
প্রারম্ভিক জীবন: শরীয়তুল্লাহর জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলার চর শামাইল (বাহাদুরপুর) গ্রামের এক দরিদ্র তালুকদার পরিবারে। তিনি মক্কা শরীফে ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে গমন করেন, এবং ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে বাংলায় ফিরে আসেন। তিনি আরবি ভাষায় পন্ডিত ছিলেন।
সামাজিক অবদান: মক্কায় তিনি ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা শাহ ওয়ালিউল্লাহ এবং সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী’র চিন্তাধারা দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। মক্কায় থাকাকালীন সময়ে তিনি সংকল্পবদ্ধ হন যে, দেশে ফিরে তিনি সমাজ সংস্কারে মনোযোগী হবেন। তাই তিনি মক্কা থেকে দেশে ফিরে সমাজ সংস্কারে মনোনিবেশ করেন।উনিশ শতকের প্রথম দিকে এ অঞ্চলে তার নেতৃত্বে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা ফরায়েজি আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল দ্বিবিধ-
(ক) আত্মবিশ্বাস জাগ্রতকরণ : এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করা। কারণ সে সময়ের মুসলমান সমাজ প্রবর্তিত পীর পূজা, কবর পূজা, মনসা পূজা, শীতলা পূজা ইত্যাদি নানা ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড দ্বারা গোটা বাংলার মুসলমান সমাজকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। মুসলমানদের জীবন ব্যাবস্থা থেকে ধর্মীয় অনাচার ও কুসংস্কার গুলো বিদূরিত করে কুরআন ও সুন্নাহ মতে জীবন যাপনে উদ্ধুদ্ধ করা এবং ইসলামের “ফরজ” কাজ গুলো অবশ্যম্ভাবী পালন করার উদাত্ত আহ্বান জানান। আর এই “ফরজ” কথাটি থেকেই ফরায়েজি শব্দটি এসেছে।
(খ) মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিস্তার ও অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা : তিনিই প্রথম রাজনৈতিক দূরবীক্ষণ দ্বারা অনুভব করেছিলেন যে, ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজ শাসনের অবসান ছাড়া ভারতবর্ষের জনগণের মুক্তি অসম্ভব। আর এজন্য তিনি দরিদ্র কৃষক, তাতি শোষক শ্রেণীকে মহাজন, জমিদার নীলকর বণিকদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং আরবের ওয়াহাবী আন্দোলনের আদলে ফরায়েজি আন্দোলন শুরু করেন। নীলকর ও অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতেন। তার প্রবর্তিত ধর্মমত ছিল আধুনিক ও মানবতাবদী। মুসলিম ধর্মের উৎপীড়নমূলক নিয়ম রদ করে ভন্ড মোল্লা মৌলবীদের হাত থেকে তার শিষ্যদের রক্ষা করেন। একারনে রক্ষণশীল ধনী মুসলমানগনেরা তাকে ঢাকা থেকে বিতাড়িত করে। ফরিদপুর ও ঢাকা জেলার অসংখ্য কৃষক তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল। তার ছেলে দুদু মিয়াও একজন ঐতিহাসিক যোদ্ধা ও ফরায়েজি আন্দোলন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তিনি নীলকরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ব্রিটিশদের তাড়ানোতে ভূমিকা রেখেছিলেন।
সম্মাননা: শরিয়তউল্লাহর নামানুসারে শরীয়তপুর জেলার নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া তার নামে মাদারিপুরের শিবচরে আড়িয়াল খাঁ নদের উপরে নির্মিত সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে হাজী শরীয়তউল্লাহ সেতু যা ৪৫০ মিটার দীর্ঘ। ১০ মার্চ ১৯৯৩ সালে তার নামে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ডাকটিকিট বের করে।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | |||
৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ |
১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ |
১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ |
২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |