
শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক দেশের ২১টি জেলার আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুট। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই মহাসড়কটি ছিনতাই ও ডাকাতদের দৌরাত্ম্যের কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাইওয়ে ও থানা পুলিশের নজরদারি কার্যত নেই, ফলে অপরাধীরা অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ১০ দিনের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে ছিনতাই ও ডাকাতির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। দুষ্কৃতকারীরা চালকদের মারধর করে টাকা, মোবাইল এবং পণ্য লুট করছে। এমনকি গাড়ির কাগজপত্র চুরি করতেও পিছপা হচ্ছে না।
গত ১৭ জানুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম থেকে যশোরগামী একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট ১১-২৯৮৬) শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের ইকরকান্দি এলাকায় ডাকাতদের কবলে পড়ে। ট্রাক চালক মামুনুর রশীদ জানান, “গাড়ি থামিয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী আমার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও নগদ ৩৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। চিৎকার করলে আমাকে মারধর করে এবং গাড়ির গ্লাস ভেঙে পালিয়ে যায়। থানায় গিয়ে ডাকাতির অভিযোগ করতে চাইলে পুলিশ চুরির মামলা নিতে বাধ্য করে।”
এর আগে ১২ জানুয়ারি মোল্লার হাট এলাকায় একই ধরনের দুটি ঘটনা ঘটে। সেখানে পণ্যবাহী ট্রাকের চালকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও টাকা লুট করা হয়। ভুক্তভোগীরা পুলিশের হয়রানির ভয়ে অভিযোগ করতে সাহস পাননি।
কাভার্ডভ্যান চালক রবিউল ইসলাম বলেন, “মোল্লার হাট এলাকায় মুখোশধারী কয়েকজন দুষ্কৃতকারী আমার গাড়ি থামিয়ে টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। এই ঘটনার পর থানায় অভিযোগ করতে যাইনি, কারণ পুলিশি হয়রানির ভয় ছিল।”
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়ে না। গভীর রাতে মহাসড়কটি দুষ্কৃতকারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়। অনেক সময় থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে চাইলে মামলা গ্রহণে পুলিশ গড়িমসি করে।
তবে ভেদরগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান বলেছেন, “মহাসড়কে চুরি ও ডাকাতি রোধে আমাদের টহল পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে।”
পণ্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মহাসড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় আমদানি-রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অপরাধীদের দৌরাত্ম্যে ট্রাক চালক ও ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে। তারা হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।