Tuesday 1st July 2025
Tuesday 1st July 2025

মুন্সীগঞ্জের তিন ভাই জাপানের তিন মসজিদের ইমাম

মুন্সীগঞ্জের তিন ভাই জাপানের তিন মসজিদের ইমাম

‘রমজান সেই মাস, যে মাসে কোরআন নাযিল করা হয়েছে; যা সমগ্র মানব জাতির জন্য হেদায়াত, সুস্পষ্ট পথ-নির্দেশ এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। তোমাদের মধ্যে যেই এ মাসের সাক্ষাৎ পাবে, সে যেন রোজা রাখে।’ আল বাকারা: ১৮৫
আল্লাহ্ পাকের বিধান পালনের মাধ্যমে মানুষ বড় হয়। তার মর্যাদা বেড়ে যায়। কোরআনী জিন্দেগী গঠন করলে আল্লাহ্ পাক তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। হযরত ওমর (রাযিঃ) এক সময় ছিলেন মুশরিকদের নেতা। শক্তিশালী ওমর ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে কোরআনী জীবন গঠনের মাধ্যমে হয়ে গেলেন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) প্রিয়জন। হলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা।
আলোকিত সকাল পত্রিকার পাঠকমহলের জন্য আজ থাকছে কয়জন কোরআন প্রেমি প্রবাসীর কথা। যারা দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধির পাশাপাশি বয়ে আনছেন দেশের জন্য বিরল সম্মান।
মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার চাপ গ্রামের মরহুম ক্বারী বেলাল হোসাইন (রহঃ) সাহেবের দুই ছেলে এবং মেয়ে জামাই জাপানের ভিন্ন ভিন্ন তিনটি মসজিদে নামাজ পড়ান।
মাওঃশরাফাতুল্লাহ নদভী,
ঢাকা জামিআ রাহমানিয়া মাদরাসা হতে দাওরায়ে হাদিস মাস্টার্স শেষ করেন ১৯৯৬ সালে, তার পর উচ্চতর পড়াশুনার জন্য ভারতের লক্ষনো নদওয়াতুল উলামা গমন করে তিন বছর আল্লামা আবুল হাসান আলি নদভী রহঃ নিকট আরবী সাহিত্য ও আলামিয়াত ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে দারুল এহসান ইউনিভার্সিটি হতে অনার্স ও মাস্টার্স করেন প্রথম বিভাগে, তার পরে বাংলাদেশ হতে দা’য়ী হিসাবে প্রথম স্থান অর্জন করে মিশরের জামিয়া আজহারে গমন করেন সেখান থেকে হায়ার ডিপ্লোমা করেন দাওয়াত ও আরবী ভাষার উপর, ১৯৯৯সাল হতে মাদরাসাতুল হুদা ঢাকার শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
তার পরে উত্তরা ১২ নং সেক্টরে মানারুশ শারক্ব নামে একটি আধুনিক মডেল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর যাবত একটানা দুবাই সংস্থার প্রজেক্টের কাজ করেন তার হাতে বাংলাদেশে প্রায় ৬০ মসজিদ ও ৫ হাজার পানীর টিউব ওয়েল ও ৩০০ উজু খানা নির্মিত হয়। বর্তমানে জাপানে বাংলাদেশ হতে স্কলারস হিসাবে জাপানের টকিও ওসাকা সাইতামা, গামো এলাকাতে মসজিদের ইমাম হিসেবে কর্মরত আছেন। মাওলানা শরাফাত উল্লাহ্ নদভী বিশ্বের প্রায় ২৫ টি দেশ ভ্রমন করেন এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশগ্রহন করেন। তুরস্কের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পবিত্র কা’বার গিলাফ হাদিয়া পান তিনি।
হাফেজ মাওলানা আরাফাতুল্লাহ
১৯৯৪ইং সনে জামিআ আশরাফিয়া মাহমুদিয়া সেরাজাবাদ মাদরাসা, টংগিবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ থেকে কোরআনের হাফেজ হন। কওমী মাদরাসার সর্বোচ্চস্থর দাওরায়ে হাদীস পাস করেন জামিআতুস সাহাবা, উত্তরা থেকে। ইসলামী উচ্চতর ইনিষ্টিটিউট কুয়েত সংস্থার অধিনে উত্তরা থেকে আরবী সাহিত্য হায়ার ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করেন। ফাজিল অনার্স করেন কুষ্টিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে। তরুন এই আলেম কর্ম জীবন শুরু করেন আল মুমিনাত বালিকা মাদারাসা টংগিবাড়ী মুন্সীগঞ্জ এর প্রিন্সিপাল হিসেবে। সূদুর জাপান থেকেও এই মাদরাসাটি পরিচালনা করছেন তিনি।
গত দুই বছর যাবত জাপানের মিসাতু সাইতামা জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব হিসেবে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে ইন্টারভিউর মাধ্যমে উত্তীর্ন হন। এবং জাপান ব্যবসায়ী কমিটির আমন্ত্রনে জাপানের ভিসা পেয়ে ওখানে যান । তরুন এই আলেমেদ্বীন হাফেজ শরাফত উল্লাহ্ জানান এখানে সবাই হাফেজ-আলেমদেরকে সম্মান করেন। অমুসলিমরাও সম্মান করেন। জাপান একটি সাজানো-গোঁছানো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন দেশ। তাঁর স্বপ্ন বাংলাদেশের জনগনও সচেতন হলে এমন একটি পরিচ্ছন্ন দেশ হবে। তিনি এখানে চারটি ভাষায় দাওয়াতি কাজ করেন। সবচেয়ে খুশির বিষয় হল দুইজন অমুসলিমকে তিনি কালেমা পড়িয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করান। জাপানের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাদল চাকলাদার সাহেব সহ ওনাকে যারা দাওয়াতি কাজে সহযোগীতা করেন তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হাফেজ মাওলানা শরাফত উল্লাহ্ ও আরাফাত উল্লাহ্ সাহেবের ভগ্নিপতি হাফেজ মাওলানা মুফতি হাবিব আহমাদ খান ইকবাল। একই জেলার টঙ্গিবাড়ি উপজেলার ঘাশিপুকুর গ্রামের মরহুম হাবিবুর রহমান খান সাহেবের ছেলে।
যাত্রাবাড়ি জামিয়া মাদানিয়া বড় মাদরাসা হতে হিফজ সমাপন করেন ২০১০ সালে দাওরা মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১২ সালে ইফতা সম্পন্ন করেন, তার পরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাতুল রুহামার মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন। সুন্দর ও আকর্ষনীয় কোরআন তেলাওয়াতের অধিকারী মাওলানা হাবিব খান, ২০১৩ সালে তারাবীর নামাজ পড়ানোর জন্য জাপান গমন করেন। তার পর থেকে স্থায়ীভাবে ইমাম ও খতিব হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। বর্তমানে টোকিও কামাতা মসজিদে ইমাম খতিব হিসাবে, আছেন এবং জাপানের অনেক দাওয়াতী কাজে জরীত রয়েছেন। তিনি সকলের দোয়া প্রার্থী।