মঙ্গলবার, ৩০শে মে, ২০২৩ ইং, ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১০ই জিলক্বদ, ১৪৪৪ হিজরী
মঙ্গলবার, ৩০শে মে, ২০২৩ ইং

নিজের সন্তান অপহরনের নায়ক পিতা গ্রেফতার, পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং

নিজের সন্তান অপহরনের নায়ক পিতা গ্রেফতার, পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামান জানিয়েছেন আপন ছেলেকে তার বোনের বাসায় রেখে অপহরণ নাটক সাঁজানোর মুলহোতা বাবা মোক্তার হোসেনকে (৩৬)আটক করেছে পুলিশ। ৩০ জুন মঙ্গলবার জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে পুলিশ সুপার এ তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার বলেন, জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের আব্দুল বেপারী কান্দি গ্রামের সুলতান খানের ছেলে মোক্তার হোসেন খান নিজের ছেলে নাঈম (৯) কে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব দোলেশ্বর গ্রামে মোক্তারের খালাতো বোন লিপি আক্তারের বাসায় রেখে এ অপহরণ নাটক তৈরী করার চেষ্টা করে। জানা গেছে, ২৯ জুন সোমবার সকাল ৮টার দিকে মোক্তার কাজীর হাট হয়ে রূপবাবুর হাটে যায়। বেলা ১২টার দিকে রূপবাবুর হাটে একটি চায়ের দোকানে চা পান করার সময় তার ছেলে নাঈম প্রসাব করার কথা বলে বিপরীত দিকে রাস্তার ঢালে যায়। এসময় হঠাৎ করে চায়ের দোকানের সামনের রাস্তায় জাজিরার দিক হতে দুটি মাইক্রোবাস ও কাজীরহাট থেকে আশা একটি বাসের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এরপর যানজট সরে গেলে মোক্তারের ছেলেকে আর পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানায়।

অনেক খোঁজাখুঁজি করে ছেলেকে না পেয়ে কান্নাকাটি করে দুপুর আড়াইটার দিকে বাড়ী ফিরে এসে আত্মীয় স্বজনদের এই ঘটনা জানায়। ইতিমধ্যে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ০১৭৮৮৯৯০৯৬৬ এ অপহরণকারী যার মোবাইল নাম্বার ০১৭৮৩৫১৮২১৪ থেকে মুক্তিপন চেয়ে তাকে ফোন করে বলে জানায়। বিষয়টি তার ভায়রা ভাই একই উপজেলার বাইকসা গ্রামের আব্দুল আজিজ বেপারীর ছেলে রুবেল বেপারী জাজিরা থানায় এসে জানায়। বিষয়টি অবগত হয়ে পুলিশ সুপার দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ আল মামুন শিকদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তানভীর হায়দার শাওন, ডিআইও-২ সাইফুল আলম ও ডিবি পুলিশের একটি দল জাজিরা পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কথিত অপহৃত নাঈম এর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে অপহৃতের বাবাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পরিকল্পনাকারী মোক্তার হোসেন জানান, আমি অর্থনৈতিক ভাবে দারুন সমস্যায় আছি। সংসারের অভাব অনটন ও ধার-দেনা থাকায় সচ্ছল আত্মীয় স্বজন থেকে ছেলের মুক্তিপনের নামে কৌশলে টাকা পয়সা আদায়ের জন্য আমার বন্ধু সাব্বির (৩৫) এর সাথে যোগাযোগ করে ছেলেকে নিয়ে মাওয়া ঘাট পার করে খালাতো বোনের বাসায় কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ দোলেশ্বরে রেখে আসি। পরে পুলিশ এর মাধ্যমে ডিআইও-২ সাইফুল আলমের নেতৃত্বে জাজিরা থানা পুলিশের একটি দল ওই বাসা থেকে নাঈমকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।

পুলিশ সুপার বলেন, এটি একটি সাঁজানো ঘটনা। এই পরিকল্পিত মিথ্যা অপহরণ ও গুমের ঘটনার কারণে মোক্তার হোসেন যেমন টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল তেমনি ভাবে সমাজে আতংক ও ভয়ের সৃষ্টি হতো। পুলিশ ধারণা করছে এই ঘটনার পরে সামাজিক হানাহানি ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারতো। বিধায় পরিকল্পনাকারী মোক্তারের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে।

সংবাদ সম্মেলন পুলিশ সুপার এস.এম আশরাফুজ্জামান ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ আল মামুন শিকদার, জাজিরা থানা অফিসার ইনচার্জ আজহারুল ইসলাম সরকার, ডিআইও-১ আজহারুল ইসলাম সহ অভিযানে নেতৃত্বদানকারী পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।


error: Content is protected !!