
শরীয়তপুরে ইমরানের খামারে ১২০টি ষাড় উৎপাদন করা হয়েছে এবছর, কোরবানি উপলক্ষে ৭০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা বিক্রি হচ্ছে ষাড় গরু গুলো। খামারে গরু বিক্রর সাথে কোরবানির ব্যাবস্থাও রয়েছে খামারটিতে। খইল, ভূষি, খের-কুটা সহ স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়ায়ে উৎপাদন করা হয়েছে বলে, জানিয়েছেন খামার মালিক আলহাজ্জ্ব ইমরান বেপারী।
শরীয়তপুরের নড়কলিকাতা গ্রামের ইরা এগ্রো ফার্মে এই প্রথম ১’হাজার কেজি ওজনের অষ্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ২টি ষাড় উৎপাদন করা হয়েছে। এই ষাড় দু’টি কোরবানির জন্য উৎপাদন করেছেন বলে জানিয়েছেন ইরা এগ্রো ফার্মের মালিক মো: ইমরান বেপারী। ইমরান বেপারী সাবেক পুলিশের আইজিপি শহীদুল হকের আপন ভাতিজা। তিনি এ ষাড় দুটির এক একটির দাম হাকছেন ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। এই ষাড় দুটি দেখতে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভীড় পড়ে যায় ফার্মে। ষাড়দু’টির জন্য ০১৭৭ ৪০৩০ ৬১৩ ও ০১৮ ৩১৩ ১৭০৫০ নম্বরে কল করে খামারীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করলে সকল তথ্য জানা যাবে এবং প্রয়োজনে ক্রয় করতে পারবেন। ষাড় দু’টির বিস্তারিত তথ্য জানতে ফেইসবুক আইডি খোলা হয়েছে।
ইরা এগ্রো ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী ইমরান বেপারী জানান, ২০১৬ সালে তিনি এই খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখন তার খামারে ১২০টি ষাড়, ৪০টি গাভী ও ২৫টি বাছুর রয়েছে। এই বছর তিনি ২টি অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান ষাড়সহ ১২০টি ষাড় কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এক একটি ষাড়ের দৈঘ্য ১০ ফিট, উচ্চতা ৫ ফিট ও ওজন প্রায় ১ হাজার কেজি বা ২৫ মন। তিনি ষাড়টির নিম্নে ৫ লাখ টাকা মূল্য পেলে ছেড়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন। করোনা ও বন্যা দুর্যোগ না হলে তিনি ঢাকা ঐ গরু দুটি নিলে ৮-১০ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারতেন।
খামারের পরিচালক ইমরান বেপারী বলেন, আমি এবার কোরবানির জন্য ১২০টি গরু প্রস্তুত রেখেছি। এর সাথে ২টি অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের উৎপাদন করেছি। যার এক একটির ওজন ২৫ মণ। কিন্তু করোনার কারনে আশানুরোপ দাম পাব বলে মনে হচ্ছে না। গ্রাহক খামারে কোরবানির জন্য গরু নিতে তেমন চাপছে না। এজন্য ঐ ২টি গরুর দাম তিনি ৫লক্ষ টাকা হলে ছেড়ে দিব। তিনি বলেন, আমি এবার চালান দরে কোরবানির গরু ছেড়ে দিব। খামারে দেড় কোটি টাকা গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি। এ দেড় কোটি টাকা চালান আসলেই হবে।
এছাড়া তার খামারে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া এবং গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় প্রতিদিন টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যদি খামার করতে হয়, তাহলে তো আরো লোকসান গুণতে হবে তার। খামারি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে স্বল্প সুদে সরকারি প্রণোদনাসহ ঋণের দাবি করেন তিনি। এই খাতটি দেশের মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। সরকার আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন এমনটাই দাবি খামারি মো: ইমরান বেপারীর। তিনি আরও বলেন, সবুজ ঘাস ও খৈল-ভূষি আমাদের ফার্মের গাভী ও ষাড়ের প্রধান খাদ্য। আমরা পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খামার পরিচালনা করি। প্রাকৃতিক খাবার ছাড়া কোন কৃত্তিম খাবার আমাদের খামারে ব্যবহার করা হয় না।
দর্শনার্থী আনিছুর রহমান বলেন, একই এলাকার পাশের গ্রামে আমার বসবাস। ইমরান বেপারীর খামারে বেশকিছু উন্নত জাতের গাভী ও ষাড় গরু রয়েছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতে যে ষাড় দুটি রয়েছে সেগুলো আকারে অনেক বড়। আমার ৩৬ বছর বয়সে শরীয়তপুর ছাড়াও আশপাশের কোন জেলায় এত বড় ষাড় দেখি নাই। এই ষাড়টি যেমন লম্বা তেমনি উচ্চতা। আমি ষাড় দুটি দেখে অবাক হয়ে যাই। আমার মনে হয়ে ছে করোনা ও বন্যা দুর্যোগ না হলে ষাড় দুটি ৮-১০ লক্ষ টাকা বিক্রি যোগ্য।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুবোধ কুমার বলেন, শরীয়তপুর জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় কোরবানি ঈদের জন্য এবার ৭৮৬১ খামার প্রস্তুত করা হয়েছে। যাতে উৎপাদিত গরুর সংখ্যা ২৩,৮৩৭টি, ছাগলের সংখ্যা ১০৫৮৭টি ও ভেড়ার সংখ্যা ৬৭টি। এ নিয়ে এবারের কোরবানি ঈদের জন্য সর্বোমোট ৩২,৯০২টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।