে যে রুটিটি খেতে দেয় সেটা একটু অন্য রংয়ের ছিলো, সে প্রথমে মুখে দিলে এটা তিতে লাগাতে সে এটা খেতে চায় নাই, তখন রানী বেগম বলেন যাকে যেটা খেতে দিছি তাকে সেটাই খেতে হবে, তখন আমরা কলিকে সেই রুটিটিই খেতে বলি। কলি আমাদের ভয়ে সেই রুটিটি পুরো খেয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই কলি অসুস্থ হয়ে পড়ে।
স্থানীয় অনেকে বলেন, এই স্বর্ণ অলংকার তারাই চুরি করে অন্যের উপর দোষ চাপানোর জন্য এ সব নাটক করেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। সামনে যেন এমন কাজ আর কেউ করতে সাহস না পায়।
ফকির আবদুর রাজ্জাক সম্পর্কে জানার জন্য যোগাযোগ করা হয় দিগনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী সঙ্গে। তিনি বলেন, আবদুর রাজ্জাক স্থানীয়ভাবে প্রতারক হিসেবে পরিচিত।
শরীয়তপুর জেলা বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি এড. মাসুদুর রহমান বলেন, এই ধরনের চিকিৎসা আইনি পরিপন্থী যারা এই ধরনের কাজের সাথে লিপ্ত আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। বর্তমান যুগে এই ধরনের ঝাড়ফুঁকের কোন ভিত্তি নেই।
সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক সফিকুল ইসলাম বলেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় সে অসুস্থ হয়েছেন। রুটির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে কী ধরনের বিষক্রিয়া ছিল।
নড়িয়া থানার ওসি মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ফকিরের দেওয়া রুটি পড়া খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে, এমন একটা তথ্য ৯৯৯ থেকে আমার কাছে আসে। তার পরে আমি তদন্তের জন্য থানা থেকে ফোর্স পাঠাই, তদন্তের সাপেক্ষে এবং কেউ থানায় অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব।’