
‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’, ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’ স্কুল কলেজে পড়া কালীন সময়ে এই প্রবাদ গুলো খুব পড়েছি আবার অনেকের মুখেও শুনেছি। তখন এর অর্থ অতটা না বুঝলেও এই করোনার ভয়াবহতার মধ্যেও সরকার যখন দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে আগামীকাল থেকে সব কিছু খুলে দিচ্ছে লকঅন হচ্ছে বাংলাদেশ এখন কিছুটা হলেও এর মর্ম উপলব্ধি করতে পারছি। এখন আর করোনা থেকে বাঁচানোর জন্য কেউ আসবেনা। কয়দিন কে কাকে হেল্প করবে। আজীবন কেউ কাউকে সাহায্য করেনা। নিজের হাটুতে জোর না থাকলে অপরের জোর নিয়ে কয়দিন চলা যায়। তাই করোনা থেকে বাঁচতে হলে নিজের সুরক্ষা শক্তি নিজেকেই তৈরী করতে হবে। আর এই ভাবে প্রত্যেকে প্রত্যেকের সুরক্ষা শক্তি তৈরী করতে পারলেই তৈরী হবে সামাজিক প্রতিরক্ষা বেষ্টনী পরাস্ত হবে করোনা নামক পরাশক্তি।
এইজন্য খুব জরুরী না হলে বাসার বাইরে কেউ যাবেনা। যাদের পেশার স্বার্থে বাইরে যেতে হয় তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি ভাবে মেনে চলতে হবে। মুখে মাস্ক হাতে গ্লাভস সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। হেড ক্যাপ ব্যবহার করলে ভালো। সম্ভব হলে বারবার হাত স্যানিটাইজিং করে নেই বা সাবান দিয়ে কমপক্ষে 20 সেকেন্ড ভাল করে ধুয়ে নেই। যেখানে সেখানে হাঁচি কাশি না দেই কফ থুথু না ফেলি। মানুষের গায়ে গায়ে লেগে বসা বা দাঁড়ানো বন্ধ করি। অফিসেও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখি। সম্ভব হলে অধিকাংশ ফাইল পত্রের সফট কপি ব্যবহার করি। না হলে উপযুক্ত স্যানিটাইজিং করে নিরাপদ করে নেই। অফিশিয়াল সভাগুলো ইফেক্টিভ ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করে ভার্চুয়াল বা অন লাইন করে ভিডিও কনফারেন্সিং করলে ভালো হবে। সভা সমাবেশ করা থেকে বিরত থাকি। বাইরের দোকানে চা খাওয়া বন্ধ রাখি। সাধারন সিম্পল পোশাক পরিধান করি। নিয়মিত ধুয়ে ফেলি। ঘড়ি আংটি ব্যবহার না করলেই ভালো হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রেও যতদুর সম্ভব কম অর্নামেন্টস ব্যবহার করা যায়। হালকা জুতা সেন্ডেল ব্যবহার করি যথাযথভাবে পরিষ্কার রাখি। রাস্তাঘাটে হাঁটাচলার সময় ময়লা নোংরা দেখে চলি। করোনাকালীন সময়ে শহরের রাস্তাঘাট গাছপালাগুলো যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনোরম হয়ে উঠেছে সেগুলো বজায় রাখার জন্য যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলি। রাস্তাগুলো সিটি কর্পোরেশন প্রতিদিন পরিষ্কার করে রাস্তার ময়লা রাস্তার পাশে না রাখে সাথে সাথে তুলে নিন। ময়লার গাড়ি দিনে না চলে গভীর রাতে চালাতে হবে। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত মালামাল বিশেষ করে বালু সিমেন্ট রাস্তায় রাখা যাবে না। বাসাবাড়ি অফিস আদালতের মেঝে আঙ্গিনা বাথরুম নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। পাবলিক টয়লেটগুলো নিয়মিত পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। হকারদের জড়োসরো হয়ে না বসে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। রিক্সা সিএনজিতে আমাদের নিজেস্ব স্যানিটাইজিং ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। গণপরিবহনে দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। হোটেলে খাওয়ার ক্ষেত্রে ও দুরত্ব বজায় রেখে সাবধানে খেতে হবে। আপাতত না খেতে পারলেই ভালো। ধুমপানে বিরত থাকতে হবে। মানুষের ভীড় এড়িয়ে চলতে হবে। যানজট নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
বাজারের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। আপাতত বিদেশ ভ্রমন বন্ধ রাখতে হবে। সার্ভিস পয়েন্ট গুলো যেমন ব্যাংক কাউন্টারে গিয়ে দুরত্ব বজায় রেখে ধর্য্য ধরে সেবা গ্রহন করতে হবে। এরকম হাসপাতাল পাসপোর্ট অফিস বিমান বন্দর রেল ষ্টেশন বাস ষ্টেশন লঞ্চ ঘাটে ফেরীঘাট সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে দায়িত্বশীলতার পরিচয় রাখতে হবে। মসজিদ মন্দির গীর্জায় এবাদতের সময়ও মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। শিশু বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে যাবেনা। মার্কেটেতো প্রশ্নই আসেনা। স্কুল কলেজ খোলার আগে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের দূরত্বের গুরুত্ব অনুধাবন করাতে হবে আগে আর এই দায়িত্ব অবিভাবক ও শিক্ষকমন্ডলীকেই নিতে হবে। বাচ্চাদের স্কুল কলেজের গেইটে প্রবেশের সময় স্যানিটাইজিং করে নিতে হবে।
ক্লাশ রুমে প্রয়োজনীয় স্যানিটাইজিং এর ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাথরুমে করোনা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। ছুটির পরে নিয়ম মেনে বাচ্চা নিতে হবে অবিভাবকদের। স্কুল গেইটে অবিভাবক জমায়েত বন্ধ করতে হবে। নিজেস্ব পরিবহন ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হয়। যখন তখন বাইরের কেউ স্কুল গেইটের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন লাইন লার্নিং বা ডিসটেন্স লার্নিং চালু রাখতে পারলে ভালো হবে। খাওয়া দাওয়ায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। ফল মুল বেশী খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম চর্চা করতে হবে। বাসাবাড়ি অফিস আদালতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। মোদ্দাকথা যার যার সুরক্ষা তার তার করতে হবে আর এভাবে তৈরী করতে হবে সামাজিক প্রতিরক্ষা বেষ্টনী তাহলেই আমরা রক্ষা পাবো অদৃশ্যমান শক্তিশালী করোনা থেকে ইনশাআল্লাহ। নিজে ভালো থাকলে ভালো থাকবে পরিবার ভালো থাকবে দেশ।
লেখক: তালুকদার মোঃ ফারুক আহম্মেদ
ভাইস প্রেসিডেন্ট
মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড
হেড অফিস ঢাকা