
শরীয়তপুর জেলায় মসলা জাতীয় ফসল ধনিয়ার চাষ দীর্ঘদিন ধরে সুনাম কুড়িয়ে আসছে। বাজারে এর চাহিদা ও লাভজনক দামের কারণে গত কয়েক বছরে এখানকার কৃষকদের মধ্যে ধনিয়া চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ কম এবং ফলনের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকেরা এই ফসলের দিকে ঝুঁকছেন। ফলন বাড়াতে এবং চাষিদের সহায়তায় কৃষি বিভাগও এগিয়ে এসেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, শরীয়তপুরে রবি মৌসুমে ধনিয়া চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তুলনামূলক কম খরচে উৎপাদন এবং বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে এই ফসলটি কৃষকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে ধনিয়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ২৮০ হেক্টরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধনিয়া ফুলের সাদা আস্তরণে মাঠগুলো যেন এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। ফুলের মিষ্টি সুবাসে মৌমাছিরা ছুটে আসছে, আর কৃষকেরা ব্যস্ত ফসলের পরিচর্যায়। অনুকূল আবহাওয়ার সুবাদে এবার ফলন বেশ সন্তোষজনক। বাজারে ভালো দামের আশায় কৃষকদের মনে উৎসাহ। তবে তারা সরকারের কাছে সার, বীজ ও কীটনাশকের মতো সহায়তার প্রত্যাশা করছেন।
সদর উপজেলার রুদ্রকর গ্রামের কৃষক সদানন্দ দাঁড়িয়া এবার ২০ শতক জমিতে ধনিয়া চাষ করেছেন। গত বছর ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় এবার তিনি চাষের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। তিনি দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, “ধনিয়া চাষে লাভ দেখে এবার বেশি জমিতে চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করি ভালো আয় হবে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।”
অপর কৃষক মতি বেপারী দৈনিক রুদ্রবার্তাকে জানান, “বাজারে ধনিয়ার দাম মণপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। অন্য ফসলের তুলনায় এটি বেশি লাভজনক। তাই আমাদের এলাকায় ধনিয়া চাষ দিন দিন বাড়ছে।”
জয়দেব নামে আরেক চাষি বলেন, “ধনিয়ার বাজার চাহিদা বেশি, উৎপাদনও ভালো হয়। সরকার যদি সার ও কীটনাশকের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমাদের লাভ আরও বাড়বে।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, “ধনিয়া এখন শরীয়তপুরের একটি পরিচিতি। এই ফসল চাষে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা তাদের উৎসাহিত করতে পরামর্শ দিচ্ছি এবং বাজারে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে নজরদারি করছি।”
ধনিয়ার সৌরভে শরীয়তপুরের কৃষকেরা শুধু ফসলই ফলাচ্ছেন না, বুনছেন সমৃদ্ধির স্বপ্ন।