
দরজায় কড়া নাড়ছে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার বাকি ২ মাস, এ সময় একজন পরীক্ষার্থী তাঁর অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পিত কার্যক্রম একজন শিক্ষার্থীর ভালো ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পরীক্ষার আগের এই ২টি মাস এতটাই গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন কিনা একজন পরীক্ষার্থী তাঁর মূল পরীক্ষার প্রস্তুতি যাচাইয়ের মূল সময় হিসেবে বেছে নিবে।
শিক্ষার্থীর করণীয়:
বর্তমান প্রতিযোগিতা মূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের প্রাপ্ত ফলাফল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত জিপিএ সাফল্যের একটি বড় অনুষঙ্গ। সুতরাং সকল শিক্ষার্থীকে প্রতিটি বিষয়ে মান সম্মত প্রস্তুতি নিয়ে ভালো ফলাফল করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যহত রাখতে হবে । এজন্য এ সময় যা যা করা উচিত ;
# বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা খুঁজে বের করা :
পরীক্ষা যত এগিয়ে আসে তত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। অনেক শিক্ষার্থী কি করবে, কি পড়বে, ঠিক করতে পারে না, ফলে তাঁর প্রস্তুতি পিছিয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে ২ মাস পূর্বে একজন শিক্ষার্থীর প্রধান কাজ হলো তাঁর ” Special Need ” খুঁজে বের করা। সে যে ১২টি বিষয়ের উপর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে তার প্রতিটি বিষয় নিয়ে আদ্যপান্ত পর্যালোচনা করা। স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষা,প্রাক- নির্বাচনী পরীক্ষা সহ ইতোপূর্বে একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী যে পরীক্ষাগুলো দিয়েছে তাঁর “Self Assessment “এর মাধ্যমে সে নিজেই ঠিক করে ফেলবে কোন কোন বিষয়ে তাঁর দুর্বলতা আছে, এরপর গুরুত্ব অনুযায়ী বিষয়গুলোকে তালিকাবদ্ধ করে রুটিনে সংযুক্ত করবে।
# দুর্বল ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো দৈনন্দিন রুটিন করে পড়াশুনা শুরু করা :
দুর্বল ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো নির্ধারণ করার পর শিক্ষার্থীকে নিজ উদ্যোগে সারা দিন রাতের ২৪ ঘন্টার ওপর একটা রুটিন তৈরি করতে হবে। রুটিনে প্রতি ৩/৪ দিন হারে একটি বিষয়ের রিভিশন শেষ করার সময় নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিদিন যদি শিক্ষার্থী ১৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করে, এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা নির্ধারিত বিষয়ে রিভিশন এর পড়া শেষ করবে এবং বাকি তিন ঘণ্টা সে তাঁর দৃষ্টিতে নিজের জন্য দুর্বল ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে প্রাকটিস অব্যাহত রাখবে।
ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে রুটিন অনুযায়ী এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী দুর্বলতা দূর করে একটি ভালো অবস্থানে নিজের প্রস্তুতিকে টেনে নিতে পারবে।
# বেশি বেশি MCQ প্রাকটিস করা :
এসএসসি পরীক্ষার ভালো ফলাফলের একটা প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে MCQ অংশে প্রাপ্ত নম্বর। মাত্র ৩০/২৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্খিত নম্বর পায় না, ফলে তার লিখিত পরীক্ষা অনেক ভালো হলেও কাঙ্খিত গ্রেড প্রাপ্তিতে সে পিছিয়ে পড়ে। MCQ অংশে ভালো ফলাফল করার সবচেয়ে কার্যকরি টেকনিক হলো বারবার মূল বইয়ের খুঁটিনাটি বিষয় চিহ্নিত করে পড়া,বেশি বেশি মডেল টেস্ট দেয়া, এক্ষেত্রে বাজারের প্রচলিত সহায়ক বই বা অনলাইনের বিভিন্ন মডেল প্রশ্ন ডাউনলোড করে পরীক্ষা দেওয়া যেতে পারে। পরীক্ষা অবশ্যই টাইমিং করে দিতে হবে, এর মাধ্যমে নিজের সময়ের ব্যালেন্স ও প্রস্তুতি দুইটাই বেশ ভালোভাবে রপ্ত করা যাবে।
যদি স্কুল থেকে আনুষ্ঠানিক কোন মডেল টেস্টের ব্যবস্থা করে সেখানে অবশ্যই অংশগ্রহণ করতে হবে।কারণ স্কুলের পরিবেশে শিক্ষকের সামনে পরীক্ষার হলে বসে পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা সকল অভিজ্ঞতার চেয়ে শ্রেয়।
# ইতিবাচক চিন্তা করা :
সকল পরীক্ষার্থীকে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করার পাশাপাশি নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করতে হবে,হতাশা কাটিয়ে উঠতে হবে, ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। ” আমি পারবো “এ ধরনের আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
# নিয়মিত খাওয়া,ঘুম ও নিজের প্রতি যত্নবান হতে হবে :
নিয়মিত খাবার খেতে হবে এবং ৬ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ডিভাইস সমূহ বিশেষ করে মোবাইল, কম্পিউটার অতি প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অপ্রয়োজনে সময় নষ্ট করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, যে শিক্ষার্থী পরীক্ষার পূর্বের সময় গুলো যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবে সেই সফল হবে।
অভিভাবকের করণীয় :
একজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবকের দায়িত্ব সব সময় নিজ সন্তানের প্রতি যত্নবান থাকা। তাঁর শারীরিক ও মানসিক দিকে খেয়াল রাখা। বাসা বাড়িতে তাকে পড়াশোনার ভালো পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। প্রস্তুতকৃত রুটিন মনিটরিং করা। প্রয়োজনীয় কোন বিষয় শিক্ষকের প্রয়োজন হলে স্বল্প সময় হলেও শিক্ষকের ব্যবস্থা করে তাঁর বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
অভিভাবকের অতি যত্নশীলতায় সন্তানের কাঙ্খিত ফলাফল অর্জিত হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করণীয় :
মূলত নির্বাচনী পরীক্ষার পর আমাদের স্কুল গুলো শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেয় নিজেদের বাড়িতে পড়াশুনা করার জন্য। তবে এখন অনেক স্কুল শিক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উচিৎ স্কুল শিক্ষকদের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি মনিটরিং টিম গঠন করতে পারে। এ টিম নিয়মিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সাথে কথা বলবে ও তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে, এছাড়া স্কুল থেকে প্রয়োজনে অতিরিক্ত ক্লাস ও মডেল টেস্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।
সর্বোপরি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আগামী এসএসসি ২০২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা একটা ভালো ফলাফল অর্জন করবে এটাই আমার বিশ্বাস।
লেখক: এম ফরিদ আল হোসাইন
অধ্যক্ষ, মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল এন্ড কলেজ, শরীয়তপুর।