Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

নড়িয়া স্কুল কর্তৃপক্ষের ভুলের এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি ছাত্রী

নড়িয়া স্কুল কর্তৃপক্ষের ভুলের এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি ছাত্রী
নড়িয়া স্কুল কর্তৃপক্ষের ভুলের এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি ছাত্রী

অভাব-অনটনের সংসারে নিজের কষ্ট হলেও মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন পূর্ণিতার মা মনিকা রাণী বাছার । আশা ছিল মেয়েটা পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু সে আশা গুঁড়েবালি হয়েছে পূর্ণিতার স্কুল কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি কান্দাপাড়া গ্রামের মৃত সন্তোজ বাছার ও মনিকা রাণী বাছারের মেয়ে পূর্ণিতা বাছার। পূর্ণিতা শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার “পঞ্চপল্লী গুরুরাম উচ্চ বিদ্যালয়”র শিক্ষার্থী। ফরম পূরণের ফি জমা দিলেও প্রবেশপত্র তৈরী হয়নি বলে পূর্ণিতা চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।

১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

ভূক্তভোগীর পরিবার ও স্কুল সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণিতা বাছারের বাবা মারা গিয়েছে ১২ বছর আগে। বাবার মৃত্যুর পরেও তার মা মনিকা বাছার অনেক কষ্ট করে পূর্ণিতা ও তার বড় বোন পূর্ণিমা বাছারকে পড়াশোনার জন্য পঞ্চপল্লী গুরুরাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিল। তারাও ঠিকভাবে পড়াশোনা করছিল। গত বছর বড় বোন পূর্ণিমা বাছারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও পারিবারিক কারণে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। বড় মেয়ে পূর্ণিমা এসএসসি পরীক্ষায় বসতে না পাড়ায় পরিবারের ইচ্ছে ছিল ছোট মেয়ে পূর্ণিতা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো একটি কলেজে ভর্তি হবে। নিয়ম অনুযায়ী যথা সময়ে পরীক্ষার ফরম পূরণ ফিও জমা দিয়েছিল সে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ ভুলক্রমে পূর্ণিতা বাছারের ফরম পূরণ না করে তার বড় বোন পূর্ণিমা বাছারের ফরম পূরণ করে ফেলেছে। এবছর এসএসসি পরীক্ষা শুরুর একদিন আগে (বুধবার) পূর্ণিতা বাছার স্কুলে প্রবেশপত্র আনতে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার বড় বোন পূর্ণিতা বাছারের প্রবেশপত্র দেয় তাকে। প্রবেশপত্র হাতের পাওয়ার পরদিনই পরীক্ষার তারিখ হওয়ায় পড়াশোনার চাপে পূর্ণিতা বাছার প্রবেশপত্রের সকল তথ্য খেয়াল করে দেখেনি। পরীক্ষায় অংশ নিতে পরদিন পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার পর কেন্দ্রের সচিব পূর্ণিতাকে অন্যজনের প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার অভিযোগে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। এরপর কাঁদতে কাঁদতে পূর্ণিতা বাছার বাড়িতে চলে যায়।

ভূক্তভোগী ওই পরিক্ষার্থী বলেন, আমার বাবা মারা গিয়েছে ১২ বছর আগে। মা অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছিলেন। পরীক্ষার ফিও জমা দিয়েছি। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে আমি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। আমার যে ক্ষতি হয়েছে, তার কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। স্যারদের বলার পর তারা বলেছে, আগামি বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে।

পূর্ণিতার মা মনিকা রাণী বাছার বলেন, অভাবের সংসারে মেয়েটা আমার অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন। এ-র আগে বড় মেয়ে পূর্ণিমার উপবৃত্তি আনতে গিয়েছিলাম স্কুলে। স্কুল কর্তৃপক্ষ তখন জানিয়েছিল পূর্ণিমার নামই নেই স্কুলে। এরপর পূর্ণিমা আর স্কুলে যায়নি। নাম যেহেতু নেই, সেহেতু আমরা পূর্ণিমার ফরম পূরণের টাকাও তখন জমা দেইনি। ছোট মেয়ে পূর্ণিতার ফরম পূরণের টাকা জমা দিয়েছিলাম। এখন প্রবেশপত্র এসেছে পূর্ণিমার। তখন তো বলেছিল, নামই নেই স্কুলে। এখন তাহলে পূর্ণিমার ফরম পূরণ হলো কীভাবে? স্যারদের ভুলের কারণেই আমার মেয়ে পূর্ণিতা পরীক্ষা দিতে পারল না। এই ঘটনা স্যারদের জানানোর পর, তারা আমার বাড়িতে এসে বলে গেছে সাংবাদিক বা কোথাও যেন বিষয়টি না জানাই। আমরা গরীব মানুষ, ওদের বাবা নেই। কাকেই বা জানাবো?

এবিষয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক গৌতম দাস দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, পূর্ণিমা ও পূর্ণিতা দুই বোন। জনের নাম কাছাকাছি হওয়ায় একটু ভুল হয়েছে। তাছাড়া একেবারে শেষ সময়ে আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। যদি দুই দিন সময়ও পেতাম, তাহলে শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে যেভাবে হোক, বিষয়টির সমাধান করতাম। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকরা মিলে পূর্ণিতার বিষয়টি নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামি এক বছর তার পড়াশোনার সকল খরচ স্কৃল কর্তৃপক্ষ বহন করবে, যাতে সে আগামি বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) শামসুন নাহার দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। প্রবেশপত্রের বিষয়টি সম্পূর্ণ স্কুল কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসের বিষয়। বিষয়টি যদি আগে জানতে পারতাম, তাহলে ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা গ্রহণে চেষ্টা করতে পারতাম। আমি এই বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি কি করা যায়।