Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

জাজিরায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ দুই সাংবাদিক

জাজিরায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ দুই সাংবাদিক
জাজিরায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ দুই সাংবাদিক

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় প্রভাবশালীরা জমি দখল করে ক্লাব ঘর করছে এমন সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে টেলিভিশন ও পত্রিকার দুই সংবাদিককে ধাওয়া দিয়ে একটি দোকান ঘরে দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিকেনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এরশাদ মাদবর ও তার লোকেরা। সোমবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বিকেনগর ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের বিকেনগর মুন্সীকান্দি গ্রামের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে জাজিরা থানার পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজুর রহমান, সামছুল ইসলামসহ পুলিশের একটি দল সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন।

এ ঘটনায় শরীয়তপুর প্রেসক্লাব, শরীয়তপুর ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিেেয়শন, শরীয়তপুর অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনসহ জেলার সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেছেন তারা।

স্থানীয় ও অবরুদ্ধ সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানা যায়, বিকেনগর মুন্সীকান্দি গ্রামের ছলেমান মাদবর (৭৫) ও তার চাচাতো ভাই সোবাহান মাদবরের (৬০) সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবদ সাড়ে ১০ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। গত ১৮ অক্টোবর সেই জমি দখল করে ক্লাব ঘর করবে বলে জোর পূর্বক গাছ কেটে মাটি ভরাট করে সোবাহান মাদবর ও তার লোকেরা। পরে ছলেমান মাদবর প্রতিবাদ করলে দু’পক্ষের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনায় ছলেমান বাদি হয়ে জাজিরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে স্থানীয় সালিশরা দুই পক্ষকে ডেকে ২৩ অক্টোবর মিমাংসার জন্য বসার কথা বললেও পুনরায় বসা হয়নি। এ বিরোধের যের ধরে রোববার (২৫ অক্টোবর) রাতে সোবাহান মাদবর তার ছেলে নাছির মাদবর, বিকেনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এরশাদ মাদবর ও তাদের লোকেরা ছলেমান মাদবর ও তার লোকজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় বলে জানায় ছলেমান মাদবর। এ বিষয় নিয়ে সোমবার (২৬ অক্টোবর) সকালে হামলা ও জমি দখল করছে এমন সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক বর্তমান পত্রিকার শরীয়তপুর প্রতিনিধি খোরশেদ আলম বাবুল ও দীপ্ত টেলিভিশনের শরীয়তপুর প্রতিনিধি রাজিব হোসেন রাজনকে বিকেনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এরশাদ মাদবরের নেতৃত্বে ধাওয়া দিয়ে স্থানীয় একটি দোকান ঘরে (সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত) দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।

অবরুদ্ধর সময় সোবাহান মাদবরের লোকেরা ছলেমান মাদবরের লোকদের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। আহতরা হলেন ছলেমান মাদবরের পক্ষের ইউসুফ আলী মাদবর (৬৫), আবু বকর মাদবর (৩৫), এইচএমএ কাইয়ূম মাদবর (৪৬), ছলেমান মাদবর (৭৫), আইয়ূব আলী মাদবর (৫৫), হাবিবুর রহমান আব্বাসী মাদবর (২০), আতিব মাদবর (১৪), লাকু মাদবর (৩৫) ও অপর পক্ষের নাজমা বেগম (৪২), লাভলি আক্তার (৩০), নাসির মাদবর (৪০), ছালাম মাদবর (৪৪), রিমা (২৫), সোবাহান মাদবর (৬০)। আহতদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গুরুতর আহত অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক ইউসুফ আলী মাদবর (৬৫) ও আবু বকর মাদবরকে (৩৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করে। হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোবাহান মাদবরের নাতি সালমুন হাওলদাারকে (১৮) আটক করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের কাছ থেকে সালমুনকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।

সাংবাদিক খোরশেদ আলম বাবুল ও রাজিব হোসেন রাজন বলেন, জাজিরা উপজেলার বিকেনগর মুন্সীকান্দি এলাকায় প্রভাবশালীরা জমি দখল করে ক্লাব ঘর করবে এমন সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বিকেনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এরশাদ মাদবরের নেতৃত্বে সোবাহান মাদবর, নাছির মাদবর, জলিল, উজ্জল, চান মিয়া, সালমুন হাওলাদার, লাভলি, নাজমা, রিমাসহ ২০/২৫ জন দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে আমাদের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে আমাদের মোবাইল, ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয় আমাদের ধাওয়া করে, পরে আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ী ছালাম বেপারীর টেইলার্স দোকান ঘরে আশ্রয় নেই। পরে তারা আমাদেরকে সেখানে দোকানের ঝাপ আটকে দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করছি।

ছলেমান মাদবর বলেন, আমরা পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে ৬০ বছর যাবত ওই জমির ভোগ দখলে আছি। এই সম্পত্তি বাজারের নামে পেরিফেরি হচ্ছিল। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে রায় পেয়েছি। সোবাহান মাদবর ও তার লোকজন ক্লাবঘর নির্মাণ করার জন্য জোর পূর্বক গাছ কেটে এবং মাটি ফেলে সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করে। বাঁধা দিলে সোবাহান মাদবরের লোকজন আমাদের ওপর ও আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর দফায় দফায় হামলা-ভাংচুর চালায়। আজ সোমবার সকালে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে আসলে তাদের উপর সোবাহান মাদবরের লোকজন হামলা করে। আমরা এর সঠিক বিচার দাবি করছি।

সোবাহান মাদবরের ছেলে বিকেনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এরশাদ মাদবর বলেন, আমাদের জমিতে ঘর তোলার জন্য মাটি ফেলেছি। কিন্তু ছলেমান সেই জমি নিজেদের দাবি করছে। তারা আমাদের ওপর হামলা করে, বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে। সাংবাদিকদের আমরা অবরুদ্ধ করেনি।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম সরকার পিপিএম বলেন, সংঘর্ষ ও সাংবাদিকরে অবরুদ্ধের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে এবং তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।