
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন উত্তর চর জানপুর গ্রামের চরাঞ্চলে খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও জমি-সংক্রান্ত বিরোধে হামলা চালিয়ে চার গ্রামবাসীকে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে চিহ্নিত স্থানীয় কুচাইপট্টি ইউপি আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ইমন হোসেন খোকন বেপারীর সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে।
হামলার শিকার মৎস্যজীবী ও কৃষক আব্দুর রহিম বেপারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক, তিনি বর্তমানে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ বিষয়ে গোসাইরহাট থানায় মামলা দায়ের হলেও বাদীপক্ষকে সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। গোসাইরহাট থানার ওসি মোঃ মাকসুদ আলম জানান, অভিযুক্ত খোকন বেপারীর বিরুদ্ধে গোসাইরহাট থানায় ইতিমধ্যে ১২টি মামলা রয়েছে।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের উত্তর চর জানপুর চরাঞ্চলের চারপাশেই রয়েছে নদী। নদী দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় খোকন বেপারী একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে আলাদা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। এই চরের যেন রাজাই তিনি।
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে তিনি চরের সকল গ্রামবাসীকে তার অধীনস্থ করে রেখেছেন। সরকার পরিবর্তন হলে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও বর্তমানে কয়েকজন বিএনপি নেতাকে তার সঙ্গে যুক্ত করে পুনরায় প্রকাশ্যে এসেছেন। ভুক্তভোগী চরের অধিবাসীরা জানান, নদীর বুকে জেগে উঠা চর জানপুর চরের হাজার হাজার একর জমি সরকারের খাস জমি। সরকার থেকে বন্দোবস্ত এনে দেওয়ার নামে চরের কয়েকশত মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন খোকন বেপারী। নদীর মাঝে মাছ ধরতেও তিনি জেলেদের কাছে বিক্রি করেছেন নদীর নির্দিষ্ট সীমানা।
সম্প্রতি একই জমি একাধিক মানুষের কাছে বন্দোবস্ত দেওয়ার পাঁয়তারা ও পুনরায় টাকা উত্তোলনের বিষয় সামনে এলে এবং জমির সরকারি কাগজপত্র দিতে না পারলে গ্রামের অনেকেই তার কাছে টাকা ফেরত চান। ২২ মার্চ রাতে গ্রামের রহিম বেপারী ভুক্তভোগী কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে খোকন বেপারীর কাছে টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি চড়াও হয়ে তাদের ওপর হামলা চালান। রহিম বেপারীসহ অন্যদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়। বর্তমানে রহিম বেপারী ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর তার পরিবারের অন্যরা ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন অন্য এলাকায়।
রহিম বেপারীর ছোট ভাই শামীম বেপারী গোসাইরহাট থানায় ২৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন ২৩ মার্চ। এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। আসামিদের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বাদীর পরিবারকে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইমন হোসেন খোকন বেপারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে তার ছেলে ও পুত্রবধূ জানান, খোকন বেপারীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা মিথ্যা। খোকন বেপারী জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে কোনো চাঁদাবাজি করেননি। বরং তার দাদনের টাকা ফেরত চাইলে বিএনপির আব্দুর রহিম বেপারী লোকজন নিয়ে খোকন বেপারীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তাদের চরের বাড়িতে হামলা চালায়। তখন গ্রামের মানুষের সঙ্গে তাদের মারামারি হয়। এতে খোকন বেপারীর পক্ষেও চারজন আহত হয়েছেন, তারা বর্তমানে চাঁদপুরে চিকিৎসাধীন। তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ করার কারণে থানায় তাদের পক্ষে কোনো মামলা নেয়া হয়নি।
গোসাইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাকসুদ আলম বলেন, এ ব্যাপারে আহত আব্দুর রহিম বেপারীর ভাই শামীম বেপারী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। ঘটনাস্থল নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নৌ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানো হবে। অভিযুক্ত খোকন বেপারীর পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। তার বিরুদ্ধে থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। অভিযুক্তসহ সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন প্রায় ৫ হাজার হেক্টরের এই চর জানপুর চরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ স্থানীয় খোকন বেপারীসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর কাছে জিম্মি হয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই অনেকটা পরাধীন হয়ে বসবাস করে আসছেন।