বৃহস্পতিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
বৃহস্পতিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

চাঁদা না পেয়ে ওসির মেজাজ গরম : মাদারীপুরে হোটেল মালিককে মারধর

চাঁদা না পেয়ে ওসির মেজাজ গরম : মাদারীপুরে হোটেল মালিককে মারধর

মাদারীপুর সদর থানার ওসি সওগাতুল আলম একটি আবাসিক হোটেল মালিককে থানায় নিজ কক্ষে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার হোটেল মালিক সিরাজ মুন্সী গত বৃহস্পতিবার রাতে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার দাবি, মাসিক পনেরো হাজার টাকা চাঁদা দিতে না চাওয়ায় নির্যাতনের পাশাপাশি একটি সাজানো মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। তবে ওসি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সিরাজ মুন্সী মাদারীপুর শহরের সুমন আবাসিক হোটেলের মালিক। তিনি জানান, গত সোমবার রাতে তার হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতে আসেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার শ্যালিকা ও দুলাভাই। ঘটনাটি জেনে রাতেই হোটেল তল্লাশিতে আসেন মাদারীপুর পুলিশের ডিএসবি শাখার সদস্য শহিদুল ইসলাম। এ সময় তিনি দু’জনের কথায় অমিল খুঁজে পান। একপর্যায়ে তারা নিজেদের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। পরে শহিদুল ইসলাম বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য ওই ব্যক্তিকে ৩০ হাজার টাকা বিকাশে আনতে বলেন। এ সময় সিরাজ মুন্সীকে টাকার বিষয়টি কাউকে না জানাতে বলেন এবং তাকে ওই টাকা বিকাশের দোকান থেকে আনতে পাঠান ওই পুলিশ সদস্য। এদিকে ভোরে সিরাজ মুন্সী বিকাশের দোকান থেকে টাকা নিয়ে ফেরার সময় সদর থানা পুলিশ তাকে আটক করে।
সিরাজ মুন্সী সাংবাদিকদের বলেন, পরের দিন মঙ্গলবার সকালে সদর থানার ওসি সওগাতুল আলম আমাকে তার নিজ কক্ষে ডেকে নেন। এ সময় তিনি মাসিক ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি টাকা দিতে না চাইলে ওসি আমাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় দিতে থাকেন। ওসির মারধরে আমার চোখে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এরপর ওসি হোটেলে ওঠা ওই ব্যক্তিকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়ে আদালতে পাঠান। এরপর আদালত আমাকে বৃহস্পতিবার দুপুরে জামিন দেন। পরে চোখের আঘাত গুরুতর হওয়ায় রাতে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। তিনি আরও বলেন, গত ১৭ জুলাই ওসি মাদারীপুর সদর থানায় যোগ দেন। এরপর দু’বার আমাকে তার রুমে ডেকে মাসিক পনেরো হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি তাকে চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করেছি। তিনি তখন থেকেই আমার ওপরে খেপে আছেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও উপযুক্ত বিচার চাই।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মাহবুব আবির জানান, চোখের আঘাত বেশি হওয়ায় রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তিনি এখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অধিকতর চিকিৎসার জন্য অন্যত্র যেতে পারেন। তার চোখ ও মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সিরাজ মুন্সীর বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে হোটেলে ওঠা সেই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। থানার একজন অভিযোগে লিখেছে, আমি টিপ সই দিয়েছি। আমি মামলা করতে রাজি নই। এর আগে হোটেলে একজন পুলিশ পরিচয়ে আমাদের কাছে টাকা দাবি করেছে।’
নির্যাতনের বিষয়ে সদর থানার ওসি সওগাতুল আলম বলেন, আমার সঙ্গে তার (সিরাজ মুন্সী) দেখাই হয়নি। তাকে শারীরিক নির্যাতনের প্রশ্নই ওঠে না। আমার বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি থানায় মামলা করেছেন।
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার বলেন, নির্যাতনের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি ওসি নির্যাতন করে থাকেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সোমবার রাতে হোটেলের ঘটনার পর ডিএসবি শাখা থেকে প্রত্যাহার করে শহিদুল ইসলামকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে মোবাইলে একাধিকবার কল করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।


error: Content is protected !!