Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

শরীয়তপুর প্রবাসীর ৮ মাস পর লাশ দেশে, গ্রামের বাড়িতে দাফন

শরীয়তপুর প্রবাসীর ৮ মাস পর লাশ দেশে, গ্রামের বাড়িতে দাফন
নিহত রাজীব কাজী (বায়ে) এবং খুনি শাকিল মুন্সী (ডানে) । ছবি- দৈনিক রুদ্রবার্তা

নিহতের প্রায় ৮ মাস পর মালেশিয়া থেকে নিজ জন্মভূমিতে পৌঁছালো শরীয়তপুরের রাজীব কাজীর লাশ। চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে। স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি।

মঙ্গলবার ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১০ মিনিটে মালেশিয়া থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে লাশের কফিন নিয়ে বিমান পৌঁছায়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ৪টার সময় স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ সময় প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় নিহতের স্বজনের হাতে। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে আসা হয় নিহত রাজীব কাজীর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কাজীকান্দী গ্রামে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির। বাদ যোহর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি মালেশিয়ার পেনাং স্টেটে একটি কারখানায় ভাগিনার হাতে খুন হন তার আপন ছোট মামা প্রবাসী শ্রমিক মোহাম্মদ রাজীব কাজী। মালেশিয়া পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে নিহতের ভাগিনা শাকিল মুন্সী।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কাজী কান্দি গ্রামের মৃত আব্দুল গনি কাজীর ছোট ছেলে রাজীব কাজী প্রায় ৪ বছর আগে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় মালেশিয়ায় পাড়ি জমান। দেশটির পেনাং শহরের পার্শ্ববর্তী জুরু সিম্পাং আম্পাতের জেরেরিনিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের পাশে অবস্থিত একটি কারখানায় কাজ করতো সে। রাজীবের সাথেই কাজ করতেন তারই আপন বড় বোনের ছেলে শাকিল মুন্সী। তারা দুজনে ঐ কারখানার একটি রুমে অনেকদিন ধরে একসাথেই থাকতেন।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি কারখানার ড্রেনে সিমেন্টের ঢাকনা দিয়ে আটকানো অবস্থায় বাংলাদেশি নাগরিক মোহাম্মদ রাজীব কাজীর (২৯) অর্ধ গলিত মৃহদেহটি উদ্ধার করে মালেশিয়ার স্থানীয় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোনের ছেলে শাকিল মুন্সি (২১) কে সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দেন তিনি। তবে ঠিক কি কারণে তিনি তার আপন মামাকে হত্যা করেছেন ৩০২ ধারায় তার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে মালেশিয়ার পুলিশ। পুলিশ জানায়, নিহত বাংলাদেশি একটি ইউনিফর্ম তৈরি করার কারখানায় কাজ করা অবস্থায় গত ১৫ জানুয়ারি নিখোঁজ হয়। তবে নিখোঁজের বিষয়ে কোন পুলিশি রিপোর্ট করা হয়নি।

প্রবাসীর দিগন্ত সূত্রে জানা গেছে, ৩৮ বছর বয়সী ঐ কারখানার বিক্রয় ব্যবস্থাপক জানান, কারখানার ড্রেনে গন্ধ ও পোকাযুক্ত তার কারখানার শ্রমিকের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। তারপর পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ছুরি, লোহার হাতুরি ও রক্তমাখা চিহ্নযুক্ত একটি লোহার রড উদ্ধার করেছে।

এদিকে, এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছেন নিহতের স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তারা শাকিল মুন্সীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
অন্যদিকে, শাকিলের মা মর্জিনা বেগম বলেছেন, আমার ছেলে মালেশিয়ার পুলিশের মাইর সহ্য করতে না পেরে নিজে খুন করছে বলেছে। কিন্তু আসলে ও খুন করে নাই।